বিশ্বাস খুব ছোট্ট একটা শব্দ। এর গভীরতা আমরা কয়জনইবা বুঝতে পারি।কথায় বলে বিশ্বাস কাঁচের দেওয়ালের মতো একবার ভেঙে গেলে জোড়া লাগে না।নিজেকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করতে কিংবা বিশ্বাস ধরে রাখতে কম বেশি সবাই চেষ্টা করে।আমি বলছি না মানুষ বিশ্বাস ভাঙে না। অনেকেই জেনে বুঝে বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে।আসলে আমি তাদের ক্ষেত্রে বিশ্বাস শব্দটা ব্যবহার করতে নারাজ।যারা সত্যিই বিশ্বাস যোগ্য,আস্তাবান তাদের কে কেউ অবিশ্বাস করে না।
সর্বদা সত্য কথা বলে সৎ পথে চললে শতভাগ লোকের বিশ্বাস অর্জন করা যায় বা যাবে,আমি এটা অবশ্য বলব না।নিজে সৎ পথে থাকলেও সবার কাছ থেকে বিশ্বাস আশা করা বোকামি। বিশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে অন্যকে বিশ্বাস করা বেশি কঠিন। এটা সবাই পারে না।এটা একটা গুণ।ইচ্ছে করলেই কেউ এই গুণের অধিকারী হতে পারে না।শিশু বয়স থেকে মানুষের ভিতর বিশ্বাসের একটা ভিত্তি তৈরি হয়।এই ভিত্তি যার যত মজবুত তার বিশ্বাস করার ক্ষমতা তত প্রখর।এটা আসলে একটা মানসিক অবস্থা। যা পারিবারিক পরিবেশ আর সামাজিক পরিবেশ থেকে সৃষ্টি হয়।যে যত বেশি প্রতারিত হয়,মিথ্যার মধ্যে দিয়ে যায় তার বিশ্বাসের ভিত্তি তত নড়বড়ে হয়।
আবার একথাও সত্য যে মানুষ তার নিজের চরিত্র দিয়ে অন্যকে বিচার করে। তাই যে যেমন সে অন্যকে তেমন ভাবে।কেউ কেউ আবার এমনও আছে নিজে কখনো প্রতারিত হয়নি, নিজেও কাউকে কখনো ঠকায়নি কিন্তু কারণে অকারণে অন্যকে সন্দেহ করে।এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমার জানা নাই তবে আমার এটাকে একটা রোগ মনে হয়।আমার এক ভাবি তার স্বামীকে সব সময় সন্দেহ করে। ওনার সন্দেহের ধরণটা এমন হঠাৎ একদিন বলবে তোর ভাইতো এখন অমুকের সাথে শুরু করছে। এরপর বিপরীতে আমি যায় বলি না কেনো বিশ্বাস করবে না।
এটা প্রমাণ করার জন্য যাকে নিয়ে সন্দেহ করবে তার বাসার আশেপাশের সবার খুঁজ খবর নিয়ে ওনাকে সাহায্য করবে এমন মহিলার সাথে বন্ধুত্ব করবে।ঔ মহিলা সন্দেহ করা মহিলা সম্পর্কে একটু নিন্দা করবে তিনিও নিন্দা করবেন এভাবে দুইজনে গলায় গলায় ভাব।ভাবি অন্যের বাসায় কম যায় এজন্য অন্যজনই ভাবির বাসায় আসবে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকবে খাওয়া দাওয়া করবে। এভাবে ভাইয়ের সাথে পরিচয়। ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলবে। ওমা সপ্তাহ না ঘুরতেই ভাবির মুখে নতুন বাণী। ভাইয়ের নাকি এই মহিলার সাথে সম্পর্ক। আগের জনের কথা এখন আর নাই।
এসব ব্যাপার নিয়ে ওনাদের সংসারে তিনশত পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে তিনশত পঞ্চাশ দিনই চলে ঝগড়া।ওনাদের সন্তানরা বিয়ে নামক ব্যপারটাকে এখন থেকে ভয় পায়।ওদের পরবর্তী জীবন এর প্রভাবে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। বিশ্বাস শব্দের কোনো মানে থাকতে পারে ওরা সেটা জানে না, এভাবে চললে জানবেও না।
এবার আমার এক ছাত্রের মায়ের কথা বলা যাক।ওনার স্বামী সিরামিকস এর ব্যাবসা করে। একদিন এলাকার এক মহিলা এসে ওনাকে বলতেছে ভাবি আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।আমি পড়াচ্ছিলাম।আমার ছাত্রের মা অভয় দেওয়ায় মহিলা বলতে শুরু করলেন ''গতকাল ভাইকে দেখলাম বারো নাম্বারে এক মহিলার সাথে। "মহিলাকে আর বলতে দিলেন না আমার ছাত্রের মা।ওনি বলতে শুরু করলেন ''তো কি হয়েছে ভাবি।ব্যাবসা করে ব্যাবসার কাজে যেতে পারে, এলাকায় থাকে পরিচিত হিসেবে যেতে পারে এটা বলার কি আছে।ভাবি কিছু মনে করবেন না মানুষের সংসারে অশান্তি লাগে আপনাদের মতো মহিলাদের জন্য।"
ঐ মহিলা কথা শেষ করার আগেই চলে গেলেন। আমি চেয়ে দেখছিলাম কি ভরসা ওনার স্বামীর উপর।অথচ ওনার স্বামী ধোয়া তুলসীপাতা নয়।তাওতো স্বামীকে বিশ্বাস করেছে।
কোরবানি ঈদের আগে আমি একজনকে টাকা ধার দেই।চল্লিশ হাজার টাকা দিলাম দুইবারে প্রথম দশ হাজার পরের দিন ত্রিশ হাজার।ওনি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ পরিমাণটা দুইবারে লিখে পাঠায়।টাকাটা ঈদের পরে দেওয়ার কথা থাকলেও আর দেয়নি।আমিও চাইনি।গত সপ্তাহ আমার টাকা প্রয়োজন চাইলাম ওনি এখন বলতেছেন দশ হাজার টাকা মানহার বাবা নিয়ে আসছে।ত্রিরিশ হাজার দেওয়ার আগেই দশ হাজার নিয়ে গেছে। দশ হাজার দিলাম বিকালে আর ত্রিশ হাজার সকালের মধ্যে নিয়ে নিয়েছে? বলে না।মেসেজে সময় দেখে ওনি ওনার মেসেজকেও বিশ্বাস করতে পারে না।
যাইহোক বিভিন্ন প্রমাণ সাপেক্ষে পরে এটা তিনি মেনেছেন। কিন্তু ব্যপারটা আমার কাছে ভালো লাগেনি।
তাই আমার মনে হয় অন্যকে বিশ্বাস করাটা নিজের যোগ্যতা কিন্তু আমাকে কে কতোটা বিশ্বাস করবে সেটা আমার ব্যাপার নয়।নিজে সৎ থাকার পর কেউ যদি আমাকে বিশ্বাস করতে না পারে সেটা তার ব্যার্থতা আমার নয়।