জন্ম হয়েছিলো জামাইকায়৷ বয়স যখন মাত্র দুই বছর তখন খুন হন স্টারলিং এর বাবা। এই ঘটনাই বদলে দেয় রাহিম স্টার্লিং এর জীবন। স্টার্লিং আর ওর বোনকে দাদীর কাছে রেখে জামাইকা থেকে ইংল্যান্ড চলে যান স্টার্লিং এর মা। কয়েকবছর ধরে দাদীর সাথে কিংস্টনেই কাটে শৈশবের দিনগুলো। অন্যান্য ছেলেদের যখন মায়ের সাথে দেখতেন, খুবই হিংসা হতো স্টার্লিং এর। হবারই কথা, এতটুকুন একটা ছেলের তো মা'কেই চাই।
মা চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সন্তানদের ভবিষ্যৎটা একটু সুন্দর করার। ইংল্যান্ডে একাই লড়ে যাচ্ছিলেন জামাইকার এই জীবন ছেড়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য। স্টার্লিং তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি কী করছে মা। মন খারাপ করতেন নিশ্চয়ই। মন খারাপ হওয়াই কি স্বাভাবিক না?
মা ছিল না কাছে তবে ভাগ্যিস ফুটবল ছিল। জামাইকার স্মৃতি তেমন মনে নেই স্টার্লিং এর। শুধু এতটুক মনে আছে যে যখন বৃষ্টি হতো, সবাই মিলে পানিতে-কাদায় দাপিয়ে ফুটবল খেলতেন। জামাইকায় বৃষ্টি হলে সবাই বৃষ্টিতে ভিজতো, কেউ বৃষ্টি দেখে পালিয়ে যেতো না। এই তার জামাইকার সবচেয়ে মধুর স্মৃতি।
বয়স যখন ৫ বছর, মা আর বোনের সাথে লন্ডন চলে আসেন স্টার্লিং। জীবনটা সহজ ছিল না, কিন্তু মা সবসময়ই যা যা প্রয়োজন তার সবই দিয়েছেন তাদের। কিন্তু নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু কষ্টই হচ্ছিলো বৈকি।
পড়ালেখার পাশাপাশি মা ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন বাড়তি আয়ের জন্য। ভোর ৫টায় উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে স্টোনব্রিজের একটা হোটেলে টয়লেট পরিষ্কার করতেন মা-স্টার্লিং আর ওর বোন। কে টয়লেট পরিষ্কার করবে আর কে বিছানার চাদর বদলাবে এই নিয়ে স্টার্লিং আর তার বোন ঝগড়া করতো। হোটেলে কাজ শেষে মা ভেন্ডিং মেশিন থেকে ওদের যা চাই তাই কিনতে দিত। সবসময়ই বাউন্টি চকলেট কিনতেন স্টার্লিং।
পরিবারটা ছিলো খুবই ছোটো। নিজেদের জন্য ছিলেন শুধু নিজেরাই। এখন যখন শৈশবের কথা মনে করেন তখন খারাপই লাগে মায়ের জন্য। অনেক ত্যক্ত-বিরক্ত করেছেন মা'কে। টিচারদের কথা একদমই শুনতেন না। অংক ক্লাসে মন বসতো না, খালি ভাবতেন কখন ছুটি হবে আর মাঠে গিয়ে খেলবেন, ঠিক রোনালদিনহোর মতো। এতই দুষ্টু ছিলেন স্টার্লিং যে তাকে প্রাইমারি স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। ঠিক বের করে দেয়া হয়নি, স্কুল কতৃপক্ষ বলেন যে স্টার্লিং এর এমন একটা স্কুল দরকার যেখানে স্টার্লিং এর উপর বিশেষ মনোযোগ দেয়া হবে। নতুন স্কুলে আসলেন স্টার্লিং, ৬ জন ছাত্র আর তিনজন টিচার। ফাঁকি দেয়ার কোন উপায় নেই আর। স্কুল বাসে করে আসতেন আর ফেরত যেতেন। একদিন স্কুল বাসের জানালা থেকে দেখলেন সমবয়েসী কয়েকটা ছেলেমেয়ে হাসতে হাসতে স্কুল ইউনিফর্মে হেটে যাচ্ছেন। দেখে হিংসা হলো স্টার্লিং এর, মনে মনে ভাবলেন। বুঝলেন সে নিজেও ওদের মতো হতে চায়। সাধারণ একটা জীবন চায়। সেই ছেলেমেয়েদের সাথে তার কোন তফাৎ নেই, সে শুধু একটু চুপচাপ। তার একটাই সমস্যা, সে মা বাদে আর কারো কথা শুনতে চায় না।
রাতারাতি ভদ্র হয়ে গেলেন স্টার্লিং। এক বছরের মাথায় নতুন এক বড় স্কুলে ভর্তি হলেন। তার জীবন নতুন এক মোড় নিলো যেদিন তার সাথে পরিচয় হলো ক্লাইভ এলিংটন নামের এক ভদ্রলোকের। তার এলাকায় পিতৃহীন ছেলেদের দেখাশুনা করতেন ক্লাইভ। ছুটির দিনে লন্ডনে তাদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন ক্লাইভ, স্নুকার খেলতেন। ক্লাইভ আসলেই স্টার্লিংদের ভালোবাসতেন। একদিন তিনি স্টার্লিংকে জিগ্যেস করলেন স্টার্লিং কি করতে ভালোবাসে। স্টার্লিং ভেবেচিন্তে উত্তর দিলেন যে সে ফুটবল খেলতে ভালোবাসে। স্টার্লিংকে তিনি তার সানডে লিগের টিমের সাথে প্র্যাকটিস শুরু করতে বললেন। সেই দিন থেকেই স্টার্লিং এর লাইফে ছিল শুধু ফুটবল, ফুটবল, ফুটবল।
বয়স যখন ১০ কি ১১ তখন স্টার্লিংকে স্কাউট করা শুরু করে বেশ কয়েকটি ক্লাব। ফুলহাম-আর্সেনাল স্টার্লিংকে দলে নিতে চাচ্ছিলো। আর্সেনাল যদি ১০-১১ বছরের কোনো ছেলেকে দলে চায়, তাহলে তো জয়েন করতেই হয়। লন্ডনের সবচেয়ে বড় ক্লাব বলে কথা!* স্টার্লিং বন্ধুবান্ধবদের বলে বেড়াতে লাগলেন যে সে আর্সেনালে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু স্টার্লিং এর মা ছিলেন দূরদর্শী-বাস্তববাদী। স্ট্রিট-স্মার্ট যাকে বলে। স্টার্লিংকে বসিয়ে বুঝালেন তিনি। বললেন আর্সেনালে স্টার্লিং এর মতো আরও ৫০ জন ভালো প্লেয়ার থাকবে, স্টার্লিং সেখানে হবেন শুধুমাত্র একটা নাম্বার। তার মতে স্টার্লিং এর এমন কোনো জায়গায় যাওয়া দরকার যেখানে স্টার্লিং নিজেকে ইম্প্রুভ করতে পারে-প্রমাণ করতে পারে। নিজেকে ধীরে-ধীরে উপরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মায়ের কথায় রাজি হয়ে স্টার্লিং যোগ দিলেন কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স এ। এটা বোধহয় তার জীবনের সবচাইতে সেরা আর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল।
আসলো নতুন এক বিপদ। স্টার্লিং এর মা কখনোই স্টার্লিংকে একা প্র্যাকটিসে যেতে দিবেন না। মা সারাদিন কাজ করেন, তাই ঠিক হল তার বোন তাকে নিয়ে প্র্যাকটিসে যাবেন। সেই হিথরো'তে পৌঁছে দিবেন। নীল উলের সেই পুরানো লাল রঙের ডাবল-ডেকার, তিন তিনটা বাস বদলে প্র্যাকটিসে যেতেন স্টার্লিং আর তার বোন। ৩টা ১৫ তে বের হয়ে দিনশেষে রাত ১১টা বাজে বাড়ি ফিরতেন তারা। প্রতিদিন-প্রতিটা দিন। মাঠের পাশের একটা ক্যাফেতে সারাটা দিন বসে অপেক্ষায়-অপেক্ষায় সময় কাটাতেন স্টার্লিং এর বোন। ১৭ বছরের একটা মেয়ে সব সখ-আহ্লাদ বাদ দিয়ে এতো কষ্ট করতেন ভাইয়ের জন্য। জীবনে কোনো দিন না করেননি তিনি, বলেননি স্টার্লিংকে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেতে পারবেন না। স্টার্লিং এখন বুঝেন তার বোন, তার মা কতো বড় স্যাক্রিফাইসই না করেছেন তার জন্য।
হাস্যকর মনে হতে পারে, তবুও। স্টার্লিংদের বাসার ব্যাক-ইয়ার্ড থেকে নতুন ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম দেখা যেতো। একদিন বাসার পিছনে গিয়ে স্টার্লিং দেখেন আকাশে ওয়েম্বলির উপর আকাশে বিশাল ধনুকের মতো কি যেনো একটা জিনিস। এতোই বিশাল যে দেখে আশেপাশের সব বিল্ডিংগুলোকে ছোট মনে হচ্ছে। বাড়ির পিছনের উঠানে একা একা খেলতেন স্টার্লিং। নিজেই বল বানিয়ে নিজেই গোল দিয়ে সেলেব্রেট করতেন। সেলেব্রেশনের সময় তার মনে হতো সে এখন ওয়েম্বলিতে, মাঠের সব দর্শক তার জন্যই চিয়ার করছে। মনে মনে ভাবতেন তিনি ঠিকই একদিন এখানে খেলবেন।
সবাই যে স্টার্লিংকে বিশ্বাস করতেন, সাহস যোগাতেন ব্যাপারটা এমন ছিল না। স্তার্লিং এর বয়স তখন ১৪। একদিন ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে বসে ছিলেন স্টার্লিং। একটু বিরক্ত হয়ে তার শিক্ষিকা স্টার্লিংকে বললেন "রাহিম, তুমি যে ফুটবলার হতে চাও, তুমি কি জানো কত লাখ ছেলে এমন স্বপ্ন দেখে? তোমার কেন মনে হয় তুমি স্পেশাল?" সেদিন একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় দু'মাস পর ইংল্যান্ডের অনুর্ধ-১৬ দলে ডাক পেলেন স্টার্লিং। নর্দান-আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটা এসিস্ট করলেন। ন্যাশনাল টেলিভিশনে টেলিকাস্ট করা হলো খেলাটা। সোমবার যখন স্কুলে ফেরত গেলেন, সেই টিচারের আচরণ বদলে গেলো। তিনি হয়ে গেলেন স্টার্লিং এর বন্ধুর মতো।
জীবনে আসলো আরো একটি নতুন সুযোগ। লিভারপুল সাইন করতে চাইলো স্টার্লিংকে। কিন্তু বাড়ি থেকে অনেক দূরে লিভারপুল, কম করে হলেও ৩ঘণ্টার দূরত্ব। এবার মা'কে বসিয়ে বুঝালেন স্টার্লিং। বললেন তিনি এই এলাকা-বন্ধুবান্ধব সবকিছুই অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু তার্ এলাকায় গ্যাং এর উৎপাত/ক্রাইম অনেক বেড়ে গেছে। সে এসবের থেকে অনেক দূরে যেতে চায়, শুধু ফুটবলে ফোকাস করতে চায়। আর নিজেকে বুঝালেন তার মা-বোন অক্লান্ত পরিশ্রম-ত্যাগ করেছে তাকে এই জায়গায় নিয়ে আসতে। এখন তার পালা।
টানা দুই বছর একদম ছায়ার মতো ছিলেন তিনি। যখন ছুটি পেতেন ট্রেনে চড়ে ফিরে যেতেন লন্ডনে মায়ের সাথে দেখা করতে। আবার ট্রেনে করে লিভারপুল। বাইরের দুনিয়ার সাথে বলতে গেলে কোনোরকম যোগাযোগই ছিল না তার। সারাদিন থাকতেন ফুটবল নিয়ে। একটাই স্বপ্ন, বড় ফুটবলার হতে হবে। একাডেমি থেকে ৭০ বছর বয়েসী এক দম্পতির সাথে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল তার জন্য। তারা একদম তাদের নাতীর মতোই আদর করতেন স্টারলিংকে। স্টার্লিং প্রতিদিন সকালে উঠেই দেখতেন তার জন্য নাস্তা তৈরি করে রাখা আছে। একদম রুটিনের মতো। আরেকটা রুটিনড বিষয় ছিল, স্টার্লিং এর মা'এর ফোন কল। প্রতিদিন সকালে ফোন করে মা খোঁজ নিতেন স্টার্লিং এর আর জিগ্যেস করতেন স্টার্লিং প্রার্থনা করেছেন না কি। প্রতিদিন জবাবও আসতো একই।
জীবনের এই সময়টায় স্টার্লিং এর লক্ষ্য ছিল একদম একটাই। একটা ভালো কন্ট্রাক্ট পাওয়া, তার মা-বোন এর জন্য কিছু করা। স্টার্লিং এর জীবনে এমন ৩-৪ দিন গেছে যখন সে ট্রেইনিং এর থেকে বাড়ি ফিরার সময় জানতে পারে, তারা বাসা বদলে ফেলেছে। তাদের জীবনের প্রায় দুবছর এমন গেছে যে তারা যাযাবরের মতো ঘুড়ে বেড়িয়েছে। কারণ? কারণ একটাই, বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো তার মা। তখন ব্যাপারটা নিয়ে এতোটা ভাবেনি স্টার্লিং। কিন্তু এখন সে বুঝতে পারে, মা'র উপর দিয়ে আসলে কি ঝড়টাই না গিয়েছে। কতো কষ্টই না করেছে মা। নিজের টাকায় মা'কে যখন বাড়ি কিনে দিয়েছিল স্টার্লিং, সেই দিনটাই তার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন।
একটা বিষয় খুব অবাক লাগে স্টার্লিং এর। মিডিয়ার কিছু মানুষের কাছে স্টার্লিং খুব ম্যাটেরিয়ালিস্টিক। তাদের হিসেবে স্টার্লিং এর ডায়মন্ড পছন্দ, স্টার্লিং শো-অফ করতে পছন্দ করে ইত্যাদি ইত্যাদি। স্টার্লিং এর কাছে বিষয়টা একদমই বোধগম্য না তারা কেন এমন করে? মা'কে যখন বাড়ি কিনে দিয়েছেলেন অনেকেই অনেক উলটপালট কথা লিখেছেন। এসব দেখে খারাপই লাগে স্টার্লিং এর। বিষয়টা এমন যে তারা স্টার্লিং এর সম্পর্কে না জেনেই স্টার্লিংকে ঘৃণা করে। কয়েকবছর আগেও এসব দেখে মা'র কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেন তিনি। কিন্তু এখন আর না। এখন তার মনে হয় যতক্ষণ তার মা-বোন-ছেলেমেয়ে ঠিক আছেন, তিনিও সুখে আছেন। কেউ যদি তার মা এর দামী বাড়ির দামী ওয়াশরুম নিয়ে লেখেন, তার উচিৎ সেইসাথে ১৫ বছর আগে তাদের স্টোনব্রিজে হোটেলের বাথরুম পরিষ্কার করা নিয়ে লেখা। স্টার্লিং এর মা খালি হাতে জামাইকা থেকে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। ভোর ৫টায় উঠে, স্কুল-হোটেলের চাদর-বাথরুম পরিষ্কার করে, তিনি ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভেন্ডিং ম্যাশিন থেকে সকালের নাস্তা করতেন। এখন সে একটা নার্সিং হোম এর ডিরেক্টর, তার ছেলে ইংল্যান্ড ন্যাশনাল টিমে খেলে। তার জীবন সুন্দর হবে না তো কার জীবন হবে?
১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে ডাক পান স্টার্লিং। যেদিন প্রথম ওয়েম্বলিতে খেলতে যান সেদিন ছিল ইউক্রেনের সাথে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়ার খেলা। নিয়তির এক চোখ-ছলমল করানো বিষয় হল সেদিন যখন বাসে করে স্টার্লিং স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছিলেন, বাসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলেন। না লাল ডাবল-ডেকার বাস নয়, জাতীয় দলের বাস। বাস যখন হ্যারো রোডে, তখন জানালার বাইরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্টার্লিং ভাবছিলেন, এইখানেই ছিল তার বন্ধুর বাসা, এইখানেই স্কেটিং করতেন তিনি, এইখানে বসেই স্বপ্ন দেখতেন, আর আজ সেই স্বপ্ন বাস্তব।
স্টার্লিং এর মতে, ইংল্যান্ড এমন একটা দেশ যেখানে তার মতো অতি সাধারণ কেউ, যে কেউই তার স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে। শুধু একটা বিষয়, মিডিয়ার কথা কানে নেয়া যাবে না। এই মিডিয়া শুধু পারে মানুষের আনন্দ কেঁড়ে নিতে।
— ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের আগে দ্যা প্লেয়ারস ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত
Congratulations @tajimkhan! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 19000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!