কাল রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। দিব্বি একটা ঘুম দিয়ে ফেলেছি। লম্বা ঘুমের সফর দিলেও যাত্রা শেষের দিকেই ঘটে গেলো বিপত্তি। কোথায় যেন শব্দ বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ঘুমের মধ্যে ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে না পারলেও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় নিই। মায়ের শব্দের ঝংকারে ঘুমটা আর টেকসই হল না।
অবশ্য এটাই আমার এলার্ম। মায়ের বোকা ঝোকা খেয়ে প্রায় ঘুম আমার ভাঙ্গে ও কিচ্ছু না। অবশ্য যেদিন বোকা খাই সেদিন দিনটা ভালোই যায়। আমার তো মা'ই সবকিছু। বাবাকে তো আর চাইলেও কাছে পাবো না।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খাইতে বসেই দেখি টেবিলে পছন্দের নাস্তা। চালের আটার রুটি আর গরু মাংস। আর লোভ সামলাতে পারলাম না। দ্রুত বসে পরলাম। মায়ের হাতের রান্না সত্যিই অসাধারণ। গপাগপ চারটা রুটি খেয়ে ফেলেছি। চালের আটার রুটি থাকলে পুরো আস্তো একটা গরু পেটে পুরে নিতে পারবো। মাকে বললাম মা একটু ঝোল এনে দাও। মা ঝোল এনে দিয়েই বললো খাইতে থাক। গরুর মত খা আর শুয়ে শুয়ে জাবর কাট। মহা যন্ত্রণা রে বাবা। এই করোনা কালীন সময়ে বাইরে গেলেও বোকা দেয় সারাদিন বাসায় শুয়ে থাকলেও বোকা।
মাকে বললাম মা আমাকে গরু বলবে না বলে দিচ্ছি। মা ও বললো ঠিক তো। তোকে গরু বললে গরুর ও অপমান হবে। আমি তো পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খায়ে গেলাম। মনে মনে ভাবতেছিলাম গরু একটা অবলা প্রাণী। খালি চোখ দিয়ে দেখে মুখ দিয়ে খায় আর পাছা দিয়ে হাগে। মাঝে মধ্যে সময় সুযোগ পাইলে পিছনের ঠ্যাং দিয়া চাইঠায়। গরু একটা সার্বজনীন নাম। এমন কারো বাবা বা মা নাই যে গরু বলে নিজের দামরা বেটা টাকে ডাকে নাই। তাই একটু ইমোশনাল হয়ে গেলাম।
সামনে রিমোট ছিল টিভি চালু করতেই সময় নিউজে খবর দেখাচ্ছে এক তারিখ থেকে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। তাই মানুষ তার জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের বেঁচে থাকার সম্বল চাকরীটাকে অক্ষত রাখার জন্য যে যেভাবে পারছে ছুটছে। তাদের গন্তব্য একটাই রাজধানী। তাদের লক্ষ্য একটাই তাদের কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে এক তারিখে। না হলে যে তাদের চাকরী চলে যাবে। তারা চলবে কি করে। তাদের তো এটাই বেঁচে থাকার সম্বল।
হঠাৎ সময় টিভির পর্দা জুরে একটি পিকাপ ভর্তি মানুষ, তারপর একে একে অনেক গুলো পিকাপ ট্রাক ভর্তি মানুষ ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় আটকা পরেছে। আমি দেখেই মাকে বললাম মা গরু দেখছো পিকপ ভর্তি গরু? এখন মানুষ আর গরুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কুরবানীর আগে যেমন ট্রাক পিকাপ ভরে ভরে উত্তরবঙ্গ থেকে গরু নিয়ে যায় ঢাকায় ঠিক তেমনেই ঈদের পরে মানুষ গুলো পিকাপে করে গিজাগিজি করে যাচ্ছে ঢাকায়। কি মহিলা কি পুরুষ কি বাচ্চা কি বুড়া। আহা! জীবন কতোই না নিষ্ঠুর। এদের এখন একটায় পরিচয় এরা গরু। রাষ্ট্র আমাদের গরু বানিয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে আমরা গরু ছাড়া কিছুই না। রাষ্ট্র সব পরিবহন বন্ধ করে মানুষদের গরুর মত পিকাপ ট্রাকে যেতে বাধ্য করছে।
মা কিছুক্ষন নিশ্চুপ নীরবতা পালন করছিল আর আমি শুধু বলেই যাচ্ছিলাম। ঘুরে দেখি মা কাঁদছে। চোখ বেয়ে জ্বল গরাচ্ছে। বললাম কি হল মা তুমি কাঁদছো? না রে পাগলা পেঁয়াজের ঝাঁজটা সহ্য হচ্ছিল না তাই চোখ দিয়ে পানি বার হচ্ছে। বলেই আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বার হয়ে গেলো।
আহা! আমরা কতই না উন্নয়নের গল্প শুনাই। কিন্তু যাদের দিয়ে আমরা সম্পদের পাহাড় গড়ছি তাদের শুধুই যন্ত্র মনে করি। তারা মানুষ না, তারা মানুষ হতে পারে না।
ভাই এই ছবিগুলো দেখে সত্যিই কষ্ট লাগছে। কতটা নিরুপায় হলে মানুষজন এভাবে যাতায়াত করে। আরে ভাই ট্রাক দিয়ে যে গরুগুলো নিয়ে যায় সেগুলোও অন্তত এর চেয়ে আরামে যেতে পারে। জীবিকার তাগিদে করোনার ভয় কিংবা শারিরীক কষ্ট সব আজ উধাও।
আমরা আসলে কোন দিকে যাচ্ছি। তাদের মাথায় কি এতটুকুও বিবেক বুদ্ধি নেই যে যানবাহন বন্ধ রাখে শিল্প কারখানা খুলে দেওয়া। এটা মানুষদের সাথে শ্রমিকদের সাথে তামাশা করা হচ্ছে। নিষ্ঠুরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতোদিনের লক ডাউন তাহলে কেন দেওয়া হল। বাস ট্রেনের ডাবল ভাড়া সিঙ্গেল সিট কেন দেওয়া হল যদি লক ডাউনের মত্যেভাবেই তাদের যেতে হবে। তাহলে কেন ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবস্যায়ীদের ব্যবস্যা নষ্ট করা হল।
উদ্ভট সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এইদিকে আমরা সাধারণ জনগণও সাস্থবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও উদাসীন। কঠোরভাবে সাস্থবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে লকডাউন ও কিছুটা শিথিল করা যেত ব্যাবসা বাণিজ্যগুলো ও তাদের ক্ষতিগুলো কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতো।
উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা দেখতে হবে। জাতীয় সংসদ সদস্যের ৬০ জনের অধিক সদস্যের গার্মেন্টস রয়েছে। আর সিদ্ধান্ত তারাই নেয়।
হাহাহা, উনাদের কথা তো বলেই শেষ করা যাবেনা। 🤣
একেকজন সেই মাল।