সম্ভবতঃ ২০০৫ সালে এনএসইউ তে থাকতে বায়েজিদ স্যার মারা গেলেন। ডিভোর্সড ছিলেন, একমাত্র মেয়ে নিয়ে পান্থপথের একটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। ক্যান্সার ছিল। অনেক দৃঢ়চেতা হওয়া সত্বেও, আল্লাহ যতটুকু হায়াত রেখেছিলেন, ততটুকুই পেয়েছিলেন, পত্রিকার ভাষায় হয়তো অকালমৃত্যু হয়েছিল। স্যার খুবই পপুলার ছিলেন। এমবিএ-র নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তিনি সবাইকে পারফেকশনিস্ট হবার জন্য জোর দিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর একটা উদ্ধৃতি দিয়ে।
If a man is called to be a street sweeper, he should sweep streets even as a Michaelangelo painted, or Beethoven composed music or Shakespeare wrote poetry. He should sweep streets so well that all the hosts of heaven and earth will pause to say, 'Here lived a great street sweeper who did his job well
এবং এরপর বলেছিলেন:
"Never, never, never give up".
স্যারের মৃতদেহ স্ট্রেচারে করে কনকর্ডের তৈরি বিল্ডিং এর লিফটে ঢুকানো যাচ্ছিল না। জুনায়েদ কবির স্যার বললেন ভার্টিক্যাল ভাবে লিফটে নীচে নিয়ে আসতে। আমাদের সবার বিরোধিতায় সেটা করা হয়নি, সিঁড়ি দিয়ে প্রায় ১০ তলা থেকে নীচে নামাতে হয়েছিল। সিঁড়িতে নামানোর সময় ভূমির সাথে সমান্তরাল রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম, বেশ কষ্টকর এক্সারসাইজ। বনানী কবরস্তানে দাফন করা হলো। আন্ডারগ্র্যাড এর একটা ছেলে স্যারের এতই ভক্ত ছিল যে আমারা ফেরার পরও সে একাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাটিগুলো দিয়ে কবরকে সাজানোর চেষ্টা করছিল, অশ্রুসজল চোখে।
যাই হোক, দাফন শেষে স্টার টাওয়ারে ছোট একটা গ্যাদারিং হয়েছিল স্যারের ব্যাপারে। মাইক দেয়া হচ্ছে একেকজনের কাছে কিছু বলার জন্য। শোকাহত সবাই বিভিন্ন জিনিস বললো। আমাদের ব্যাচের একজন ছিল, বেশ ট্যালেন্টেড। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর জব সাধারনতঃ কেউ ছাড়ে না, সে মোটামুটি লাথি দিয়ে বের হয়ে এসেছিল, জাস্ট ভাল লাগে না বলে। মাইক নিয়ে বলল, "ইটস ওভার", এখন আমরা কী করতে পারি ? স্যারের মেয়ে ও লেভেলস দিবে কিছুদিন পর। তার মাসিক খরচ আছে, যা মিনিমাম ১৫-১৬ হাজার টাকা হবে। আমরা তার ও লেভেলস শেষ করা পর্যন্ত এই খরচ বহন করতে পারি। ..." । আরও কিছু বলেছিল, ঠিক খেয়াল নেই।
এত ঘটনা বলার পেছনে কারণ হচ্ছে, ঐ যে ছেলেটা সবার আগে একটা প্রডাকটিভ চিন্তা করেছে, সেটা আমাদের পিন্সিপাল হওয়া দরকার। চারদিকে এত সমস্যা, এত দুঃখ, ক্ষোভ, ঘৃণা - যে শ্রেফ এগুলোর সব খবর রাখতে গেলেই দিনে আর সময় পাওয়া যায় না। তারপর যদি এগুলো অ্যাফেক্ট করে আমাদের কর্মক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে আরও সমস্যা। "এখন আমরা কী - বা করতে পারি" - এর বদলে "এখন আমরা কী করতে পারি" এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে কাজ করতে হবে।
উম্মাহর দুর্দশায় দুঃখ পাওয়া ঈমানের অংশ, কিন্তু দুঃখ বিলাসিতা ঈমানের অংশ না। ক্রমাগতঃ দুঃখ পেয়ে অতঃপর কোন কিছুই না করার চেষ্টা করা দুঃখবিলাসিতার মধ্যে পড়ে। এমন হয়ে গেছে যে, আমরা দুঃখ পেতেই ভাল অনুভব করি এবং এখানেই শেষ। প্রচুর কাজ রয়েছে, প্রচুর। কাজের লোক নেই। অনেক ভাই বিভিন্ন ছোটখাট ফেসবুক পেজ চালায় যাদের জন্য গ্রাফিক ডিজাইনার দরকার হয়, ভিডিও, অডিও এডিটিং এর দরকার হয়, লোক নাকি খুঁজে পায় না, এরকম অভিযোগ শুনি। এবং আনফরচুনেটলি লোক আসলেও অনেক কম। এবং আমাদের কাউকে কাজ দিলেও আমরা করতে পারি না, কারণ কাজের চেয়ে দুঃখবিলাসিতা আমাদের বেশি পছন্দ।
ডিয়ার ভ্রাতাসঃ টেকনিক্যাল স্কিল দ্বারা দ্বীনের খেদমত করতে পারেন, এরকম কিছু শিখুন। শুধু ইমেজ প্রসেসিং এ ভাল হলেই আপনি সাদাক্বায়ে জারিয়া-র অনেক আমল করতে পারবেন। আরও অনেক কিছুই আছে যা করতে পারেন যার যা সামর্থ অনুযায়ী। আপনি কীসে ভাল সেটা আবিষ্কার করে জানান দিন, আল্লাহর কাছে দুয়া করুন, ইনশা আল্লাহ আপনার দ্বারা কিছু একটা হবে। বসে থাকা আমাদের পূর্বসূরীদের ডিকশনারীতে ছিল না।
- M. Mahbubur Rahman