বইমেলা থেকে অগ্রজকে বইসহ টিএসসি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যায় আমান। নজরুলের মাজার সংলগ্ন রাস্তায় ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। দু'জনের হাতেই বইয়ের ব্যাগ। অগ্রজের কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে তার ব্যাগটাও নিতে চায়। অগ্রজ দেন না। নির্বিকার হেঁটে চলেন।
সোহরাওয়ার্দীর বের হবার গেট দিয়ে বেরিয়ে পিচের পথ ধরে টিএসসি অভিমুখী যাত্রা। অনেক মানুষ। হাঁটছে, দাঁড়িয়ে গল্প করছে, ফুটপাতে বসে জুটিরা খুনসুটিতে ব্যস্ত। অলস প্রহর কাটছে বেশ। ফাগুনের মাতাল হাওয়ায় রয়ে যায় বুঝি একটু রেশ!
দুই রাস্তার মাঝের আইল্যান্ডে এক জোড়া ছেলেমেয়ে বড্ড ঘনিষ্ঠভাবে বসে আছে। কাছাকাছি। পাশাপাশি।
মনের না শরীরের?
লাস্যময়ী মুখে চমৎকার হাসি ধরে রেখেছে। যুবকটির কাধের কাছে যুবতীর অবাধ্য চুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ছেলেটির কি কোনও অনুভূতি হয়?
হাঁটার তালে তালে দেখে ওদের সেল্ফি তোলা। মেয়েটির চোখে আমানের চোখ পড়তেই ওর হাসি মুছে যায়। মুহুর্তে কঠোর হয়ে ওঠে লাস্যময়ীর কমনীয় মুখ। এতটাই দ্রুত এই ভাবের পরিবর্তনে অবাক হয় আমান। গতি একটু শ্লথ হয়। অগ্রজ একটুখানি এগিয়ে যান। হাঁটার ছন্দপতনে তিনি থেমে যান। পিছু ফিরে অনুজের দিকে তাকান নিরবে।
- কি হলো?
- কিছু না ভাই।
দুই ভাই গন্তব্যের দিকে আগায়। আমান ভাবে, নির্দোষ তাকানোয় কি দেখলো মেয়েটি যে এভাবে রেগে গেলো? মুহুর্তে ওর চোখ থেকে হাসি মুছে যেতে দেখেছে। রুপসী মেয়েটি এত দ্রুত রুপ পরিবর্তন করে ফেললো!
ঠিক পারুর মতো। ওর চোখ থেকেও মুহুর্তে হাসি মুছে যেত.. কোনো এক সময়। পারুর চোখের হাসিই পারুর কান্না ছিল। সে বুঝতো।
কিন্তু পারু আমানের চোখের ভাষা পড়তে জেনেও কেন বুঝতে চাইলো না?
আজ কারো চোখ থেকে মুহুর্তে হাসি মুছে গেলে আমানের বড্ড পারুর কথা মনে পড়ে!