স্টাডি রুম - আমার তীর্থস্থান

in BDCommunity2 years ago

nicola-nuttall-ObTfaF2hngw-unsplash.jpg
Photo Credit: Nicola Nuttal from Unsplash
Image Link: https://unsplash.com/photos/ObTfaF2hngw

এই লেখা যারা পড়ছেন তারা প্রায় সবাই কম-বেশি লিখতে ও পড়তে ভালোবাসেন বলেই আমার ধারনা। আর যারা লিখতে পড়তে ভালোবাসেন তারা নিশ্চয়ই একটা নিরিবিলি ও ছিমছাম পড়ার ঘরের আশাও করেন। অনেকেরই নিজের একটা ঘর থাকে না, পড়ার ঘর তো দূরের কথা। আমি চাই, যাদের নেই তাদের একটা পড়ার ঘর হোক, যাদের আছে তারা যেন তাদেরটা মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারে। পছন্দের বই দিয়ে ঠাসা একটা নিরিবিলি ঘরে নিজের মতো করে সময় কাটানো যে কতোটা আরাধ্য ব্যাপার তা হয়ত অনেকেই জানেন।

ভার্জিনিয়া উল্ফের মতো আমারও ছোটবেলা থেকে A Room of My Own এর খায়েশ। পড়ার ঘর বলতে আমি বুঝি এমন একটা ঘর যার আগপাশতলা কেবল বই আর বই দিয়ে ভরে থাকবে। গুটিশুটি মেরে শোয়ার মতো খানিকটা জায়গা থাকলেই চলবে আমার। ছাদ আমার খুব ভালো লাগে, তাই ছাদের সাথে লাগোয়া হলে খুব ভালো হয়। যদি দক্ষিণমুখী জানালা থাকে ও নদীর ভিউ পাওয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। পড়ার টেবিলটা থাকবে জানালার সামনে, লিখতে গিয়ে যদি মাথা ফাঁকা লাগে তখন নদীর দিকে উদাস চোখে তাকিয়ে থাকা যাবে। নদী থেকে আসা বাতাস ফিসফিস করে আইডিয়া দিয়ে যেতেও পারে।

লর্ড অব দ্য রিংস সিনেমায় হবিটদের ঘর দেখে আমি এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্যাসিনেটেড হইছি। বিলবো ব্যাগিনস যখন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আমার চোয়াল ঝুলে যায়। আহঃ কি সুন্দর! ওরকম কখনও হবে কিনা জানি না, তবে যদি কোনোদিন সামর্থ হয় তাহলে ইচ্ছা আছে ওরকম একটা বাড়ি বানানোর।
800px-A_Hobbit_House.jpg
Photo: Wikimedia Commons

HD-wallpaper-study-view-house-home-beautiful-countryside-boat-bridge-painting-flowers-river-room-study-art-cozy-lovely-window-view-church-chapel.jpg
Image Link: https://www.peakpx.com/en/hd-wallpaper-desktop-gpbaz
এটা অবশ্য হবিট হাউসের ইন্টেরিওর না। আমার ভাষাগত দূর্বলতার কারনে ছবি ব্যবহার করতে হলো।

ভালো লেখকের জন্য একটা আদর্শ স্টাডি রুম থাকা আবশ্যক বলে আমি মনে করি। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন যারা ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বসেও লিখতে পারেন। তাঁরা জিনিয়াস, আমি তাঁদের কথা বলছি না। যেহেতু ক্রিয়েটিভ রাইটিং একটা শৈল্পিক ব্যাপার তাই আমার মনে হয় লেখকের উচিত দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক জায়গায় থাকা।

এরকম মনের মতো ঘর শহরে বসে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বর্তমানে ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগে আমার মনে হচ্ছে উন্নত নাগরিক সেবার কথা বাদ দিলে একজন লেখক এখন দেশের যে কোন জায়গায় গিয়ে বাস করতে পারেন যদি না তার কোন পিছুটান থাকে। ফ্রিল্যান্স কাজ করার সুযোগ থাকলে আমি মনে করি ইন্টারনেট আছে এমন যে কোনো জায়গায় দিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করা সম্ভব। শহরের এই বিশ্রী দূষণের মধ্যে থেকে থেকে অসুখ বাধিয়ে ডাক্তারকে সব টাকা উজাড় করে না দিয়ে তুলনামূলক মফস্বল কোনো এলাকায় চলে গেলেই ভালো হয়। গ্রামের ভেজালমুক্ত শাক-সবজি ও তাজা মাছ খেলে আর সতেজ বাতাস ফুসফুসে গেলে অসুখ খুব সহজে হবে বলে মনে হয় না। মাঝে মাঝে ঢাকায় এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে গেলেই ঝামেলা মিটে যায়।

বাচ্চা-কাচ্চার লেখাপড়ার কথা যদি বলেন তো সেসব আজকাল অনলাইনেই করানো যায়। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা এখন ঘরে বসেই নেয়া সম্ভব। বরং শহরের ইট-পাথরের বেড়াজালে না থেকে শিশু পাবে একটা মুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। আমরাও পারবো বুক ভরে শ্বাস নিতে। এটা ঠিক যে, বহুদিনের অভ্যস্ত আবাস ছেড়ে অনিশ্চিতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া অতো সোজা না। কিন্তু কিছু পাওয়ার জন্য তো কিছু ছাড়তেই হবে।

আবার আগের কথায় ফিরে আসি। পড়ার ঘরে ডিসট্র‍্যাকশন হয় এমন আয়োজন না থাকলেই ভালো। লেখার জন্য ল্যাপটপই ভালো মনে হয় আমার কাছে। স্মার্টফোন হাতের কাছে থাকলে কাজে মন বসানো বেশ ঝামেলা। এটা সেটা করার জন্য হাত নিশপিশ করে। ফ্লাস্ক ভর্তি চা/কফিও পাশে থাকা চাই। প্রায় বছর দুয়েক হলো সিগারেট ছেড়েছি, তা নাহলে এক প্যাকেট সিগারেটও রাখা যেতো। বিখ্যাত নরওয়েজীয়-ইংরেজ শিশু সাহিত্যিক Roald Dahl একটা কুঁড়েঘরে বসে লিখতেন, নিচের ছবিগুলো উনার ১৯৮২ সালের এক ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেয়া। নিচে ভিডিওর লিংকটাও দিয়ে দিয়েছি।

Screenshot_20220908_115119.jpg
বাহির থেকে কুঁড়েঘরটা এমনই দেখা যায়।
Screenshot_20220908_115234.jpg
Roald Dahl তাঁর কুঁড়েঘরে বসে লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভিডিও লিংকঃ https://m.youtube.com/watch?v=nQkz_X1Rg60

থাকার জায়গা আর কর্মক্ষেত্র দূরে হলে আমাদের দেশে মহা ঝামেলা হয়ে যায় অফিসে যাতায়াত করতে। কেবল এই কারনেই অনেকে বাড়তি বাসাভাড়া দিয়ে আর হয়রানি এড়াতে কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি থাকতে চান। বাসাবাড়ি যদি শহরের কোলাহল থেকে দূরে হয় তাহলে একজন কর্মজীবী ব্যস্ত মানুষও বাড়িতে বসে লিখতে পড়তে পারতেন। অন্তত আমাকে আর মফস্বলে মুভ করার কথা ভাবতে হতো না।

Screenshots have been taken from a Youtube video, the link is provided above.

Sort:  

আমার আবার পড়ার স্থানটা বা লেখার স্থানটা জানালার কাছে না হলে হয় না,আকাশ দেখতে না পারলে মনে হয় মাথা কম কাজ করে।

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL