সকাল থেকেই কলম্বোর আকাশটা ভার। মেঘলা আকাশ দেখে মনে হচ্ছিল, অঝর বর্ষণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। বেলা দুইটার দিকে তো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিই নামল। তখনই সংশয় জেগেছে, প্রেমাদাসায় আজ বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা হবে তো?
শেষ পর্যন্ত সংশয় কাটিয়ে টস হলো। ভেজা কন্ডিশন বলেই হয়তো টস জিতে বোলিং বেছে নিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। যদিও তাঁর সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ৬ উইকেটে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ২১৪ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ কোনো দলের।
এত রান তাড়া করে টি-টোয়েন্টিতে জেতার রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। আসলে ১৬৪ রানের বেশি লক্ষ্য কখনো সফলভাবে পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। রেকর্ড রান তাড়া করতে যেমন শুরু দরকার, সেটাই এনে দিয়েছেন লিটন ও তামিম। উদ্বোধনী জুটিতে ৫.৫ ওভারেই তারা তুলে ফেলেন ৭৪ রান। অবশেষে ১৯ বলে ২ চার আর ৫ ছক্কায় ৪৩ রান করে নুয়ান প্রদীপের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন। ভেঙে যায় বিধ্বংসী জুটিটা।
ফিফটির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ব্যাটে ঝড়ও চলছিল। হঠাৎ থিসারা পেরেরার বলটা বুঝতে না পেরে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিলেন এই ওপেনার। ২৯ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তার ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংসটা থেমেছে তাতেই। এরপর মুশফিকুর রহিম ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেন। ১১ বলে ২০ রান করে আউট হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
শেষ পর্যন্ত মুশফিকের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের রেকর্ড গড়া এক জয় পেলো বাংলাদেশ। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস ট্রফির ম্যাচে ২১৫ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে টাইগাররা। ঘরের মাঠের শ্রীলঙ্কাকে ২ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে লঙ্কানরা কুশল মেন্ডিস আর কুশল পেরেরার ঝড়ে প্রথমে ব্যাট করে তুলে ৬ উইকেটে ২১৪ রান।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী জুটিতে ৪.২ ওভারেই ৫৬ রান তুলে ফেলেছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। অবশেষে বিধ্বংসী এই জুটিটা ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে স্ট্যাম্পই উড়ে যায় ২৬ রান করা দানুষ্কা গুনাথিলাকার।
এরপর কুশল মেন্ডিস আর কুশল পেরেরা- দুই কুশল মিলে বাংলাদেশি বোলারদের উপর ভালোই তাণ্ডব চালিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা গড়েন ৮৫ রানের জুটি। অবশেষে এই জুটিটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ১৪তম ওভারে টাইগার অধিনায়কের বলে সাব্বির রহমানের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৩০ বলে ৫৭ করা কুশল মেন্ডিস।
একই ওভারে দাসুন শানাকাকে শুন্য রানে আউট করে বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়েছেন রিয়াদ। এই ক্যাচটিও নেন সাব্বির। এরপর তাসকিন আহমেদের বলে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ সাব্বিরের। এবার আউট ২ রান করা চান্দিমাল। তবে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পারলেও লঙ্কানদের রানের গতি আটকাতে পারেনি টাইগাররা।
শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজকে খেলতে গিয়ে বল উপরে তুলে দেন কুশল পেরেরা। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ৪৮ বলে ৭৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান। একই ওভারে এক বল পরই থিসারা পেরেরাকে শুন্য রানে নাজমুল অপুর ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। উপুল থারাঙ্গা অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ৩২ রানে।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে টস হতে পারেনি। ১৫ মিনিট বিলম্বে টস হয়। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা দুই দলই অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছে।