পৃথিবীর বিখ্যাত সব গোয়েন্দা সংস্থার নাম তাদের কার্যকলাপ সমন্ধে আপনারা হয়ত অনেক কিছুই জানেন। অনেক দেশী বিদেশী বিখ্যাত গোয়েন্দাদের নামও জানেন কিন্তু এদের মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে এক নাম না জানা ভারতীয় মহিলা গুপ্তচরের নাম। আজ তার জীবনের কথাই তুলে ধরবো আপনাদের সামনে যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেও ভয় পান নি। যিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক গৌরব গাঁথা দেশনায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ও তার আজাদ হিন্দ বাহিনীর একজন অকুতোভয় মহিলা গুপ্তচর। ::-
" আমি একজন চরম পন্থী আর আমার লক্ষ্য হলো সব কিছু না হলে কিছুই নয় "-নেতাজী যখন সিঙ্গাপুরের অনাবাসী ভারতীয় দের সামনে তুলে ধরছেন তার স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন তখন সেই ভিড়ের শেষের দিকে তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছেন এক যড়শী কন্যা যে তার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চরমে তাই যুদ্ধের খরচের জন্য নেতাজী অনাবাদী ভারতীয়দের কাছে করলেন সাহায্য প্রাথনা। কিশোরী টি ফিরে এলেন বাড়িতে এবার সাথে নিয়ে চল্লেন তার বিয়ের জন্য তার পিতামাতার রাখা অলঙ্কার গুলি। ভিড়ের মধ্যে একে একে সব ভারতীয়রা তাদের সাধ্যমত দান করছে আজাদ হিন্দ ফৌজকে এবার কিশোরী টি এগিয়ে এসে দিলেন তার মুল্যবান অলঙ্কার গুলি। গ্রাহক সেনা টি আশ্চর্য হলে জিজ্ঞাসা করলেন কি নাম তোমার?? কিশোরীটি একটি ছোট জবাব দিলেন "রাজামনি "। ফিরে এলেন বাড়িতে কিন্তু ঘরে টুকে কি দেখলেন তিনি,, ঘরে তার বাবার সাথে বসে আছে সযং নেতাজি আর সামনের টেবিলে রাখা তার আইএনআই কে দান করা সেই অলঙ্কার গুলি। নেতাজি আগে থেকেই রাজামনির পরিবার কে চিনতেন কারন তারা ছিল অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ পরিবার। কিন্তু রাজামনি ফেরত নিতে চাইলেন না তার অলঙ্কার এবং নেতাজি কে রাজী করিয়ে তিনি যোগ দিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে। নেতাজী তার নতুন নামকরণ করলেন "স্বরস্বতী রাজামনি" আর তাকে দিলেন নার্সিং এর কাজ।
.
কিন্তু রাজামনি তার কাজে মোটেই খুশি নয় সে চায় দেশের জন্য এবার যুদ্ধে যেতে কিন্তু নেতাজী রাজি হলেন না কিন্তু রাজামনির সাথে আরো পাঁচজন মহিলা কে দিলেন বিশেষ ট্রেনিং গুপ্তচরের বৃত্তির জন্য। ট্রেনিং শেষে তাদের ছেলেদের মত সাজিয়ে কৌশলে ঠুকিয়ে দিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তে। প্রায় দুই বছর ধরে এই ছয়জন মহিলা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে থেকে নেতাজীকে পাচার করতে লাগলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যার ভিত্তিতে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশ বাহিনীকে হটিয়ে দিল ইম্ফল থেকে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পালটে গেল ধরা পড়ে গেলেন তাদের মধ্যে একজন মহিলা গুপ্তচর। কিন্তু রাজামনি ঠিক করলেন তিনি তার গুপ্তচর সঙ্গী টিকে মুক্তি করে পালাবেন। সফল হলেন রাজামনি কিন্তু বিধি বাম পালানোর সময় এক ব্রিটিশ আর্মি অফিসারের ছোড়া গুলি এসে লাগলো তার পাঁয়ে যদিও শেষ পর্যন্ত পালাতে সক্ষম হলেন তিনি।
স্বরস্বতী রাজামনি ভারতীয় গুপ্তচর দের মধ্যে আজও একজন কিংবদন্তী নাম হয়ে রয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি গান্ধীবাদী না হয়ে সুভাষপন্থী হওয়ায় ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে তার দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপ। ইনি ই প্রথম ভারতীয় মহিলা স্পাই যিনি তার সমৃদ্ধশালী জীবনযাপন ত্যাগ করেছিলেন শুধুমাত্র দেশমাতৃকার সেবার উদ্দেশ্যে। যদিও শেষ জীবন তিনি কাটিয়ে ছিলেন চেন্নাইয়ের একটি এক কামরার ফ্ল্যাটে একা অসহায় দারিদ্রতার মধ্যে কারন আপামর ভারতবাসী যে তার আত্মবলিদানের কথা কখন জাননেই পারেনি।
সুত্র : The Great Indian Defence News In Bengali
Sort: Trending