তিতলি রানী বাবার সাথে -
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমি কথা বলবো এমন একজনের ভালোবাসা নিয়ে,যে সবসময় পর্দার ওপরেই থাকে।প্রত্যক্ষ ভাবে সে তার ভালোবাসা ব্যক্ত করতে পারে না, অথচ পরোক্ষ ভাবে তার ভালোবাসা কিন্তু মায়ের ভালোবাসার থেকে নেহাৎ কম নয়।
ঠিকই ধরেছেন আমি কথা বলছি বাবাকে নিয়ে।"বাবা"এই ডাকটার মধ্যেই একটা অদ্ভুত টান আছে। যে টানটা কিন্তু বাপি/পাপা/বাবু কোনো ডাকেই আমি অন্তত পাইনা।না না, অন্য কিছু নয় এটা অবশ্যই অভ্যাস। যাঁরা ছোটো থেকে যে নামে ডেকে অভ্যস্ত তাদের কাছে সেটাই প্রিয়।
আমার বাবা -
আমার বাবাকে নিয়ে আমি আগেও লিখেছি। খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। বাবা আমাদের কাছে বন্ধু, তবে মা ততধিক রাগী ছিলো। বাবা কোনোদিন বকেছে বলেও মনে করতে পারিনা, তবে হ্যাঁ মা কে দেখানোর জন্যে মাঝে মাঝে মিথ্যে মিথ্যে বকতো।
মিস করি সেই সব ফেলে আসা দিনগুলো। বিয়ের পড় হয়তো সবটা বদলে যায়, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে বদলটা যেন বড্ড বেশি। মায়ের চলে যাওয়া আমাদের সাজানো পরিবারটা কেমন যেন তছনছ করে দিলো। যেন কোনো দমকা হওয়ায় সংসারের শিকড়টা গোঁড়া থেকে উপড়ে গেলো।
বাবা, ছোটদি, আর মা-
এখন বাবাও বড্ড অসহায়, আর আমাদের বোনেদের পক্ষেও রোজ যাওয়া সম্ভব হয়না। খুব কষ্ট হয়, বাবাকে আসতে বলি প্রায়ই, কিন্তু বুঝতে পারি স্বচ্ছন্দ বোধ করে না, হাজার হোক মেয়ের শশুর বাড়ি তো?
বহুবার বলেছি জীবনটা নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে, কিন্তু ওই যে, এখনও সেই পুরোনো ধ্যান ধারনা নিয়েই বাঁচে। কিছুতেই রাজী হয় না। এই ভাবে কী সারাজীবন কাটানো সম্ভব?হয়তো আমাদের কথা ভেবেই এতো কষ্ট সহ্য করছে। এটাই বাবার ভালোবাসা।
আমরা প্রত্যেকেই মায়ের কথা বলি, কত কষ্ট করে মা জন্ম দিয়েছে সেই গল্প করি,ভুলে যাই শুধু সেই মানুষটার কথা বলতে, যার প্রতিদিনের লড়াইয়ে আমরা একটু একটু করে বেড়ে উঠেছি।যে মানুষটা দিন রাত শুধু পরিশ্রম করে যাতে আমরা একটু ভালো থাকি। এমনকি নিজের কত ভালো লাগা অনায়াসে ত্যাগ করে,শুধু আমাদের সখ পূরণ করার জন্য।
অথচ আজকাল বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যাঁদের সন্তানরা বিদেশে থাকে তাদের ভিড় বেড়ে চলেছে দিনে দিনে। জানিনা কেন তারা ভুলে যায়, আজ সে সন্তান হলেও, কাল সে কিন্তু বাবা হবে।
নচিকেতার "বৃদ্ধাশ্রম" গানটা শুনলে শরীরের সমস্ত লোম খাঁড়া হয়ে যায়। কি অপূর্ব গানের কথা গুলো। কি বাস্তবমুখী গান। আপনারও শুনেছেন নিশ্চয়, গানটা আপনাদের কেমন লাগে জানাবেন।
যাইহোক,সবশেষে বলতে চাই, যতটুকু সম্ভব নিজের বাবা মা কে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন। ওদের চাহিদা বড্ড কম,আমাদের থেকে কিছু না, একটু ভালোবাসা, একটু যত্ন, আর আমাদের ব্যস্ততম সময় থেকে একটু সময় চায় ওরা।
কোনো এক জন্মদিনে মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে বাবার কোলে তিতলি -
আধুনিক যুগে আমরা ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ কে বেশি সময় দেই, কিন্তু এটা ভুলে যাই যাঁদের জন্য এই পৃথিবীতে আসা, যাঁদের জন্যে এই সবকিছুর সাথে পরিচিত হওয়া, তাদেরকেই পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চলেছি। ঠিক এইভাবেই আমাদের সন্তানরাও একদিন এগিয়ে যাবে আমাদের পিছনে ফেলে।
শুধু এইটুকুই বলার, আপনারা সবাই ভালো থাকুন,পরিবারকে ভালো রাখুন।শুভরাত্রি।
@eturnerx Thank you for your support 🙏.