প্রত্যেক মানুষের কিছু স্বপ্ন থাকে। যে যেমন পর্যায়ে থাকে তার তেমন স্বপ্ন থাকে। পর্যায় বলতে আমি আর্থিক অবস্থান বুঝাচ্ছি। আমাদের বাড়ির পাশে একটা পরিবার ছিলো। ওরা খুব গরিব ছিলো।ওনাদের দুই ছেলে দুই মেয়ে। লোকটা হঠাৎ করে একদিন মারা গেলো।তখন বাচ্চা গুলো নিয়ে বিপদে পড়ে গেলো। তখন মহিলা বাচ্চা গুলো নিয়ে ঢাকা চলে গেলো।
বড় ছেলে আর দুই মেয়ে গার্মেন্টস এ কাজ করে। ওনি বাসায় বাসায় গিয়ে কাজ করতেন।এভাবে দুই মেয়েকে বিয়ে দেন।বড় ছেলেকেও বিয়ে দেন।এরপর ছেলের ঘরে একছেলে এক মেয়ে হয়। ঢাকায় এতো লোক থাকা সমস্যা তাই দাদী তার দুই নাতি নাতনিকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন।ছেলে প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠায় নিজে আশেপাশে কাজ করে এভাবেই তাদের তিনজনের সংসার চলে।
একদিন ওর দাদী আমাদের বাড়িতে এসে গল্প করছিলো,রাতে খাবার পর যদি অল্প ভাত থাকে তাতে পানি দিয়ে রাখেন। দাদীর উদ্দেশ্য সকালে দুই ভাই বোনকে ভাগ করে দিবে।কিন্তু তাদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা, ঐ পান্তা ভাত গুলো কে বেশি খাবে।এভাবে মাঝে মাঝে ফজরের আযানের আগে অন্ধকার থাকতে ওঠে বোনটা চুরি করে কিছু ভাত খেয়ে নেয়।দাদী প্রতিদিন ভাত কিভাবে কমে বুঝতে পারে না। ওনি ভাবে মনে হয় কমই ছিলো, তিনি অন্ধকারে বুঝতে পারেন নি।
একদিন অন্ধকারে চপ চপ শব্দ শুনে দাদী ভেবেছে চোর এসেছে পরে দেখে ওনার নাতনি পান্তা ভাত চুরি করে খাচ্ছে।এরপর তিনি বুঝতে পারলেন। একবার জলপাই এর মৌসুমে সবার ঘরে জলপাই এর আচার দেখে ওনার নাতি নাকি বলেছে আচার খাবে।আমাদের বাড়িতে একটা জলপাই গাছ ছিলো। দাদুকে এসে বললো ওনার নাতী জলপাই এর আচার খেতে চাচ্ছে। অল্প কিছু জলপাই দিতে।ওনি আবার দাদুদের ঘরে কাজ করেন।দাদু তখন গাছ থেকে পেরে দুই কেজির মতো জলপাই দিলেন।
সেই জলপাই নিয়ে আম্মার কাছ এসে যা মসলা লাগবে চেয়ে নিলেন। এরপর আাড়াইশো গ্রাম চিনি বাজার থেকে এনে আচার বানালেন। আচার আবার সকাল সকাল বানালেন, তখন ওনার নাতনি স্কুলে চলে গেছে। বানিয়ে রেখে ওনি আবার কাজ করতে চলে গেলেন। নাতিটা বাসায়।ওর বয়স চার কি সাড়ে চার।এখনো স্কুলে যায় না।ওনি ভাবলেন ঠান্ডা হইলে ওদের খাইতে দিবেন আর কিছু অংশ রাখবেন। কড়াই ঘরে রেখে গেলেন।
এক দেড় ঘন্টা পর তিনিও আসলেন ওনার নাতনিও স্কুল থেকে আসলো। এসে দেখে নাতীটা ঘরে নেই।কড়াইয়ে আচার নাই। ওনি কিছু না বুঝে নাতিকে খুঁজতে শুরু করলেন।মাঠে গিয়ে দেখেন নাতী খেলা করে। জিজ্ঞেস করে আচার কোথায় সে বলে জানে না।ঘরে কোন বিচিও পড়ে নেই যে তারা ভাববে নাতী খেয়ে নিয়েছে।দাদী আমাদের বাড়িতে এসে কান্না করছে। এতো কষ্ট করে নাতির জন্য আচার বানালেন আচার কে নিয়ে গেলো।
সারাদিন গেলো। রাতে নাতিটার পেট কেমন যেনো ফুলে বড় হচ্ছে। শেষ রাতের দিকে পেটে ব্যাথা শুরু হলো।এভাবে সকাল হলো।বিভিন্ন কিছু খাওয়াচ্ছে কোনো কাজ হচ্ছে না। বিকালে পেট এতো বড় হয়েছে মনে হচ্ছে যে কোন সময় ফেটে যাবে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। এরপর ডাক্তার পায়খানার রাস্তা দিয়ে শুধু জলপাই এর বীচি বের করলেন। দাদী যখন চলে গেলো তখন সে সব আচার খেয়ে নিলো তাও বীচিসহ।
ওদের ছোট্ট মন হয়তো রাতে শুইলে স্বপ্ন দেখে সকাল ওঠে পেট ভরে পান্তা খাবে।অন্যের ঘরে আচার দেখে স্বপ্ন দেখে সে নিজেও আচার খাবে তাই হয়তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আমরা যারা রাতের ভাত শেষ না হলে সকালে ফেলে দেই তারা সকালের এই পান্তার স্বপ্ন বুঝবো কি করে।এসব ভাবলে আমার খুব হতাশ লাগে। কেউ ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়ে এক লাখ টাকায় এক প্লেট ভাত খায়।কেউ সকালে এক লোকমা পান্তা যদি না পায় সেই চিন্তায় মাঝ রাতে ওঠে অন্ধকারে পান্তা চুরি করে খায়।কেউ স্বপ্ন দেখে চাঁদে গিয়ে এক রাত ঘুমাবে। কেউ দুইটি চট সেলাই দেওয়া একটা বস্তি ঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখে।কারণ ফুটফাতে ঘুমানোর পর হঠাৎ যখন ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামে তখন আর ভিজা অবস্থাতেই সারারাত কাটানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।