Garbage in, Garbage out!
Steal like an artist পড়তে গিয়ে কথাটা পড়লাম। আমরা কি ভেবে দেখার ফুরসত পাচ্ছি যে সারাদিন আমরা কী পড়ছি আর কী দেখছি? এই লেখাটা পড়া হলে পরে ফোনটা হাত থেকে রেখে একটু ভেবে দেখতে পারেন।
আমি ভেবে দেখছিলাম আমার কগনিটিভ ইভোলিউশন কীভাবে হলো। প্রাইমারি তো প্রায় নাই আমার জীবনে। কেবল ক্লাস ফাইভ এর বছর আমার প্রাথমিক শিক্ষা। তবে সেটাই বরং ভালো ছিলো, আবার খারাপও কম ছিলো না। ভালোটা ছিলো এই জন্য যে আমি প্রচুর 'আউট বই' পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর খারাপটা ছিলো এই যে, প্রাথমিক স্কুল জীবনের মতো আনন্দের সময় আমার জীবনে আর আসলো না (পরে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছিলো)। আমি তখন হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়তাম। প্রতি বৃহস্পতিবারে আমাকে বাসায় আনা হতো। আর সে রাত থেকে পরেরদিন বিকেল পর্যন্ত আমি বই পড়তাম। বাসায় থেকে যাওয়ার সময়টা খুব বেদনার ছিলো। আমি চাইতাম আমার নিজস্ব একটা রুম থাকবে যেখানে আমি আমার ইচ্ছেমতো বই দিয়ে ভরে রাখতে পারবো আর ইজি চেয়ারে দুলে দুলে সারাদিন বই পড়বো। এটা ছিলো আমার নয় বছর বয়সের ভাবনা। ত্রিশের কোঠায় এসেও আমার সেই ভাবনা একটুও ফিকে হয় নি। ইচ্ছেটা পুরোপুরি পূরণ না হলেও খুব বেশি বাকিও নেই। যা একটু অভাব, তা কেবল সময় আর নির্জনতার।
মাদরাসা শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে বারে বারে আমি পালাতাম। শেষমেশ 'জেল' মাদরাসায় দেয়ার পরও যখন পালালাম তখন পরিবারের নীতিনির্ধারকেরা ভাবলেন, 'ঢের হয়েছে, এবার উহাকে ইশকুলে দেওয়া হউক'। তখন বয়স দশ। কৃতিত্বের সাথে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর আর আমাকে পায় কে! ইচ্ছেমতো বই পড়া শুরু করলাম। প্রায় প্রতি তিনদিনে একটা করে বই পড়তাম। বেশিরভাগই ছিলো তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক, কিশোর হরর, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল এইসব, আর পড়তাম কমিকস্।
হাইস্কুলে উঠে পড়ায় ছেদ পড়লো কিছুটা। তখন শুধু মাসুদ রানা পড়তাম আর সিনেমা হলে যেতাম। এর জন্য পিটুনিও কম খাই নাই। হাইস্কুলের শেষের দিকে কিছুটা রবীন্দ্রনাথ পড়ছিলাম অবশ্য, ভালো হজম হয় নি। অতএব, দেখা যাচ্ছে আমার স্কুল জীবনে আমি আসলে ভালো কিছু পড়িই নাই। মস্তিস্কের গঠন যেমন ছিলো তেমনই আছে।
কলেজে গিয়ে পড়াশোনা একদম গোল্লায় গেলো। এইচএসসি'র পুরো দুটো বছর প্রেম প্রেম খেলে কাটিয়ে দিলাম। হুদাই! একদম আনপ্রোডাক্টিভ সময় ছিলো, তবে বেশ আনন্দে ছিলাম। যাই হোক, এরপর অনার্সে ভর্তি হয়েও আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলাম না, নিলাম চাকরি। তখন খুব আর্টিক্যাল পড়তাম, বিশেষত উইকিপিডিয়া। জুতোর কারখানায় চাকরির সুবাদে সেই বিষয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করি। এরপর কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় তা নিয়ে অনেকের জীবন কাহিনী পড়ি। ফিল নাইট (নাইকির প্রতিষ্ঠাতা), অ্যাডি ড্যাসলার আর রুডি ড্যাসলার (অ্যাডিডাস), স্যাম ওয়ালটন (ওয়ালমার্ট), রিচার্ড ব্র্যানসন (ভার্জিন গ্রুপ); এরা সকলেই ছিলো আমার রোল মডেল (ইউ গেট দ্য পিকচার আই গেস)। কোম্পানীগুলোর লাইফলাইন নিয়ে নাড়াচাড়া করি। ল্যাবে কাজ করার সুবাদে সব ধরনের ফাইলে অ্যাকসেস ছিলো আমার।
পরবর্তীতে জুতোর লাইন ছেড়ে চলে যাই পোশাকে। এবার খাতা-কলম নিয়ে স্টাডি শুরু করি, ইচ্ছা ছিলো, পোশাক এর ব্র্যাণ্ড বানাবো। দুরুম-দারুম করে জুতোর মতো এই লাইনেও লেখাপড়া শুরু করি। একটা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়ে ঢুকে পড়ি মাস্টারি পেশায়।
তো, এই বছরগুলোতে কেবল পেশা সংক্রান্ত জ্ঞানই অর্জন করেছিলাম। দুনিয়ার আর কিছু খুব একটা টানতো না। ফলে রয়ে গেলাম আকাট মূর্খ, অতি প্রতিক্রিয়াশীল (যে কোনো নিউজ বা নারী সেলেব্রেটির পেইজের কমেন্টবক্সে গেলে আমি কেমন ছিলাম তার একটা পরিষ্কার ধারনা পাবেন)।
এরপর এলো ফেইসবুক। না, আমি নতুন ইউজার ছিলাম না তখন। ততোদিনে আমার অ্যাকাউন্টের বয়স প্রায় ছয় বছর। কিন্তু তবুও ফেইসবুক আমার মস্তিস্কের কোনো পরিবর্তন করতে পারে নাই। এরপর কিছু ফেইসবুক ফ্রেণ্ড যোগ হয় আমার বন্ধু তালিকায় যাদের অ্যাক্টিভিটি দেখে দেখে আমিও তাদের অনুসরণ করতে শুরু করি। জুকার ভাই তখন একটা গ্রুপ খুলে ক্যাম্পেইন শুরু করছিলো A Year on reading এই নামে। প্রতি দুই সপ্তাহে একটা করে বই পড়ার ব্যাপারে সে উৎসাহিত করতে শুরু করে। তখন হারারির 'স্যাপিয়েন্স' পড়ি। জীবনে প্রথম একখান সিরিয়াস ইংরেজি বই পড়া হলো আমার! সে কি আনন্দ! বেশ সুখপাঠ্য ছিলো বইটা। কনফিডেন্স বেড়ে গেলো আমার। এরমধ্যে বাংলা সাহিত্যেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইও আমার পড়া হয়ে যায়। আর যা যা হয়েছিলো এই পর্বে সেটা আগের এক পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম বলে আর এখানে লিখলাম না।
জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' এই সময় পড়ি আমি। সেখানে শাফি ইমাম রুমি সেই ৬০ এর দশকে যা যা অর্জন করেছিলেন তার কানাকড়িও আমি তখন অর্জন করি নাই। অস্বস্তিতে গা কুটকুট করতে লাগলো। 'কী করলাম জীবনে?' নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম। এ সময় আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে জানতে পেরে খাইলাম আরেক ধাক্কা! এই লোক চল্লিশ বছর পড়াশোনা করছেন কেবল জ্ঞানের টানে! সে কি সংগ্রাম তার! এখন আরজের মতো কাউকে পাওয়া অসম্ভব। ধড়ে আর মাথা থাকবে না। যাই হোক, এরা আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো যে আমি গণ্ডমূর্খ।
এরপর থেকে কেবল শিখেই যাচ্ছি। লেখার সাহস হচ্ছিলো না। ফেইসবুক এসে একটা দারুন সুযোগ এনে দিলো লেখার। শুরু করলাম টুকটাক লেখা। টুকটাক মানে আক্ষরিক অর্থেই টুকটাক। খুবই কম লিখতাম। নিজের লেখা দেখে নিজেরই বিরক্ত লাগতো, এখনও যে লাগে না তা না। তো হাইভে এসে লেখা তার বাঁধন হারিয়ে ফেললো! এখানে লোকে পড়ে, লেখে, প্রতিটা বাক্য অনেক যত্ন নিয়ে লেখে। হাইভ পছন্দ করার এটা আমার একটা বেশ বড় কারন। নইলে এরকম আকারের লেখা আমি লিখার কথা কল্পনাই করতে পারতাম না। চেষ্টা করে যাচ্ছি লেখার। কন্টেন্ট এবং এর ফ্লো'টা ঠিক করার জন্য ইচ্ছার কমতি রাখছি না। এখন বাকিটা আপনারাই বলবেন।
Congratulations @spandanlink! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 300 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!