আমার ছোটবেলার বান্ধবী বললো যে ও গণিতে ৮৬ পেয়েছে।ওর ঘরে গিয়ে দেখি পরীক্ষার খাতা।ও ঘরে ছিলো না,খুলে দেখলাম ২৬ পেয়েছে মাত্র।
আগে থেকে ভেবে রেখেছি, ও আসলে জিজ্ঞেস করবো, গণিতে কত পেয়েছে। ওকে দেখার পর আমার মনটা কেমন যেন ঘুরে গেলো।আহারে বেচারি কি সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছে।এখন যদি বলি আমি ওর খাতা গুলো দেখে নিয়েছি, লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না।হয়তো আগামীকাল থেকে ঘুমাতেই আসবে না।আমার সাথে তার দুরত্ব বেড়ে যাবে। কি দরকার?
বেশি নাম্বারের ভাব নিয়ে আছে থাক না। এতে আমার তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আর বলিনি এই কথা। এরপর ওর চাচা বিদেশ থেকে এসে ওকে একটা স্বর্ণের কানের দুল দিয়েছে।সে সময় গ্রামের ছোট্ট একটা মেয়ের স্বর্ণের কানের দুল অনেক বড় ব্যাপার।ও এগুলো সব সময় ওর কানে দিয়ে রাখে।ও এখন একটু বেশি দামী লোক ভাবে নিজেকে। ও আবার আমার সাথে গল্প করে ওর বাবা নাকি বলছে কানে স্বর্ণের দুল তাই ওকে বেশি সুন্দর দেখায়।
এজন্য ওনি মেয়েকে স্বর্ণের চেইন কিনে দিবেন। ও যেনো সব সময় এগুলো পড়ে থাকে।দুই তিন মাস পর দেখি ওর কানে দুল নাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম দুল কোথায়। সে কান্না করে দিয়েছে। বলে হারিয়ে গেছে। আমি খুব মন খারাপ করলাম। আমি আবার আম্মাকে বলেছিলাম। আম্মা বলে কিসের হারিয়েছে ওর মা বলে গেলো ওর বাবা নাকি বিক্রি করে দিয়েছে।
আহারে বেচারি কত বড়মুখ করে বলল বাবা চেইন কিনে দেবে এখন কানের গুলোও বেচে দিলো কি করে সে আমায় সত্যিটা বলবে।এর কিছুদিন পর ওদের একটা ছাগল এনেছে। সে এটা নিয়ে আমার সাথে ঘাস খাওয়াতে যায় বিকেলে। ওর নানু নাকি এই ছাগলটা ওকে দিয়েছে। ওর কানের দুল হারিয়ে গেছে এটা বিক্রি করে আবার কিনার জন্য। আমি যে জানি ওর দুল হারাইনি সেটা আমি থাকে বলিনি।দুইতিন মাস পর ছাগল হারিয়ে গেছে। ওর খুব মন খারাপ।
আমি ওকে নিয়ে অনেক খুঁজলাম। কোথাও পাইনি।আসলে ওর ছাগলও হারাইনি। ওর বাবা নিয়ে বিক্রি করেছে।অবশ্যই বলে নেননি। আমার সাথে সে ছাগল মাঠে বেঁধে এসেছিলো। আনতে গিয়ে দেখি নাই। ও ছাগলের জন্য অনেক কেঁদেছে।রাতে ওর মা হয়তো ওকে বলেছে ছাগল বাবা নিয়েছে। যে বাবাকে সে এতো ভালোবাসে, যে বাবাকে নিয়ে এতো গল্প করে আমার সাথে সে বাবার এসব কথা সে কি করে বলবে আমার সাথে। ছোট্ট কচি একটা মনের ভিতর এগুলো চেপে রাখা কি খুব সহজ? মোটেও না। তবুও রাখতে হয়েছে থাকে। তাই এই মিথ্যে গুলো শুনে কিছু না বললেও তখন রাগ করতাম এখন মনে পড়লে রাগ করিনা বরং ওর অসহায়ত্ব বুঝার চেষ্টা করি।এখন বিয়ে হয়েছে ওর।
বহু বছর পর ঐদিন ভিডিও কলে কথা হচ্ছিল সারাজীবন খোলসের ভেতর থেকে থেকে সাবলীলভাবে কথা বলতেই ভুলে গেছে যেনো।যাইহোক কথা বলে এইটুকু বুঝেছি। মানিয়ে গুছিয়ে নিজের সংসারে ভালোই আছে।আসলে দিন শেষে এটাই ঠিক আছে।
এবার এক দাদার গল্প বলাযাক।ওনি আমার বাবার চাচা।তবে বয়সে আব্বার ছোট।আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন ওনার বিয়ের বয়স সতেরো বছর। তখনও ওনার কোনো সন্তান হয়নি।তাই একটা মেয়ে দত্তক এনেছেন। যদিও বাচ্চাকাচ্চা ছিলো না তবু্ও কখনো ওনাকে মন খারাপ করতে দেখিনি।খুব হাসিখুশি। আমি ভাবতাম সন্তানের কোনো অনুভূতি নেই। পালিত মেয়েকে তিনি খুব আদর করেন।
হঠাৎ একদিন ওনার স্ত্রীর সাথে ওনার খুব বড় ঝগড়া হয়।ওনি ওনার স্ত্রীকে মেয়ে সহ ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। আসলে ঝগড়া না ওনার শ্বশুর হজে যাবে তাই ওনি ওনার শ্বশুরকে দাওয়াত করছিলেন শ্বশুর আসেনি। ওনি নাকি কার কাছে বলেছে ওনার বাড়ির খাবার তিনি খাবেন না।যার কাছে বলেছে তিনি আবার এসে দাদার কাছে বলে দিয়েছে। তাই দাদা ওনার স্ত্রী আর মেয়েকে বলেছে চলে যেতে। ঐদিন অনেক শীত ছিলো। মেয়েকে নিয়ে ওনার স্ত্রী বাইরে বসে আছে।আম্মা তখন দাদাকে ডাকে।আম্মার চাচা শ্বশুর হয় তাই আব্বা ডাকে।
ডাকার সাথে সাথে দাদা দরজা খুলে বের হলো। আম্মা বলতে শুরু করলেন "আব্বা মাথা গরম করতেছেন কেনো।ছোট মেয়েটা নিয়ে শীতের মধ্যে বাইরে।"-----চলবে
Congratulations @shaonashraf! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 10000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out our last posts: