লেখালিখির অভ্যাস ছিলো ছোটবেলা থেকেই। আর স্বাভাবিক, বাচ্চাকালের রক্ত থাকে গরম, লেখাতেও তার আঁচ থাকতো। বেশকিছু মাসিক পত্রিকায় তা ছাপার হরফেও আসতো। আর কলেজের বার্ষিকীতে কবিতা আসা তো ছিল নিয়মিত ঘটনা।
একবার এক স্যার তাঁর পত্রিকার জন্য একটা লেখা চেয়েছিলেন। তৎকালীন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে কবিতাটা লিখেছিলাম, সেটা স্যার পড়ে বলেছিলেন, 'বাপ, এই কবিতা যদি আমি ছাপাই, তাহলে আমার চাকরি থাকবে না, আর তোমার জীবন থাকবে না।'
তো এই কথা আমার বাসা পর্যন্ত এসে যায়। উপরের নির্দেশ আসে লেখা যাবে না। আমি মেরুদণ্ডহীন এক কাপুরুষ, লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। উপরের মহলের নির্দেশে শুধু লেখাই নয়, ছবি আঁকাটাও বাদ দিতে হয়েছে। কী এক আপদ, উপরের মহল তাতেও সন্তুষ্ট নয়! কী করা যায় বলেন তো!?
যাক সে সব কথা। সেসব এখন অতীত। এই যে দেশের এখন যে ক্রান্তিকাল, এখনও আমার উপরমহল থেমে থাকে নি। আবারো নেমে এসেছে নির্দেশ, 'খবরদার কিচ্ছু লেখা যাবে না। কোথাও যাওয়া যাবে না।'
আগেরবার যে কবিতাটা বাঙলা ছাড়ো এখানে দিয়েছিলাম, সেটাও ফেসবুকে না দেয়ার নির্দেশনা নেমে এসেছিলো।
সেই যে লেখা বন্ধ করেছিলাম, তার বহুদিন পর, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে নিজের অক্ষমতার জন্য এটা লিখেছিলাম। তারপর কেটে গেছে আরো বহুদিন! এখনো লিখতে পারি না আমি। আসলেই পরিণত হয়েছে একটি কীটে!
যেহেতু নিজের লেখা, সেহেতু আর প্লাজারিজমের ভয় নেই। তাই লেখাটা এখানেও দিলাম।
কাপুরুষ
না বলা কথাগুলো বলামাত্রই
শুরু হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
এবং অবধারিত ভাবেই
ধ্বংস হয়ে যাবে এ পৃথিবী
না লেখা কবিতাগুলো লেখামাত্রই
বিশ্বের সকল শাসকগোষ্ঠী
একযোগে তাদের সকল বাহিনীকে
পাঠিয়ে দেবে আমাকে হত্যার জন্য
নারকীয় তান্ডব শুরু করে দেবে তারা
ছারখার করে দেবে এ পৃথিবীটাকে
না গাওয়া গানগুলো গাওয়া মাত্রই
বিশ্বের সকল শোষিত মানব
তীব্র ক্রোধে ফুসে উঠবে
শাসকের অত্যাচার আর অনাচারের বিরুদ্ধে
শুরু হয়ে যাবে এক মহাযজ্ঞ
লাশের পাহাড় বাড়তে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না
পৃথিবীর সকল মানুষ শেষ হয়ে যাচ্ছে
এর কোনটাই পৃথিবীর জন্যে সুখকর নয়
আর তাইতো
আমি কোন কথা বলিনি,
লিখিনি কোন কবিতা,
গাইনি কোন গান
শুধু দেখে গেছি সব
আর নিজেকে ধিক্কার দিয়েছি বারবার
নিজের বলতে চাওয়া কথাগুলো
বলেছি নিজের সাথে
নিজের না লেখা কবিতাগুলো
পড়ে শুনিয়েছি নিজেকেই
নিজের গানগুলো আপনমনে
গুণগুণ করে গেয়ে গেছি
মেনে নিয়েছি নিয়তিটাকে
আর আজ যখন প্রতিনিয়ত
সারা পৃথিবীর কাছে
পরিচিত হচ্ছি আমি কাপুরুষ নামে
মেরুদন্ডহীন মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে
তখন চিৎকার করতে ইচ্ছে হয় আমার
ইচ্ছে করে ধ্বংস করে দিতে
এ পৃথিবীটাকে
কিন্তু আমি যে তা করতে পারিনা
কারণ আমি যে আসলেই কাপুরুষ
taken from facebook
ইউটিউবেও লেখাটা দিয়েছিলাম বেশ অনেক আগে। আপনাদের জন্য এখানে দিলাম।
Congratulations @walindo! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 7000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out our last posts: