প্রিয়,
পাঠকগণ,
কেমন আছেন আপনারা সবাই?
আশাকরি আপনি ও আপনার পরিবারের সকলে সুস্থ আছেন।
আজ কাল আমরা সবাই গৃহবন্দি।চাইলেও ইচ্ছেমত বাইরে বেরোতে পারছি না। মন চাইছে ছুট্টে বেরিয়ে যেতে শান্ত পরিবেশে,খোলা হাওয়ায়, মুক্ত আকাশে যেখানে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারবো। না থাকবে social distance মানার বিধিনিষেধ, আর না থাকবে মুখে মাস্ক।
জানি আমার মতন এমন ইচ্ছে আপনাদেরও হচ্ছে, তবে এটাও সত্যি অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হলেও বর্তমানে এটা শুধুমাত্র স্বপ্ন।তবুও এমন একটা দিনের অপেক্ষায় গোটা পৃথিবী দিন গুনছে।
আজকাল প্রতিটা দিনই প্রায় একই রকম কাটছে। আসলে বাইরে বেরোনো না হলে নতুন অভিজ্ঞতা,নতুন ঘটনা কিছুই ঘটে না জীবনে। তাই যেন আজকাল সব কিছুতেই পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে।সময়ের অভাবে যে স্মৃতি গুলো মনের কোনো কোণে চাঁপা পড়ে গেছে।
এমনই একটা দিন ছিল সেদিন।আসলে পূর্ণিমা রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে ভীষণ ভালো লাগে। তবে আজকাল টিভি, মোবাইলে আমরা এতো ব্যস্ত থাকি যে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার ও সময় নেই। তবে সেদিন current ছিলো না। আর গরম ও পড়েছিল। তাই মোবাইল হাতে নিয়ে ছাদের গেলাম।
ছাদের দরজা খুলতেই মনটা খুশী হয়ে গেলো।সেদিন পূর্নিমা ছিলো জানতামই না। আমি,আর শুভ বসে ছিলাম।গল্প করতে করতে হটাৎ পুরোনো একটা পূর্ণিমা রাতের কথা মনে পড়লো।
কোপাই (বীরভূম)এ ছোটোদিদার বাড়িতে আমরা একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম।আমাদের সম্পর্ক তখন সবে সবে শুরু হয়েছে।আমার যিনি ছোটোদিদা তিনি আবার শুভর পিসি হন।যদিও আমরা প্ল্যান করেই
একই সময় গিয়েছিলাম। দুদিন আগে পড়ে।তবে বিষয়টা এমন ভাবে ঘটানো হয়েছিল যেন আমাদের যাওয়াটা একটা co-incidence মনে হয়।
সেই সময় পূর্ণিমা ছিলো।কোপাই শান্তিনিকেতন থেকে একটা স্টেশন পরে।মাঝের স্টেশনের নাম প্রান্তিক।
কোপাইতে তখনও কারেন্ট সেই ভাবে আসেনি। গ্রামে দু একটা বাড়িতে তখন current ছিলো।
দিদাদের মাটির দোতলা ঘর ছিল। সিড়ি যদিও লোহার ছিলো,কারণ আমার মামার লোহার কারখানা ছিলো। তাই মামা নিজেই সিড়ি বানিয়েছিল।দিদা আমাকে আর ভাইকে(মামার ছেলে) কে নীচের ঘরে শুতে দিয়েছিল। আর দোতলায় শুয়েছিল শুভরা। শুভর সাথে ওর মাসীর ছেলে, আর একটা বন্ধু গিয়েছিল। ওরা তিনজন আর ছোটমামা,মোট এই চারজন ওপরে শুয়েছিল।
সেদিন ওই বিষয়েই গল্প হচ্ছিল তাই আমিও শুভকে বললাম - "সেদিন তোমরা এতো লাফাচ্ছিলে ওপরে,যে নীচে আমাদের গায়ে মাটি পড়ছিল।"শুভ আমায় বললো -" তখন বলোনি কেন?"
বিশ্বাস করুন সত্যিই তাই এত বছর পরেই কিন্তু কথাটা উঠলো, এর আগে যখনই কোপাই ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে কেন জানিনা এই কথাটা কোনোদিন বলা হয়নি। বেশ হাসাহাসিও হলো বিষয়টা নিয়ে।
আসলে তখন বলতে পারিনি, কারণ তখন শুভর সাথে আমি ফ্রী ভাবে কথা বলতে পারতাম না। একটা জড়তা কাজ করত সবসময়। কারনটা আমি নিজেও জানিনা।
যাইহোক,দোতলায় অনেক হওয়া লাগে। কিন্তু নিচের ঘরে একটুও হাওয়া ছিলো না। ভাইয়ের অভ্যাস ছিলো ও কখন যেন ঘুমিয়ে গিয়েছিল।কিছুক্ষন বাদে শুভ ফোন করলো। ফোন তুলে ভয়ে আমি কোনো কথাই বলতে পারছিলাম না, কারণ ভাই পাশে শুয়ে ছিলো।
শুভ বললো জানালার পাশে এসো। খুব সাবধানে উঠে গেলাম। ও ঘরের বাইরে আর আমি ভেতরে।বাইরে চাঁদের আলোয় চারিদিক আলোকিত। ভীষণ সুন্দর ছিল রাতটা,মাঠের পর মাঠ ধানের ক্ষেতে চাঁদের আলো পড়ে চিকচিক করছে। হাওয়ার গাছের পাতা নড়ছে,চারিদিক নিস্তব্ধ।
সে এক অন্য পরিবেশ ছিলো,যা ভাষায় ব্যক্ত করা খুব কঠিন। শুভ অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। কথা হয়নি খুব বেশি তবুও যেন অনেক কথা হয়েছিল নিস্তব্ধতায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে শুভ ওপরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আর আমিও কি যেন ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভীষণ ভীষণ ভালো রাত ছিলো সেটা। তবে আজকাল আর এমন ভাবে জোৎস্না দেখা হয় না। এই কথাই হচ্ছিলো সেদিন দুজনের।আসলে সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই পাল্টে যায়। তবুও মাঝে মধ্যে ইচ্ছাকৃত হোক বা ঘটনা চক্রে সেই সব দিন মনে পড়লে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে মুখে। সেই গল্প করতে করতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল।নীচে এসে খাওয়া দাওয়া করার সময় current এলো। ব্যস তারপর আর কি?আবার সেই আগের জীবন,একই রুটিন।
এই তো জীবন।সময়ের ফাঁকে কিছু পুরোনো সময়ে ফিরে যাওয়া।আপনারাও শেয়ার করবেন আপনাদের এমন পুরোনো সময়ের গল্প।
ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন,সাবধানে থাকবেন।
শুভরাত্রি
Congratulations @sampabiswas! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next payout target is 1000 HP.
The unit is Hive Power equivalent because your rewards can be split into HP and HBD
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!