একটা সময় ছিলো। বয়স তখন ১৭-১৯ হবে। যখন খাইতাম ফিরতাম আর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যাস্ত থাকতাম। কখন কোথায় অনুষ্ঠান হচ্ছে, কোথায় প্রোগ্রাম হচ্ছে, কোথায় ঘুরতে যাবো এগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। প্রেম কি বুঝতাম না। শুধু বুঝতাম প্রেম করলে মেয়েদের অনেক কাছে যাওয়া যায়। অন্যরকম একটা ফিলিংস লাগে। এরকম চলতে চলতে হঠাৎ একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাই। যেটি ছিলো লাইফের প্রথম অভিজ্ঞতা। মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করলো মেয়ের প্রতি দূর্বলতা। আস্তে আস্তে কমিয়ে যেতে শুরু করলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুড়াঘুরি ফান ইত্যাদি। ধ্যানে গ্যানে তখন ঐ মেয়েই ছিলো। কেউ যদি আমারে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পচাইতো, আমিও আবেগে তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করতাম নয়তো ঝগড়া করতাম। এরকম চলতে থাকে ৮ মাস।
আমি ভুলেই গেছি বন্ধুরা কি জিনিস, আড্ডা কি জিনিস। অতি আবেগ তখন। অপরদিকে গার্লফ্রেন্ড নামক ঐ প্রাণীর সাথে কথা বলতে ভালোই লাগতো, সেও ফুল টাইম দিতো আমায়, আমিও দিতাম। কেমন যেনো একটা আকর্ষণ। তখন আর বন্ধুদের সাথে হাসি না। একা একা ফিস ফিস করি একা একাই হাসি। এর মাঝে আমাদের দেখাও হইতো। একসঙ্গে কিছু সময় কাটানোও হয়। এভাবে চলতে চলতে অতি আবেগে একদিন সকাল বেলা দেখা করতে যাওয়া। এমন একটা অবস্থা যদি না দেখা করি তাহলে সে গলায় দড়ি দিবে, অলরেডি হাত কেটেছে। কি আর করার, ভোর শেষ হইতেই কুয়াশার মধ্যে ছোট ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে দৌড় স্কুলে। সে আসলো। আবেগে আপ্লূত হয়ে জরিয়ে ধরলো, কান্না করতেছে। আমি আমার মতোই। এমতবস্থায় স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়া এক বুড়ি মহিলা কান্না আর কথার আওয়াজ শুনতে পায়।
তড়িঘড়ি করে সে পাড়ার ছেলেদের খবর দেয়। ছেলেরা ২ জন আসে এবং আমাদের একসাথে সকালে স্কুলের মধ্যে দেখতে পেয়ে অন্যরকম মাইন্ড করে। ছেলে ২ টা আমাকে চিনতো বলে কওছু করার সাহস পায়না। লুকেচুপে মেয়ের বাড়িতে খবর পাঠায় এবং মেয়ের মামা আসে। মামার বাড়ি স্কুল পাড়াতেই। ততক্ষণে আমরা ওখানেই। মামা আসলো, এসে কোনো কথাবার্তা ব্যতিতই আমাকে মারধোর শুরু করে। আমি বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনোভাবেই বুঝবে না উনি। বেশ ভালো কথা, আমি তারপরেও বললাম আংকেল আমরা কোনো কিছু করিনি শুধু দেখা করতে এসেছি প্রাইভেট টাইমে। সে বুঝলো না। অবশেষে মেয়ের পরিবার এবং ঐ এলাকার লোকজন সবাই যেনো গেলো এবং ভুল বুঝলো।
আমার পরিবারের কানেও কথা এসেছে। আবেগ কেটে যেতে শুরু করলো। মনের মধ্যে আগুন জলা শুরু হইছে। মেয়ের সাথে আর কথা হয়না। অপরদিকে ওর মামা আমাদের এলাকায় আসতো। ঘটনার ঠিক ২ দিন পর ওর মামা কে এলাকায় পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে একচের ঝগড়া মারামারির দিকে রুপ নেয়। পরে শান্ত হলাম। নিজেকে মেনে নিলাম। কেটে গেলো ২ মাস আর কথা হয়না। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠলাম। মেয়ে মাঠে ২-১ বার অন্য কারো ফোন পাইলে লুকেচুপে কল দিতো। ততক্ষণে ভিতরে ক্ষয় হয়ে আবেগ কেটে যাওয়া শুরু হইছে। ঠিকঠিক এভাবেই কথা হয়না, আস্তে আস্তে আমাদের ভিতরে দূরত্ব বেড়ে যায়। অপরদিকে মেয়ের ফ্যামিলি থেকে নিষেধ করা আছে আমার সাথে কোন ধরনের কন্টাক্ট করা। মেয়ে তারপরও কল মেসেজ দিতো মাঝেমাঝে। বাট অনেক টা পরিবর্তন হয়ে। ঠিল এভাবেই দূরত্ব থেকে ভালোবাসা নামক ঐ আবেগ টাও শেষ হয়ে যায়।
এখন শুনছি সে নাকি অন্য কোথাও প্রেম করে, বেশ ভালোই দিনপত কাটাচ্ছে। আবার শুনছি এন্ড্রয়েড ফোনও কিনে দিছে বাবায় এসাইনমেন্টের নামে। সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে ওর। মাঝখানে আমাকে ভুলে গিয়ে।
এখন মনে হয় আসলে, ঐ সময়টা যদি নিজেকে কন্ট্রোল করে আবেগি না হয়ে বাস্তবতা বুঝতাম। স্কুলে, লেখাপড়ায় ফোকাস দিতাম। বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতাম। অনেক দামি দামি অভিজ্ঞতা পাইতাম আর জ্ঞানের উন্নতি হইতো। কমবেশি প্রায় সবার জীবনেই এরকম ঘটনা ঘটেছে, কারো কারো কৈশরে, কারো যৌবনে, কারো প্রাপ্ত বয়সে।
এখন অনুধাবন করি, কেমন ছিলো সেই সময় গুলো। ভাবলেই একদিকে কষ্ট লাগে, ঘৃণা লাগে, আফসোসও হয়। বাস্তবতা বুঝতে শুরু করেছি আমি এই ঘটনাগুলো হবার পরে। যখন সবাই বুঝানো শুরু করলো আমায়, বন্ধুরা সময় দিতো, খেলাধুলা করতাম। দিন-দুনিয়া বুঝতে শুরু করলাম। এখন মোটামুটি একটা পর্যায়ে রয়েছি, যেখানে আবেগের কোন মূল্য নেই। আবেগ দেখিয়ে কিংবা আবেগি কথাবার্তা যেনো কচু পাতায় পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Who am I?