সার্ভেইলেন্স রোবট বানানোর গল্প!
লেভেল ৩, টার্ম ১ এর পাঠ্যসূচীর অংশ হিসেবে আমরা স্যারদের কাছে রিমোট কন্ট্রোল সার্ভেইল্যান্স রোবট বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করি। প্রজেক্টের উদ্দেশ্য ছিল একটি রিমোট কন্ট্রোল গাড়ির মতো দেখতে রোবট তৈরি করা, যেটা তার আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ সরাসরি আমাদের মোবাইল/ল্যাপটপের স্ক্রিনে পাঠাবে। স্যাররা রাজি হলে আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিই। প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল DTMF এর মাধ্যমে, মোবাইলের সাহায্যে ছবি পাঠানোর কাজটা করা। পরে দেখলাম গেমপ্যাড দিয়ে যদি আমরা গাড়ি+ক্যামেরার মুভমেন্ট কন্ট্রোল করতে পারি, তাহলে সেটা আরও কার্যকরী হয়!
source
কাজটা করতে যেয়ে আমাদের সবচেয়ে সমস্যা হয় যেটা, আমরা কেউই আরডুইনো/কোড সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতাম না! এত অল্প সময়ে এগুলা সম্পর্কে মোটামুটি জানা, তারপর কাজটা করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথম ৭-৮ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা গাড়ির বডি+সার্কিট ডিজাইন রেডি করি। আমাদের গাড়িতে আমরা ৪ টি চাকা (৪টি মটর ঘুরিয়েছি ১টি L293N মটর ড্রাইভার ইউজ করে), আর গেমপ্যাড ব্যবহারের জন্য Arduino Mega ADK ব্যবহার করেছি। পিসিবি নিয়ে বিশেষ কিছু জানা না থাকায় ব্রেড বোর্ড দিয়েই সার্কিটের কাজগুলো করেছিলাম।
এরপর দরকার পড়ে গেমপ্যাড ক্যালিব্রেশনের। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ক্যালিব্রেশনের জন্য একটি কোড পাই, তারপর গেমপ্যাডের বিভিন্ন বাটনের মুভমেন্টের ভ্যালুগুলো নিয়ে মোটামোটি একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলি। এরপর শুরু করলাম ক্যামেরা সেটাপের কাজ। আমরা যেরকম ক্যামেরা চাচ্ছিলাম (মোটামুটি ছোট সাইজের এবং ওয়াইফাই আছে এমন), সেরকম খুঁজে পাচ্ছিলাম না প্রথমে। গোপ্রো/আইপি ক্যামেরা লাগাতে পারতাম, কিন্তু খরচ/ওজন বেশি ইত্যাদি আনুষঙ্গিক জিনিস মাথায় রেখে এগুলা ব্যবহার করিনি। ১৩তম সপ্তাহের দিকে এসে আমরা ছোট সাইজের একটা ক্যামেরা খুঁজে পাই, যেটা ছিল নাইট ভিশন এনাবল্ড। ক্যামেরার সাইজ ছোট হওয়াতে আমরা চিন্তা করি সারভো মটর দিয়ে ক্যামেরার মুভমেন্ট করাই, যেন ৩৬০ ডিগ্রী মুভ করাতে পারি আমরা। গাড়ির একেবারে সামনের দিকে সারভো বসাই, সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে দেই এবং গেইমপ্যাড দিয়ে আমরা সেটার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করি।
কাজটি করতে যেয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়েছে, শেষের দিকে এসে ২ দিনের মধ্যে ২ বার Mega ADK পুড়ে গিয়েছিল। ৩য় বার তাই Mega ADK কিনে টেস্ট রান করিয়েছি একদম প্রজেক্ট শো এর সময় এবং সফলভাবে আমাদের গাড়ি রান করেছিল।
ক্যামেরার কাজ চালানোর জন্য আমাদের একটি ওয়াইফাই জোনে থাকতে হবে প্রথমত, জাস্ট ক্যামেরায় উল্লিখিত ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাপ-এ লগিন করার জন্য। এরপর ফুটেজ রিসিভের কাজটা করা হবে ক্যামেরার ওয়াইফই হটস্পট দিয়েই।
আমাদের প্রোজেক্ট প্রধানত বিভিন্ন সার্ভেইলেন্স কাজে (যেমন, বাসার এক রুম থেকে আরেক রুমের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা, মানুষ যেতে পারেনা এমন জায়গা যেমন কোন পাইপ/গুহা পর্যবেক্ষণ করা, গাড়ির নিচে কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটা চেক করা ইত্যাদি)।