"কিছু কিছু কষ্টের কোনো স্বান্তনা হয় না"

in Praise India4 years ago

দীপা আর ওর ছেলে -
2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9mriNwzqQFPzmo8hZzWv2mTwpfVHTNPyvZsewzzUjJbaa4baf89eGeoNHVCgJDJcWbB9Fn2DPD1Qs6TqM88fvrr35pLkebx.jpeg

প্রিয়,
পাঠকগণ,

আজ মনটা একদমই ভালো নেই।

কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না,শুধু লেখা কেন কোনো কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ওই যে কথায় আছে - জীবন যেমনই হোক কেটে যায় ঠিকই। কোনো কিছুর জন্যই থেমে থাকে না।

কিছুক্ষন আগে খবর পেলাম আমার খুব কাছের একটা বান্ধবীর বাবা মারা গেছেন, আর ওর মা এখনও ICU তে ভর্তি আছেন।

ঠিক ধরেছেন,দুজনেই করোনা নামক মারণ রোগের শিকার। বয়েস যে অনেক তেমন নয়, তবে কপালে ছিল এই আর কি?

যার সাথে জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে দিলো, সে মানুষটাকে শেষবার দেখতে পর্যন্ত পারলো না! দেখা কি বলছি, সে জানলোই না মানুষটা আর নেই। এও কপালে ছিলো। মৃত্যুর সাথে লড়াই করা ওতো সহজ নয়। সত্যিই জানিনা কাকিমা ফিরে আসবেন কিনা। আর যদিও বা ফিরে আসে, তাহলে কি স্বামী হারানোর শোকটা সামলে উঠতে পারবেন?

আমি দীপার কথা বলছি, আমার সাথে ওর কলেজে পরিচয় হয়েছিল।আমাদের বন্ধুত্ব আজও চলছে,কয়েকদিন আগেই আমরা প্ল্যান করছিলাম যে সবকিছু একটু ঠিক হলে দেখা করবো একদিন। অনেক দিন পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। আমার বিয়ের পরপরই ওর বিয়ে হয়। একটা ছেলেও আছে ওর।

অবাক লাগছে ভেবে আজ মাথার উপর থেকে বাবার ছায়া হারালো মেয়েটা। মা দাড়িয়ে আছে মৃত্যুর দোরগোড়ায়।বাবাকে শেষবার দেখার সৌভাগ্য টুকুও ভগবান ওর কপালে লেখেনি। বাবাকে হারানোর শোক বোধহয় অনুভবও করছে না, শুধু মা কে হারিয়ে ফেলার ভয়ে।

বিশ্বাস করুণ, শোনার পর ওকে ফোন করার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারলাম না আজ। কি বলবো ফোন করে এটা ভেবেই আটকে গেলাম। ভাষা নেই, ওর অবস্থানটা কল্পনাও করতে পারছি না।সব ঠিক হয়ে যাবে এই কথাটা যেমন বলতে পারবো না,তেমনি এটাও বলতে পারবো না,চিন্তা করিস না মা তো আছে। জানিসই তো সবাইকে একদিন মরতে হবে।

হ্যাঁ, মরতে হবে সবাইকে, এটা জানি, তবে একই সাথে দুজনকে হারানোর কষ্ট ঠিক কেমন হয় এটা জানিনা! কিন্তু মা কে হারানোর কষ্ট বুঝতে পারি। তবে দীপার এই কষ্টটা কেমন সেটা ভাবতেও পারি না।

একটু একটু করে ভয়টা গ্রাস করছে।আপনজন হারানোর ভয়। খবরটা শোনার পর থেকেই পুরোনো দিনগুলো ভাসছে চোখের সামনে।কাকিমা ভীষণ ভালো নান পরোটা বানাতো। কলেজে পড়া কালীন একদিন প্ল্যান করে রাতে ওদের বাড়ি ছিলাম আমরা।সেদিন নান খেয়েছিলাম।অনেক যত্ন করে খাইয়েছিল কাকিমা।

এরপর প্রথম যে বার বর্ধমানে এম এ ক্লাস করতে গেলাম,কাকিমা আমাদের সাথেই ছিলো। আমরা পার্কে ও ঘুরেছি একসাথে।লাস্টবার দেখা হয়েছিলো দীপার বিয়ের দিন।আসলে মেয়েরা যতই ভালো বন্ধু হোক,বিয়ে হলেই দুরত্ব বেড়ে যায়। ফোনেও রোজ কথা হয়না, আর দেখা করা তো দুরে থাক। এবার প্ল্যান করে দেখা করবো ঠিকই করে নিয়েছিলাম, কিন্তু দেখুন পরিস্থিতি আমাদের বিপরীতে চলতে শুরু করল।

বর্ধমানে প্রথমবার ক্লাস করতে গিয়ে কাকিমার সাথে তোলা ছবি (একদম পিছনে দীপা ও কাকিমা) --
JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH81aGNxK87wmVT52tiohaJYXNkHMiY2miWWYepWKu3eJgzYCeECcpYgs4pGBTunB5ihLQP61xaMYVEDGifWNkzv1AmDZxhU.jpeg

যাইহোক, কাকু খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি যেন স্বর্গবাসী হতে পারেন এই প্রার্থনা করা ছাড়া আজ আর কিছুই করার নেই। আর কাকিমা যেন ঠিক হয়ে যায় এই কামনা করি।ভগবান এতটা নিষ্ঠুর হবেন না নিশ্চয়, একই সাথে বাবা - মা হারানোর কষ্ট তিনি নিশ্চয় দীপাকে দেবেন না।

আপনাদের একটাই কথা বলবো,চারিদিকে খুবই খারাপ পরিস্থিতি,দয়াকরে সাবধানে থাকুন।আপনজনকে হারানোর কষ্ট যেন আপনার পেতে না হয়, সেই কামনাই রইলো।
দিনটা খুব ভালো কাটুক আপনাদের