ইদানিং বড়ই ডিপ্রেশনে আছি বলে অনুভব হচ্ছে। মাঝে মধ্যে মনে হয়, না ঠিকই আছি, আবার কখনো কখনো আবছা মনোঃকষ্ট টের পাই। পেটে প্রজাপতি বা খরগোশ প্রজাতির কিছু একটা দৌড়ুচ্ছে বলে মালুম হয়। চোখ ঘোলা, পায়ে দুর্বলতার দোলা, মাথায় ব্য়াথা, ইত্যাদি মাঝেমধ্যে এসে ঘুরে দেখা দিয়ে যায়।
তবে, এবারের এই মৌসুমি মনোঃকষ্টের কারন কোহাই নামের হাইভে সদ্যজাত এক মহিলা। ইনি এসে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন আমি বাংলা লেখা পারি না। আমার লেখা ভর্তি টাইপো, অলংকারের নামে ছ্যড়াব্যড়া, আবার সাথে শব্দভান্ডারে যথেষ্ট দৌড়ও নাই। এই কোহাই আমার মাত্রাতিরিক্ত স্ফিত অহংকার ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন। আমাদের নিজেদের দেয়া “ নেংটুকালে পড়া স্মরণীয় বই ” নিয়ে একটা কম্পিটিশান চালু আছে। বাংলায় বড়ই আবেগি লেখা লিখে, দাদার (কোহাই এর সেম্পাই) মন জয় করে টাকা লুটে নেবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাড়া ভাতে কষা বিষ্ঠা পোড়া ছাই মেরে দিয়েছেন ফাজিল কোহাই। এই বোশেখ মাসে ইফতারের আগে আগে কড়া করে শাপ দিয়ে দিচ্ছি কোহাই, আপনার জামাইয়ের মাথায় টাক হবে।
যে যাই হোক, এখন কিছু ভোট প্রাপ্তির আশায় আশায় (পড়ুন ভ্যালিডেশান প্রাপ্তির লোভে) কন্টেস্ট সাবমিশান লিখে ফেলেছি। জিতি হারি লাজ না নেব, ভোট নিয়ে দৌড় যে দেব। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
সত্য কথা বলতে গেলে কি আমার ছোটবেলা অনেক একাকীত্বে কেটেছে। বয়স হবার আগেই মাদরাসা, স্কুল সহ ৫-৬ টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হয়ে গেছে। আমার আব্বার মনে হয়েছিল মাদরাসায় পড়া লেখা করায়ে হাফেজ বানাবেন, তাই স্কুল থেকে তুলে নিয়ে ক্লাস টুতে থাকতে মাদ্রাসায় দিয়ে দেন। বছর তিনেক পার হবার আগেই আবার নতুন করে আমার আম্মাজানের মনে হল আমি জেনারেল লাইনেই ভালো করবো, তাই ধর্মীয় পড়ালেখায় ভেটো দিয়ে তুলে নিয়ে এক ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। পুরো একযুগ ধরে চলা আমাকে নিয়ে খেলা ফুটবল ম্যাচের কারণে আমার সোশ্যাল স্কিলস মাটিতে মিশে গেল। কোথাও গিয়ে বন্ধু বানানোর দক্ষতা আর পুরোপুরি তৈয়ার হয়ে উঠলো না। ঠিক এই একটা কারনে আমার বই পড়া শুরু হয়। একাকীত্ব কাটানোর এরচেয়ে সস্তা মাধ্যম সেই সময়ে বই ব্যাতিত আর তেমন ছিলো না।
আমি গল্পের বই পড়া শুরু করি তিন গোয়েন্দা দিয়ে। ভিশন অরণ্য এর দুইখন্ড পড়া শেষ আমার কেজিতে ভর্তি হবার আগেই। বড় বোনের কাছে বন্ধু, ভাই সব আমি ছিলাম। তিনি স্কুলে ভর্তি করার আগে আগে আমাকে সাবলীল ভাবে বাংলা পড়া শিখিয়ে দেন। তিন গোয়েন্দা, সাথে কিশোর আলো আর রহস্য পত্রিকার মাঝে পড়া আমার প্রথম কঠিন বই ছিল শার্লক হোমস অমনিবাস সেও ক্লাস টুয়ের আগে।
এই বই আমার সাথে বড় হয়েছে। ১৯৯৪, কোলকাতা প্রিন্ট এর ভার্শন এই অখন্ড অমনিবাস আমার আপুর জন্মদিনের উপহার ছিলো, আমি পড়া শিখে ফেললে পরে তিনি আমাকে দিয়ে দেন। কোলকাতা প্রিন্ট হওয়াতে বর্ডারের ওপার বাংলার স্টাইলে লেখা খেলুম বসলুম চললুম লেখা বইটা আমার অনেক অনেক পছন্দ হয়ে গেছিল। পরবর্তিতে যেখানে যেখান গেছি অথবা ছিলাম, হোক তা হোস্টেল বা নানু বাড়ি শার্লক সবসময় আমার স্কুল ব্যাগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকতো।
শার্লককে ইংরেজ কম, বাঙ্গাল মনে হত বেশি। ২২১ বি বেকার স্ট্রিট বিলাতে না হয়ে হাওড়া ব্রিজের পাশে কোন এক চিপা গলি বলে মনে হত। আর লন্ডন ছিলো আমার কাছে কোলকাতা। ডয়েলের শার্লকের পাশে ওয়াটসন হয়ে কত অপরাধিকে যে দাবড়ে বেড়িয়েছি তার হিসেব নেই।
দিন নেই রাত নেই, কল্পনায় একটা অপরাধ, একটা জটিল হালচাল সাজিয়ে ডিডাক্টিভ রিজনিং প্রাক্টিস করতাম। খেলনা নিয়ে ক্রাইম সীন বানাতাম। বাশের কঞ্চি দিয়ে তামুক খাবার পাইপ বানাতাম। আমার তিন বোনকেই এই খেলায় অংশ নেবার জন্যে বিরক্ত করতে গিয়ে কত কত কিল ঘুসি খাওয়া পরতো। কিন্তু এসব করতে করতে আমার একা থাকার সময় অনেক ভালো কেটে যেত।
মুল পাঠ্যবই এর বদলে “আউটবই” পড়ায় বেশী সময়ক্ষেপনে মাধ্যমিক পরিক্ষার রেজাল্ট অনেক খারাপ হয়ে যায়। বন্ধুদের সবার মার্কশীটে সোনালী পাঁচ জ্বলজ্বল করে, আর আমারটায় গুবরে চার। আমার সহোদর বড় ভাই এই নিয়ে রেগে মেগে একদিন পুরো ছয়শ পাতার অমনিবাস ছিড়ে অর্ধেক করে দেয়। টেবিলের উপরে সযতনে সাজিয়ে রাখতাম আর বছর ঘুরলে একবার কওরে খতম দিতাম। এতো মোটা একটা বই ছেড়া কিন্তু যার তার কম্য না। অমানুষিক শক্তির দরকার পরে, আর রাগের মাথায় ভাই সেই অমানুষিকতাই দেখিয়ে দিলো। আম্মাও ভাইয়ের সাথ নিয়ে ছেড়া পেজ সব ঝেটে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন। আমি পরে সব কুড়িয়ে এনে লুকিয়ে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম।
এসব ঝড়ঝাপ্টা যাবার পরে একদিন সব পাতা পাজলের মত মিলিয়ে মিলিয়ে ক্যলেন্ডারের কাগজের বানানো মলাটে আবার বাঁধাই করে নিয়েছিলাম নিজেই। মলাটের ওপরে ভাঙাভাঙা ক্যালিগ্রাফির আদলে শার্লক হোমস অমনিবাস, আর্থার কোনান ডয়েল লিখে সম্পুর্ন শেষ করতে আমার লেগেছিল দুদিন। কিন্তু এরপরে বইটা আর দুই মাসও টেকেনি। এলাকার এক ভাই পড়ার জন্যে নিয়েছিলেন। ফেরত আনতে যখন গেলাম, দুয়েকবার ঘুরিয়ে পরে বললেন যে, ভাইয়ের বাবামা তার অনুপস্থিতিতে ফেরিওয়ালার কাছে কেজি দরে বেচে দিয়েছেন। তার বাবামা ও “আউটবই, খারাপ বই” রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই কম্ম্যের জন্যে তাদের কাউকেই এখনো আমার মাফ করা হয়ে উঠেনি, হয়তো হবেও না।
এখন অপরাধবিজ্ঞান নিয়ে আমার পড়াশোনা, কিছুদিন পরে স্নাতকোত্তর ফাইনাল, ব্যাস, সাথে পড়াশোনাও শেষ। মজার বিষয়টা হচ্ছে যে, আমার এই পড়ালেখার মুল্য ওই ভাইয়ের বাবামা বইটা বেচে যা পেয়েছিলেন তার চেয়েও কম। আমার সার্টিফিকেট কেজিতে বেচে দিলে মুল্য ২ টাকা হবে না। কিন্তু শার্লককে নিয়ে লিখে আমি ঠিকই পয়সা কিছু কামিয়ে নিচ্ছি, যা আমার সার্টিফিকেট দিয়ে এখনো পারি নি। আর পারবো ও না বলে মনে হচ্ছে। দিনশেষে আউটবইও যেই কেজিতে বেচা পরে, পাঠ্যবইয়ের পরিমাপ ও ওই একই দাঁড়িপাল্লার কেজিতে হয়।
Source
শার্লকের নামের সাথে খুব ছোটবেলায় পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু তখন তেমন একটা বই পড়া হয় নাই। কিশোরবেলায় বই পড়ার সময়টুকুতে আমি তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য বাস্কারভিলের হাইন্ড এর মাধ্যমে শার্লক হোমস এর জগতে চলে এসেছিলাম।
বাস্কারভিলের হাউন্ড যতটুকু না রহস্য তার থেকে বেশি এডভেঞ্চার নিয়ে লেখা বই। ডয়েলের শার্লক ছাড়াও কিছু লেখা আছে। সময় পেলে পড়ে নিয়েন।
oreehh!! tumi banglao onk valo lekho!! mashaAllah!! ajke duijoner content e almost same genre!!
কি যে বলো! টাইপো দিয়ে ভর্তি! এমন অবস্থা আমি ধরতেও পারতেসি না যে কোন বানানটা ভুল :P বাংলা পড়া ছেড়ে দিলে যা হয় আরকি😞
আন্দাজে, ঠিকই আছে। দুই একটা স্পেসেইং এ সমস্যা দেখলাম, আর সব ঠিকই আছে
ওটা ঠিক করতে পারি না। এই প্লাটফর্ম বাংলা পছন্দ করেনা। বাংলায় লেখা মানে বিদ্রোহ করা!
😒😒
শাপ দিলে শাপে বর হয় সবসবময়। সুতরাং রমজানে কবুল হোক দুআ। 🤗
আজকে বিরিয়ানি খেয়ে আরাম পেলুম। এলাচি পড়ে নাই দাঁতের ফাঁকে।
তবে এখন আমিও ভাবছি আসলে অনুবাদ হিসাবে ওপার বাংলার শার্লক পড়লে মজাই লাগবে মনে হচ্ছে। এমনিতেও ওদের একসেন্ট আমার ভারী মজা লাগে। আর গল্পটা বড়ই হৃদয় বিদারক। সম্ভবত বেশী খারাপ লাগলো নিজের সিমিলিয়ার অতীত মনে পড়ে যাওয়ায়।
যেন আর কেউ ইংরিজি পড়ে না 😒 " Stop giving excuse"- Dialouge source @azircon 😶
(স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়োনা কিন্তু তাও ভালো রেজাল্ট করলে পরীক্ষার খাতা নিতে যাবার সময় উনি যেভাবে বলে, সেই টোনে) ভালো হয়েছে, তবে আরো ভালো করতে হবে 😒
না না! এটা শাপ ই! টাক ই পরবে আপনার কপালে! তাছাড়া টাক কি খারাপ নাকি? টক্সিস্ট পিপলজ!😏
ওভারঅল পড়া কমে গেসে এই আরকি 😑 ওইভাবে মীন করি নাই!
ওয়াকাত্তা সেনসে। আরিগাতো!
বাইদাওয়ে, আমার আপু আমাকে পড়ানোর জন্য বই চুরি করতো। বেচে নাই এখন আর, এগুলা রয়ে গেছে আরকি। তাই মাইরের কথা মনে পরলে এখন আর খারাপ লাগে না তেমন।😅
মর্মাহত হইলাম শুনে। আল্লাহ আত্মার শান্তি দিক।
তোমাদের সেইসব বইচুরির আর পড়ার গল্পটাও একদিন শোনাও তবে যদি সম্ভব হয়।
মানুষিক টানাপোড়েন লেগে যাবে সেটা নিয়ে আবার লিখতে গেলে।। একবার লিখেছি যদিও।
I can understand. That's why I said if you can.
Where did you write? can I see?
you can apu. But the post is so long back, i dont actually remember which one was about all that. ill find it and give it to you in the DMs perhaps.
My bengali is messed up now. I am not saying it was better earlier, but at least it was fluent. Now the problem is I can think alright, but can't write what I think properly. Also, I feel that I am always rushing, its a terrible feeling!
it is a terrible feeling really! even more so when you are a habitual reader, you live around the literature and still have a tough time getting your word through! sigh!
আর এসব "বাংলা না লিখতে পারা" লেখা দেখে বাংলা লিখতে ভয় পাওয়া আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই :)
মৌ আপু তোমার কোন লেখাকেই এলাচ বলবে না!:3 ভয় নাই!
আমার লেখা এলাচই। মনে করার কিছু নাই :'3
আহা! এত বিনয়ী হয়ে কি লাভ বলতো!
বিনয়ী কোথায়? সত্য বলছি...
আপনি তো দেখি গর্ভাবস্থা থেকেই বই পড়ুয়া। আপনি যে সময় তিন গোয়েন্দা হাতে নিয়ে খতম করেছেন সে সময় আমি লাল রংয়ের হ্যাংলাদুগ্লা আদর্শ লিপি নিয়ে চিৎকার করতাম আ তে আকার।
কষ্ট পেলাম আপনার সেই ভালোবাসাটাকে অন্য কেউ কেজি দরে বিক্রি করে দিয়ে কট কটি খেয়ে নিয়েছে।
অবশ্যই মাফ করবেন না, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে বসেছে।
বুঝে পড়া অনেক পরে থেকে। কিন্তু বই পড়া সেই কেজির আগ থেকেই।
মাঝেমধ্যে এলাকায় সেই ভাইকে দেখি। মাথা নামানো থাকে।
তাহলে সেই ভাইটা তার অপকর্মের জন্য লজ্জিত।
এইরকম অভিশাপ দিয়ো না মানুষরে। টাক পড়া খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অচ্ছুৎ হয়ে যায়।
কি অচ্ছুৎ! আমার চোদ্দগুষ্ঠির তেরগুষ্ঠি টাক মিয়া! আমার বাপে হুইদ্দ্যা টাক!
অভিশাপই তো দিলা তারপরেও।
ড্যটস আ জুক মান! আমার ও টাক হইতে বেশিদিন বাকি নাই।