করোনার এই লকডাউন জীবনে চেষ্টা করছি নিজেকে প্রানবন্ত রাখতে। চতুর্দিকে এত এত খারাপ সংবাদঃ কেউ মারা গেছে, কারো চাকরি চলে গেছে, লঞ্চ ডুবে গেছে, ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে... এসব শুনতে শুনতে মন বিষন্ন হয়ে যায়।
তাই নিজেকে উৎফুল্ল রাখতে চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত ভিন্ন কিছু করার মাধ্যমে। সেই ধারবাহিকতায় এবার উড়ালাম ঘুড়ি।
ঘুড়ি গ্রাম বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী খেলা। আগে গ্রামে নিয়মিত ঘুড়ি উৎসব হত। এখনো কোন কোন অঞ্চলে হয়। এছাড়াও ছেলেরা বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুড়ি উড়ায়। এটা এমন এক সার্বজনীন খেলা, যেটায় মেতে উঠে ছেলে-বুড়ো থেকে আরম্ভ করে সব বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষ।
করোনার কারণে অপ্রয়োজনে বের হই না। তাই ঘুড়ি কেনার ঝামেলায় না গিয়ে নিজেই বানিয়ে নিলাম। খুব সহজ। দুইটি কঞ্চি ও একটি পলিথিন লাগে। একটু মোটা সুতো নিলাম যেন সহজে ছিড়ে না যায়।
নাটাই নেই। আপাতত সুতার হোল্ডার নাটাইয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করলাম। একটু বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ঝরো বাতাস। তাই উড়িয়ে দিতে সহজেই উপরে উঠে গেলো পতপত করে।
কিছুটা উপরে উঠার পড়ে শুরু হল ঘুড়ির সংগ্রাম। বাতাস প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। বাতাসের সাথে ঘুড়িও দোল খাচ্ছে। এই পড়ে যেতে চায়, এই হেলে যায়। সুতো টেনে ধরলে ঘুড়ি টা একটা ঝাঁকুনি খায়। মাথা উচু করে কিছুটা উপরে উঠে। আবার পড়ে যেতে চায়। আবার সুতোর টান।
ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে হটাৎ মনে হল, আমাদের জীবনটা যেন এক ঘুড়ির মতন। জীবনে কত রকম বাধা বিপত্তি আসে। উত্থান পতন আসে। মাঝে মাঝে আমরা হতাশ হয়ে যাই। দুমড়েমুচড়ে যাই। তখন আমাদেরকে সাহস যোগায়, শক্তি যোগায় পেছনের এক অদৃশ্য শুধু সুতা।
যেমন এই করোনার দুঃসময়ে আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো মূল্যবান সময় ঝরে যাচ্ছে শুকনো পাতার মতো। অনেকের জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
তবু কারো জীবন থেমে থাকবে না। একটু পিছন দিকে সুতো টান দিলে, আবার জীবন-ঘুড়িটা মাথা উঁচু করে পতপত করে উড়ে যাবে কালের আকাশে।
এভাবে প্রতিটি পতনের সময় একটু পিছু ফিরে তাকালে, ভুলগুলো সংশোধন করে নিলে এবং জীবনকে একটা ঝাঁকুনি দিলে এবং এর থেকে মোটিভেশন জোগাড় করে নিলে.. জীবনে বড় হওয়া সম্ভব, সফলতা অর্জন করা সম্ভব এবং টিকে থাকা সম্ভব।
তাই আসুন, আমরা আমাদের এই ক্রান্তিকালে চেষ্টা করি আমাদের বিগত দিনের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে ভাবতে এবং জীবনটাকে একটা শক্ত ঝাঁকুনি দিয়ে আবার জাগিয়ে তুলতে। তাহলেই সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবেন কঠিন সময়গুলো, প্রতিবন্ধকতাগুলো। জীবন-ঘুড়ি এগিয়ে যাবে আকাশছোঁয়া উচ্চতায়..
আত্মকথনঃ
আমি ত্বরিকুল ইসলাম
সখের বশে ব্লগিং করি। ইদানীং কিছুটা আঁকাআঁকি শিখার চেষ্টা করছি।
Hive: @tariqul.bibm
3speak: tariqul.bibm
"পড়াশোনায় ইঞ্জিনিয়ার। পেশায় শিক্ষক। নেশায় লেখক। সাবেক ব্যাংকার। পছন্দ করি লিখতে, পড়তে, ভ্রমণ করতে এবং জমিয়ে আড্ডা দিতে।"
জীবনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি
Hi @tariqul.bibm, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @zayedsakib!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এরকম করা দরকার । আর এই রকম কঠিনতম সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অনেক জরুরী, আমিও পছন্দ করতাম ঘুড়ি উড়াতে ।
অনেক দিন পর ঘুড়ি উরালাম। খুব ভালো লাগলো। শৈশবের ঘুড়ি উড়ানোর স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল।
ভোকাট্টা হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের উচিৎ মেঘের পাশে মনের আনন্দে উড়া।