সাজেক ভ্রমণ - মেঘের দেশে হারিয়ে যাওয়া (Dive into the cloud---SAJEK )

in BDCommunity4 years ago (edited)

IMG_20190802_171348.jpg

আমরা ১০ জন, একসাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ১ নং গেট থেকে সাজেক এর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেই। আমরা সাধারণত প্রত্যেক বন্ধের আগে একটি করে টুর দেই, সেবারো তার ব্যতিক্রম হয় নি, তবে এবার এর স্থান ছিলো সাজেক - মেঘের দেশে।

20190802_081136.jpg

সকাল ৭ টা বাজে রওনা দিয়ে ১২ টা নাগাদ দিঘীনালা পৌছাই। সেখান থেকে চান্দের গাড়ি (জিপ জাতীয় বাহন) ভাড়া করতে হয়। ঐ অঞ্চলের নিরাপত্তাজনিত কারণে বেশীরভাগ অঞ্চল্টাই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীর পেট্রোল দল প্রত্যেক দিন সকাল ৯ টা এবং দুপুর ৩ টা বাজে দর্শনার্থিদের বাহন (মোটর সাইকেল, সিনজি, চান্দের গাড়ি, প্রাইভট কার) গার্ড দিয়ে সাজেক পৌছে দেয়।

20190802_161159.jpg

আমাদের ভাগ্য কিছুটা ভাল ছিলো, কেননা আমরা দিঘীনালা নেমে সাথে সাথে খুবই কম পয়সার মধ্যে একটা চান্দের গাড়ি ঠিক করতে পেরেছিলাম। আমরা চান্দের গাড়ি নিয়ে ৩ টা বাজে সেনাবাহিনীর পেট্রোল দলের সাথে রওনা দিলাম। বলতে গেলে সাজেক ভ্রমণের ৫০% মজাই হচ্ছে দিঘিনালা থেকে সাজেক ভ্যালি পর্যন্ত, কেননা এ এক আলাদা অনুভূতি। শুরুর দিকে কিছুটা ভয় কাজ করে, কারণ এই আকাবাকা-উঁচুনিচু রাস্তায় যেভাবে গাড়ি চালায় মনে হয় এই বুঝি গাড়ি টা উল্টে গেলো বা খাদে পরে গেলো। সবচাইতে ভয় হয় যখন এক পাহাড় এর উপর থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার সময়, অনেকটা রোলার কোস্টার এর অনুভূতির মত। এখানকার ড্রাইভার রা খুবই সাঙ্ঘাতিক ধরনের পারদর্শি। যদিও আপনার মনে হবে যে সে বোধ হয় "Mad max" এ গাড়ি চালাচ্ছে, পুরা রাস্তা তেই আপনাকে কিছুটা ভয়, কিছুটা আনন্দ ও কিছুটা ক্রেজি ফিল করাবে। যাই হোক পুরা চান্দের গাড়ি ভ্রমণ এর ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছোট ব্রেক পাবেন।

20190803_161309.jpg

সবগুলো পাহাড়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতিই অন্যরকম, তবে সবচেয়ে ভয় এর পাহাড় হচ্ছে শেষ এর টা। সাজেক এর পাহাড়। উই পাহাড় এ উঠার আগে ড্রাইভার আরেক বার ব্রেক নেয় তবে তার বিশ্রাম এর জন্য নয়, গাড়ি ঠাণ্ডা করার জন্য। সে পর্যন্ত পৌছাতে অনেক গরম হয়ে যায় গাড়ি। সেখানে তারা পানি দিয়ে ঠান্ডা করে নেয় গাড়ি। তারপর শুরু হয় শেষ পাহাড়ে উঠা। এ যেন ৬০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়, চান্দের গাড়ি তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দেয় এখানে উঠার জন্য, এ এ অদ্ভত ভয়ঙ্কর অন্যভূতি। অবশেষে পৌছালাম একদম পাহাড়ের চুড়ায়। আহ! কি দৃশ্য, মনে হচ্ছে যেন মাট গুলো একটা আরেক্টার সাথে বারি খেয়ে ছোট ছোট পাহাড় তৈরী করেছে। মনে ইচ্ছা জাগে এ পাহাড় এর সাথে যেন মিশে যাই।

আমরা আগে থেকে কোনো মটেল ঠিক করে যাই নাই। পাহাড়ে উঠার পর আমাদের দক্ষ চালোক আমাদের একটা পরিচিত মটেল দেখিয়ে দিল। পরিচিত থাকার কারণে সে জায়গাতেও আমাদের পওয়সা খরচ কম হল। আর আমদের চান্দের গাড়ির ড্রাইভারকে যাওয়া এবং আসার জন্য ভাড়া করেছিলাম, সুতরাং থাকা, যাওয়া নিয়ে আর কোনো চিন্তা ছিলোনা। থাকার বন্দ্যবস্থ করে আমরা বেরিয়ে পরলাম সাজেকের সৌন্দর্য উদ্ঘাটনে। এ জায়গা যেন আমাদের সপ্ন কেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর এলাকার আওতায় থাকায় এলাকাটি খুবই পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি।

IMG_20190803_062031.jpg

আমরা ঘুরতে বের হওয়ার কিছুক্ষন পরেই একটা সুন্দর এবং সারা জীবন মনে রাখার মত একটি ঘটনা ঘটলো। আমরা ঠিক পাহাড়ের কিনারায় দারিয়ে আছি। আমরা পাহাড়ের নিচে তাকেয়ে ছোট পাহড় গুলো দেখছিলাম, হঠাৎ করে আমাদের এক বন্ধু চিৎকার করে বলে উঠলো উদিকে দেখ। আমরা সবাই বিশ্বয় এর চোখে তাকিয়ে আছি, দেখছি নিচের পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছে না আর মেঘের জন্য। সে কি এক অনুভূতি আমরা মেঘের উপরে দারিয়ে আছি। ছোট থেকে দেখে আসছি যে আমাদের থেকে কত উপরে এই মেঘ। এখন সেই মেঘের উপর দাঁড়িয়ে আছি, সাথে আরেকটা মেঘ এসে আমাদের মধ্যে দিয়া চলে গেলো। আমরাও আনন্দে পাগল হয়ে মেঘ ধরার চেষ্টা করলাম। তার কিছুক্ষন পর শুরু হল বৃষ্টি, তবে আমাদের এখানে নয় নিচের পাহাড় গুলোতে, আহ! কি দৃশ্য, মন জুরিয়ে যায়।

IMG_20190803_082241.jpg

আস্তে আস্তে রাত হওয়া শুরূ করলো সাথে ঠান্ডাও, আমাদের ক্যাম্পাসের এক বড় ভাই আমদের সতর্ক করে দিয়েছিলো রাতে খুব ঠাণ্ডা পরে। আমরাও শীতের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেঘের ভিতরে থাকায় অনেকটা ভিজে যাওয়ার করাণে ঠাণ্ডা আরো বেশী লাগছিলো। আমরা তাড়াতারি মটেল এ ফিরে গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেই।

IMG_20190803_093634.jpg

এরপর শুরু হয় খাবার এর পর্ব। আজ এ পর্যন্তই থাক পরবর্তি পোষ্টে সাজেকের খাবার (বাশে মাছ Bamboo fish, বাশ মুরগি Bamboo Chicken), কংলাক পাহাড়, সেনাবাহিনীর পোষ্ট, স্থানিয়দের জীবন নিয়ে লেখবো ইনশাআল্লাহ।