21 Lessons for the 21st Century এর বঙ্গানুবাদ

in BDCommunity2 years ago

21_Lessons_for_the_21st_Century.jpg

ইউভাল নোয়া হারারি বেশ সুপরিচিত লেখক। উনার লেখা অনুবাদ করার লোকের অভাব নেই। তবুও আমি শখের বশে উনার "21 Lessons for the 21st Century" এর ভূমিকা থেকে প্রথম কয়েকটা প্যারাগ্রাফ অনুবাদের চেষ্টা করলাম। এই বইটার অনুবাদ এখনও হয়েছে কি না জানি না। যদি না হয়ে থাকে তাহলে জরুরিভাবে অনুবাদ হওয়া দরকার বলে আমার মনে হয়। "স্যাপিয়েন্স" এর থেকেও এটা অনুবাদ হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে। ওকে তাহলে শুরু করা যাক-

ভূমিকাঃ

পৃথিবীতে কোটি কোটি অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের ভীড়ে কোনোকিছু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকাটা জরুরী। মানবজাতির ভবিষ্যত নিয়ে তর্ক করার লোকের অভাব নেই, কিন্তু এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারনা ক'জনের আছে? বেশিরভাগ সময় আমরা খেয়ালই করি না যে আমাদের আশেপাশে কি ঘটে চলেছে, বা প্রধান সমস্যাগুলো কী কী। আমাদের তো সে সময় নেই, কারন, আমাদের এর চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ (সত্যিই কি?) কাজ পড়ে রয়েছেঃ আমাদের কাজে যেতে হয়, বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে হয়, মুরব্বীদের যত্ন-আত্তি করতে হয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না। যদি আপনার অজ্ঞাতসারে মানবজাতির ভবিষ্যত নির্ধারিত হয়ে যায়, কারন আপনি তো নিজেকে বা আপনার পরিবারকে নিয়ে খুব ব্যস্ত - আপনি বা আপনার পরিবার কিন্তু এর পরিণাম থেকে রক্ষা পাবে না। মেনে নিচ্ছি এটা অন্যায়, কিন্তু, কে বলল ইতিহাস সবার প্রতি সুবিচার করে?

আমি এক সামান্য ইতিহাসবিদ, আমি লোকেদের খাদ্য-বস্ত্র দিতে অক্ষম - আমি শুধু একটা পরিষ্কার ধারনা দিতে পারি, যেন নিত্য-পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর পরিবর্তনের আপনিও একজন রাজসাক্ষী হতে পারেন। আমাদের প্রজাতির ভবিষ্যত নিয়ে যে বিতর্ক, সে বিতর্কে আমি যদি সামান্য কিছু মানুষকেও জড়াতে পারি এই বইয়ের মাধ্যমে, তাহলেই আমার উদ্দেশ্য সফল বলে মনে করব।

আমার প্রথম বই 'স্যাপিয়েন্স'-এ মানুষের ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছিলাম, জানানোর চেষ্টা করেছিলাম কিভাবে এক তুচ্ছ লেজবিহীন বাঁদর সমগ্র পৃথিবীর শাসক হয়ে উঠল।

আমার দ্বিতীয় বই 'হোমো দিয়াস'-এ আলোচনা করেছিলাম মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে, জানার চেষ্টা করেছিলাম কিভাবে একসময় মানুষ নিজেই হয়ে উঠবে ঈশ্বর, বুদ্ধিমত্তা তাকে কোন চূড়ান্ত গন্তব্যে নিয়ে যাবে সে বিষয়ে।

অতীত আর দূর-ভবিষ্যত নিয়ে তো আগের বইগুলোয় আলোচনা করেই ফেলেছি, এই বইয়ে আমি বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে চাই। বর্তমানে কি ঘটছে? বর্তমান সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? আমাদের কীসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত? ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিভাবে গড়ে তোলা উচিত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমরা এই বইয়ে।

সাতশ কোটি মানুষের রয়েছে সাতশ কোটি সমস্যা, আগেই বলেছি, অত বড় বড় ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। বস্তিতে বসবাসরত কোন স্বামী-পরিত্যাক্তা মা হয়ত দুটি সন্তানকে নিয়ে দু'বেলা খাবারই জোটাতে পারছেন না; যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত কোন দেশের উদ্বাস্তরা হয়ত অথৈ সাগরে তীর খুঁজে বেড়াচ্ছেন; হাসপাতালের কোন এক কোনায় বেড না পেয়ে হয়ত একজন রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে তাদের নিজেদের সমস্যা বিশ্বের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বই তাদের এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, আর তাদেরকে দেয়ার মত কোন পরামর্শও আমার কাছে আপাতত নেই, বরং তারাই পারে আমাকে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিক্ষা দিতে।

আমার আলোচ্য বিষয়ঃ বৈশ্বিক, যা কিছু সমাজ ও পৃথিবীকে প্রভাবিত করে। জলবায়ুর পরিবর্তন সেসকল মানুষের কাছে ততোটা উদ্বেগের বিষয় নয় যারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, কিন্তু, এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারনেই হয়ত বস্তিবাসী আর বস্তিতে বসবাস করতে পারবে না, হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটিহীন হয়ে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মারাত্মক জটিলতা।

বাস্তবতা হলো অসংখ্য জিনিসের সমন্বয়। তবে এই বইটিতে আমি খুব সংক্ষেপে পৃথিবীতে আমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব। 'স্যাপিয়েন্স' বা 'হোমো দিয়াস' বই দুটোতে যথাক্রমে অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে যেমন বর্ণনা করেছিলাম এটাতে তেমনটা করব না,

অনেক সময় আমার পাঠক, সাংবাদিক এবং সহকর্মীরা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এই বইটা লেখা হয়েছে তাদেরকে দেয়া আমার উত্তর এর উপর ভিত্তি করে। এই বইয়ের আলোচ্য অনেকগুলো বিষয় আগেই বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে, যার ফলে আমি বহু মানুষের মতামত পেয়েছি এবং সুযোগ পেয়েছি আমার যুক্তিগুলোকে আরো দৃঢ় করার। বইটির কিছু অংশে আমি আলোচনা করেছি প্রযুক্তি নিয়ে, কোথাও রাজনীতি নিয়ে, আবার কোথাও ধর্ম এমনকি আর্ট নিয়েও। কিছু অধ্যায়ে আমি মানুষের জ্ঞানের প্রশংসায় ছিলাম পঞ্চমুখ, আবার কোনো কোনো জায়গায় তাদের চরম বোকামীর সমালোচনা করতেও পিছপা হইনি। কিন্তু, মূল প্রশ্নগুলো একই ছিলঃ পৃথিবীতে বর্তমানে কি ঘটছে, এবং এসব ঘটনার মর্মার্থ কি?

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর উত্থানে আমাদের কি যায় আসে? ভূয়া সংবাদ ও গুজবের ব্যাপারে আমরা কি করতে পারি? কেন আজ গণতন্ত্র বিপদের মুখে? ঈশ্বর অন্য কোন রূপে ফিরে এলো কি-না? কোনো যুদ্ধ কি আসন্ন? কারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে বা করতে যাচ্ছে - পশ্চিমারা, চীনারা, ইসলাম? ইউরোপ এর দরজা কি প্রবাসীদের জন্য খোলা রাখা উচিত? জাতীয়ভাবে কি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কিংবা জলবায়ু সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব? কিংবা, সন্ত্রাসবাদ এর ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?

এই বই বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, কিন্তু সেটা যেন সবাই বুঝতে পারে সেদিকেও লক্ষ রাখা হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তার সাথে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। ধরা যাক, সন্ত্রাসবাদ এর কথা। এটা এখন পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেরই অন্যতম একটা সমস্যা। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করে নিচ্ছে একদল লোক। একইভাবে, উদারপন্থী গণতন্ত্র নিয়ে যে শুধু সংসদে বা নির্বাচনে তামাশা করা হয় তা নয়, এটা আমাদের প্রতিটা স্নায়ুর রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে গেছে। এখন এমন একটা সময় যখন বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিবিদগণ সাধারন মানুষের মগজ ধোলাই করা শিখে নিয়েছে, সাধারন মানুষ এখন এই তিন শ্রেণীর খেলার পুতুল। সেই অনুসারে, এই বই যে কোন ব্যক্তি বা সমাজকে দিতে পারে সময়োপযোগী ও সঠিক দিক-নির্দেশনা।

আপাতত এটুকুই করলাম। অনুবাদ যদি পাঠযোগ্য হয় তাহলে চালিয়ে যাবো। আপনাদের সমালোচনা ও পরামর্শ আমার একান্ত কাম্য।

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL