আমার ধূমপান ছাড়ার কাহিনী

in BDCommunity2 years ago

IMG_20220910_192711.jpg

উপরের ছবিটা একটা অ্যাপের যা আমার পনেরো বছরের ধূমপানের অভ্যাস দূর করতে সাহায্য করেছে। অ্যাপটির নাম QuitNow Pro.

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একদিন টরেন্ট থেকে একগাদা পেইড অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলাম। সেখানে দেখি এটা। ২৩শে ফেব্রুয়ারী ছিলো প্রথমবার যেদিন খেলাচ্ছলে এই অ্যাপ ব্যবহার করা শুরু করলাম। ওমা! এ দেখি আসলেই একখানা দারুণ জিনিস! প্রথমে পার্সোনাল ডেটা দিলাম। তারপর ২০ মিনিট যেতে না যেতেই দেখি সে আমাকে এটা দিলোঃ
IMG_20220910_193325.jpg
এরসাথে ফেইসবুকে ধুমছে স্ট্যাটাস ছাড়া শুরু করলাম অ্যাচিভমেন্ট এর! ফ্রেন্ডরা তো সব অবাক!

প্রথমে ভাবলাম গাঁজাখুরি! পরে ইউটিউবে এই ভিডিওটা
https://m.youtube.com/watch?v=Y18Vz51Nkos আর গুগলে কিছুটা খোঁজ করে দেখি ঘটনা সত্যি। ওরাও অ্যাপে WHO এর রেফারেন্স দিয়ে রেখেছে। যাই হোক, এরপর ধীরে ধীরে মার্চের ছয় তারিখ পর্যন্ত টানা বিড়িমুক্ত থাকার পর কোনো এক কুক্ষণে ভাবলাম, দেখি না আজ একটা খেলে কেমন লাগে। একটা খেলে কি আর এমন হবে! আয়েশ করে একটা বেনসন ধরালাম। আপনাদের মনে আছে ফ্রেন্ডস টিভি সিরিজে চ্যান্ডলারের তিন বছর পর বিড়িতে টান দিয়ে কেমন লেগেছিলো? দৃশ্যটা দেখে নিন তখন বুঝবেন আমার কেমন লেগেছিলোঃ
https://m.youtube.com/watch?v=3YFrzUTYKcA
সময়টা ছিলো সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টা। দেখতে না দেখতেই বিড়িটা শেষ হয়ে গেলো! ইশশশ! ব্যাটারা সিগারেট আরেকটু লম্বা বানালেই তো পারতো। এরপর থেকে শুরু হলো ক্রেইভিং। রাত দশটা পর্যন্ত কোনোরকমে টিকে থাকার পরে আর পারলাম না। এই পুরোটা সময় আমার মাথায় সিগারেট ছাড়া আর কিছু ছিলো না। রাতে দুইটা সিগারেট নিয়ে ছাদে উঠলাম। খুব আয়েশ করে ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট টানলাম। চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি বইটা যারা পড়েছেন তারা বুঝবেন, ওই যে চার্লি বছরে একবার জন্মদিনে একটা চকলেট বার পেতো আর সেটা মাসখানেক ধরে খেতো, আমিও অনেকটা ওভাবেই সিগারেটটা টানলাম। ভাবলাম, এই দুটোই শেষ! কাল থেকে আর খাবো না।

পরদিন থেকে দ্বিগুণ হারে শুরু হলো ধূমপান। এতোদিনের ঘাটতি পূরণের জন্য উঠেপড়ে লাগলাম। সেই বছরের জুন মাসের ২৯ তারিখে আবার কুইট করলাম। ৪৫ দিন পর বাড়ি গেলাম। সবাইকে শোনাতে লাগলাম আমার বিড়ি ছাড়ার কাহিনী। সেদিন রাতেই পুরাতন বন্ধুদের সাথে হাওরের পাড়ে বেড়াতে গিয়ে ফুরফুরে হাওয়ায় বসে একটা সস্তা সিগারেট ধরালাম। ব্যস! আবার শুরু!

এরপর আরেকবার দশ/বারোদিন এর জন্য ছেড়েছিলাম। সেটা আর মনে নাই কতো তারিখে।

ফাইনালি, ২০২০ সালের ২০শে নভেম্বর রাত দশটা ৩০ মিনিটে আমি শেষ সিগারেটটায় টান দেই যা এখনও পর্যন্ত আমার টানা জীবনের শেষ সিগারেট।

মূল অনুপ্রেরণা পাই অন্য জায়গা থেকে। ২০১৮ সালে সাইকেল চালাতে গিয়ে হাত ভাঙে আমার। পনেরোদিন পর অপারেশন টেবিলে যেতে হয়। ব্রাকিয়াল ব্লক অর্থাৎ বাম হাত অবশ করার জন্য যে জায়গাটা অবশ করা হয় সেটা করার সময় আমার প্রচন্ড বুকে (ফুসফুসে) ব্যথা ওঠে। মনে হচ্ছিলো বুকের উপর ডাইনোসর দাঁড়িয়ে আছে। অ্যানেস্থেশিয়া যে ডাক্তার দিচ্ছিলেন তিনি তো ভয় পেয়ে যান। পরে আমাকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন। যাই হোক, অপারেশন ঠিকাঠাক হয়েছিলো। আমাকে বেডে রেখে যায় বিকেল পাঁচটায়। সেই আমি, সদ্য অপারেশন হওয়া ব্যক্তি, রাত বারোটায় আমার কাজিনকে ম্যানেজ করে একটা সিগারেট এর ব্যবস্থা করে ফেলি! কিন্তু বুকে ব্যাথার কথা আমি ভুলি নাই। আমার মাথায় ছিলো, যে ইমপ্লান্ট আমার কনুইতে ভরা হইছে সেটা আবার বের করা লাগবে একবছর পরেই। তখন আমাকে আবার অপারেশন টেবিলে শোয়াবে। আবার সেই ভয়ানক বুকব্যাথা শুরু হবে। নেট ঘেটে দেখি যে এটা নিউমোথোরাক্স নামক ব্যথা যা ধূমপায়ীদের বেলায় হতে পারে। সেই থেকে আমার চিন্তা যেভাবেই হোক ধূমপান আমাকে ছাড়তেই হবে। যে অপারেশন এক বছর পর করার কথা সেটা আমি তিন বছর পর করাই শুধু সেই বুকের ব্যথার ভয়ে। যাই হোক, ফাইনালি সিগারেট ছাড়ার একবছর ৪১ দিন পর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আমি অপারেশন টেবিলে শুই। আর এইবার বুকে মোটেও ব্যথা পাই নি। অ্যানেস্থেশিয়ার হালকা ঘোরলাগা অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই অনুভব করি নাই।

এর অনেকদিন পর আমি মাঝে সাঝে দুই একবার গাঁজায় টান দিয়েছি, কিন্তু সেসব একদম মামুলি টান ছিলো। গাঁজায় আবার অতোটা নেশা হয় না, অন্তত সিগারেটের মতো না। একটু 'হাই' হওয়া যায় এই আর কি! লাস্ট টাইম গাঁজায় টান দিয়েছি কমপক্ষে একবছর আগে।

সঙ্গের লোকজন বেশ হেল্প করেছে আমাকে এটা ছাড়তে। আর অ্যাপটার কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আজও আছে অ্যাপটা আমার ফোনে। সেখানে বিভিন্ন দেশের কমিউনিটি আছে। ওদের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। ইউকে'র চ্যাটরুমেই থাকা হয় বেশি। এখন আর যাই না। কালেভদ্রে অ্যাপটা রান করি। প্রথম প্রথম প্রায় মিনিটে মিনিটে রান করতাম।

অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিলেও আমার বেলায় অ্যাপটা বেশ কাজ করেছে। আর সব থেকে বড় কথা হলো মনের জোর, দৃঢ় একটা পারপাস লাগবে আপনার এটা ছাড়ার জন্য। মাঝে মাঝে ব্যর্থ হতে পারেন, তখন হয়ত অনেকেই ইয়ার্কি মারবে, মন খারাপ করবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নীরবে কাজটা করেন। ঢোল পিটিয়ে পরে আবার লজ্জায় পড়বেন। আর ছাড়ার পর ভুলেও আর সিগারেট মুখে নেবেন না। ছুইছেন তো মরছেন! আমার অভিজ্ঞতা বলে, এটা হলো ওয়ান টাইম জব। কমিয়ে কমিয়ে ছাড়ার পদ্ধতি কাজ করে না। আজ একটা কাল একটা করে আমি অনেক বাঁশ খাইছি।

ছাড়লে কিছু সমস্যা হবে এটা সত্যি, কিন্তু সব সমস্যাই সাময়িক। অনেকের টয়লেট হয় না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। বিশ্বাস করেন, এসব কেটে যাবে। যখন ক্রেইভিং হবে জাস্ট অন্যদিকে মনোযোগ দিবেন। আমি পটেটো ক্র‍্যাকার্স চাবাইতাম, বম্বে সুইটস এত চানাচুর খাইতাম। মাসখানেক কেটে গেলে আপনার আর ফিরে যেতে ইচ্ছা হবে না যদি না আপনি টানটুন দেন আবার।

ভালো থাকবেন সবাই। ভিডিওগুলো দেইখেন, বিশেষ করে ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে কি কি ঘটে সেটা। আমার অভিজ্ঞতা যদি কারো কাজে লাগে তাহলে এই পোস্ট দেয়াটা সার্থক হবে। আর লেখার ভুলভ্রান্তি ইগনোর কইরেন।

All the pictures are mine.

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL

অফ টপিক,আপনি যেদিন শেষ ধূমপান করেন তার আগের দিন আমার আব্বা মারা জান ফুসফুস জনিত রোগ এবং হৃদরোগের কারণে।১৯ নভেম্বর,২০২০।

ধূমপান ছাড়তে পারার জন্য, আপনাকে শুভকামনা।
সুস্থ জীবন কাটান।

আহহাঃ কি জবাব দেবো? আপনার আব্বা বেহেশতবাসী হোন।

ধন্যবাদ।