বুদ্ধির কাছে বন্দী

in #shaonashraf11 months ago

কুয়ালালামপুর একটা নতুন শপিং সেন্টার খুলেছে ডিসেম্বরে।মানে অত্যাধুনিক শপিং সেন্টার।এটার থিম হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।মানে এটাকে সাজিয়েছে গাছপালা দিয়ে।দোকানের ভিতরেও গাছ,তাই বলে আর্টিফিশিয়াল কোন গাছ নয়।একেবারে জীবন্ত গাছ।সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে এর পাচঁ তলায় টপ গার্ডেন।টপ গার্ডেনে গেলে মনে হয় বিশাল এক বনাঞ্চলের মধ্যে ঢুকে গেলাম।ফুল ফুটে আছে,ফল ধরেছে,মৌমাছি মধু সংগ্রহ করেছে,পাখি তার ছানা পোনা নিয়ে সংসার সাজিয়েছে।সব মিলিয়ে সত্যিই অপরূপ দৃশ্য।

ডিসেম্বরে আমরা প্রথমবার যখন গেলাম আমিতো পুরোই অভিভূত।তাই গত রবিবারে আবার গেলাম।যদিও এই শপিং সেন্টারে শপিং করা আমাদের কর্ম নয়।তাও শুধু বিনোদনের জন্য। আচ্ছা তাহলে এটাও বলা দরকার কেনো আমাদের কর্ম নয়।বিশ্বের বিখ্যাত যত ব্র্যান্ড সবাই আস্তানা গেড়ে বসেছে এখানে।লোকাল কিংবা নরমাল কোন ব্র্যান্ড জায়গা করতে পারেনি।এখন বৃষ্টি থাকার কারণে ভাবলাম একটু ঘুরে দেখি।Dior এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি দুই তিনটে ব্যাগ দেখা যাচ্ছে ভালো লেগেছে তাই মানহার বাবা ঢুকলো।সেলস গার্ল এসে জিজ্ঞেস করছিলো,কি নিবো! কিন্তু মানহার বাবা প্রাইস ট্যাগ দেখে কিছু না বলে চলে এসেছে। ছোট একটা হাত ব্যাগ।প্রাইজ ১৬৯৯০রিঙ্গিত,বাংলাদেশী টাকায় ৪লাখ পঁচিশ হাজার টাকারও বেশি।এরপর আরকি বলবো।

যাইহোক এসব নিয়ে কিন্তু আমি লিখতে বসিনি।আমি লিখতে বসেছি সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয় নিয়ে।চশমার একটা নামীদামী ব্র্যান্ড মনস্টার। এটা আমরা যারা ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা রাখি তারা কমবেশি সবাই জানি।সেই মনস্টার আউটলেট এর সামনে দিয়ে যাচ্ছি দেখি বিশাল আকার তিনটে প্রাণী।অবশ্যই এটা দেখে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই কারণ মালয়েশিয়াতে শপিং মলে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী তৈরি করে বিদ্যুৎ সংযোগে এমন ভাবে চালিয়ে রাখে মনে হয় জীবিত প্রাণী,তেমনি ভেবে গেলাম কয়েকটা ছবি তুলবো।

কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি এটা সত্যিকারের প্রাণী।কিন্তু কি আশ্চর্য এতো বড় বড় তিনটে জন্তু বেঁধেও রাখেনি।মাঝে মাঝে লেজ হালকা নাড়ে,জাবর কাটে,চোখের পাতা উঠানামা করে এই যা।মানুষ ছবি তুলছে,ভিডিও করছে,গায়ে হাত বুলিয়ে চলে যাচ্ছে ওদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।এগুলো নাকি মনস্টার।ঐযে বললাম ওরা আবার অর্গানিকে বিশ্বাসী,আর্টিফিশিয়ালে নয়।তাই তাদের ব্র্যান্ডের মহিমা বুঝাতে হয়ত এই ব্যবস্থা।কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন রয়ে গেলো তাদের ব্র্যান্ডের নাম মনস্টার কেনো।

ওদের চশমা কি মনস্টারের চামড়া কিংবা হাড় দিয়ে তৈরী করে নাকি।কিন্তু আরেক টা কারণও হতে পারে।মনস্টার হতে পারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন।

যাইহোক এটা দেখে ছোটবেলায় পড়া একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো।ছোট বেলায় ঐ গল্প গুলো কে সত্যি ভাবতাম।এবার গল্পে আসা যাক।গল্পের নাম ছিলো বুদ্ধি।বনের ধারে এক চাষী তার বউকে নিয়ে বাস করতো। তাদের ছিলো বড় দুইটি মহিষ।এই মহিষ দিয়ে বনের ধারের জমি চাষ করতেন চাষী।এই বনে ছিলো একটা বাঘ।বাঘ তখন সাদা ছিলো।তাদের গায়ে কোনো ডোরাকাটা দাগ ছিলো না।একদিন বাঘ খাবার খুঁজতে খুঁজতে মহিষ দুটিকে দেখতে পেলো।তখন সে বনের পাশে এসে দেখলো একজন চিপচিপে গড়নের লোক মহিষ দুটিকে নিজের মতো পরিচালনা করছে।আবার একটু দেরী হলে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আঘাত করছে।

এই দেখে বাঘ অবাক হলো।একটা মহিষ যদি চাষীকে আক্রমণ করে চাষী নিজেকে বাঁচাতে পারবে না।কিন্তু তা না করে দুটি মহিষ চাষীর কথা মতো চাষ করছে।কিন্তু কেনো?বাঘ অপেক্ষা করতে লাগলো কখন চাষী মহিষ রেখে একটু দূরে যাবে।তখন সে মহিষকে এর রহস্য জিজ্ঞেস করবে।দুপুরে চাষী বউ খাবার নিয়ে আসলো।চাষী মহিষদের বনের পাশে বেঁধে অন্য পাশে খেতে চলে গেলো।বাঘ আস্তে আস্তে মহিষের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো।কেনো সে চাষীকে আক্রমণ না করে চাষীর অত্যাচার সহ্য করে।মহিষ তখন উত্তর দিলো মানুষের বুদ্ধির কারণে।এখন বাঘের কৌতূহল হলো এই বুদ্ধিটা কি।সে এবার চাষির জন্য অপেক্ষা করতে লাগালো। চাষী আসলে বুদ্ধি দেখবে।এবার চাষী আসলো।

বাঘ চাষীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো "মানুষের নাকি বুদ্ধি আছে।এটা কেমন আমাকে দেখাবে"। বাঘ দেখে চাষী ভয় পেলেও বুঝতে দেয়নি।সে তাৎক্ষণিক উত্তর দিলো এটাতো বাড়িতে রেখে এসেছি।বাঘতো নাছোড়বান্দা বুদ্ধি না দেখে যাবে না।চাষী এবার বললো আমি বুদ্ধি আনতে বাড়িতে গেলে তুমি যদি আমার মহিষ খেয়ে নাও।বাঘ বলে আমি খাবো না।চাষী বলে আমি বিশ্বাস করি না।এবার বাঘ বলে তোমার চাষের ঐ দড়ি দিয়ে আমাকে বেধে রেখে যাও।তাহলে আমি তোমার মহিষ খেতে পারবো না।চাষী এবার তার চাষের দড়ি খুলে বাঘকে ভালোভাবে পেঁচিয়ে বেঁধে রেখে বাড়িতে গেলো।বাড়ি থেকে আগুন এনে কিছু শুকনো পাতা বাঘের চারপাশে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো।

বাঘ বলে,আমাকে বুদ্ধি না দেখিয়ে তুই আমাকে পুড়িয়ে মারছিস।যদি আমি বাঁধা না থাকতাম তাহলে তোকে চিবিয়ে খেয়ে নিতাম।চাষী তখন বললো এটাইতো মানুষের বুদ্ধি তোকে আগে বেঁধে নিলাম।এই যাত্রায় বাঘ আধমরা অবস্থায় বেঁচে গেলেও দড়ি পুড়ে ডোরাকাটা দাগ হয়ে যায় বাঘের শরীরে।সেই থেকে বাঘের শরীর এমন কালচে ডোরাকাটা।

এই দৈত্যাকার মনস্টার গুলোকে মানুষ কি বুদ্ধি প্রয়োগ করে এতোটা গোবেচারা করে দিলো আমি সেটায় ভাবছিলাম।

Screenshot_2024_0128_222325.png