অনুভূতির ভালোবাসা

in BDCommunity5 years ago

received_676369919615772.jpeg

Img source

সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছি।গ্রাম ছেড়ে শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছি।তেমন কিছু চিনি না।থাকি এক পরিচিত কাকার বাসায়।নতুন কলেজ,নতুন বই নতুন বন্ধু।সব মিলিয়ে আমিও এই শহরে নতুন।
ভালোই যাচ্ছিলো কলেজের দিনগুলো। ইতিমধ্যে আমি ইংরেজি প্রাইভেট পড়ার জন্য এক স্যারের কাছে গেলাম।গিয়ে দেখি আমাদের কলেজের পরিচিত এক মেয়েও পড়ে সেখানে।

আসলে পরিচিত বলতে ঠিক তেমন না।শুধু চিনি কিন্তু কোনদিন আমাদের মাঝে কথা হয় নি।
আগে বলে রাখি মেয়েটার নাম শিখা ছিল খুব সুন্দরী।যেমন তার চেহারা তেমন তার পড়াশোনা। শিখা ক্লাসে পড়াশোনার দিক দিয়ে সেকেন্ডে গাল।
এইভাবে চলতে লাগলো কিছু দিন। একদিন শিখা প্রাইভেটে আসেনি।পরের দিন শিখা আমাকে বলল যে গত দিন স্যার কি পড়িয়েছেন? আমি বললাম যে right from of verbs পড়িয়েছেন।শিখা আমার থেকে খাতা নিয়ে সব নোট করে নিল।
তারপর আসতে আসতে শিখার সাথে কথা বলা শুরু।দিন যায়,রাত যায় কথা বলা বাড়তেই থাকে।একসময় পড়ার প্রসঙ্গে কথা বলতাম সবসময়।কিন্তু এখন সব বিষয় নিয়েই কথা বলি আমরা।শিখা আমাকে নিজের ব্যাপার এ সব কথা বলতো।আমিও শিখা কে আমার সব কথা বলতাম।
এই ভাবেই অনেক দিন পার হয়ে গেল।
হঠাৎ আমি অনুভব করতে লাগলাম যে শিখার প্রতি আমার দূর্বলতা আছে।
আমি শিখা কে ভালোবাসতে শুরু করেছি।কিন্তু শিখা এই ব্যাপারে কিছুই জানে না।
শিখা আমার খুব ভালো বন্ধু তাই ওকে আমার ভালো লাগে এটা বলার সাহস পাচ্ছি নাহ যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
যতই দিন যায় আমি ততই শিখার প্রতি দূর্বল হয়ে যায়।কিন্তু কি আর করার।কিছুই করতে পারছি নাহ।আমার কাছে শিখার সাথে বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কিছু নেই।আমিও চাইনা যে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাক।
কিছুদিন এইভাবেই চলতে লাগলো।
ইতিমধ্যেই কলেজ বন্ধ হয়ে গেল।আমি আমার গ্রামের বাসায় ফিরে গেলাম।কিন্তু শিখার বাসা কলেজের ওখানেই।কলেজ থেকে একটু দুরে।
আমি বার বার শিখা কে ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু শিখা ফোন ধরে না।আমি কিছু বুঝতেছি না।খুব টেনশন হচ্ছে।একটু পর শিখা আমার ফোন ব্যাক করলো আর কথা বললাম।
ছুটি কাটিয়ে আমি কলেজ করার জন্য শহরে গেলাম।শিখা কলেজে এসেছে।

একদিন শিখা কে বললাম যে আমার সাথে একটু দেখা করবা ব্যক্তিগত কথা ছিল??
শিখা--ঠিকাছে।
আমি-আচ্ছা ওই বটতলায় বিকাল ৫টায় চলে এসো।
শিখা--ঠিকাছে।
আমি শিখার জন্য কিছু চকলেট আর কিছু কালো গোলাপ ফুল কিনে রাখলাম।কারন শিখা কালো গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করে।
পরেরদিন সময় মতো দেখা করার জন্য গেলাম।গিয়ে দেখি আগেই শিখা এসে গেছে।
আজকে শিখা লাল শাড়ি পরে এসেছে।আর আমি পাঞ্জাবি।
আমি মনে মনে ভাবতেছি আজকে আর যাই হোক শিখা কে আমার মনের কথা টা বলেই দিব।
শিখা--কেমন আছো??আর তোমার হাতে ওই সব কি??আমি--না মানে তোমার জন্য কিছু গিফট নিয়ে এসেছি।
শিখা--গিফট?? কিসের গিফট?? আর কেন?
আমি-কি বলবো।কিছুই বুঝতে পারছি না।
সব জরতা শেষ করে বলেই ফেললাম যে-শিখা আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম আসতে আসতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসেছি জানি না।

শিখা আমার চক্ষের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমিও চুপচাপ।কেউই কাউকে কিছু বলছি না।চারদিকে নিরবতা।সুধু পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।।
খানিকক্ষণ বাদে শিখা--কি বললে আবার বলো..??
আমি-আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
বলা মাত্রই শিখা--চুপ কর স্টুপিড।
আমি লক্ষ্য করে দেখলাম শিখার চক্ষ দুটো যেন রেগে আগুন হয়ে আছে।
আমি বললাম তোমার উত্তরটা কি??
শিখা--না নাহহ।
আমি বললাম যে কেন আমাকে তোমার ভালো লাগে না?? নাকি পছন্দ না কোনটা??
শিখা-তুমি আমার বন্ধু এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
আমি কি আমার উত্তর টা পেতে পারি এখন??
শিখা--কখনো সম্ভব না।
আমি কেন??
শিখা --আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিছু দিন আগে।
আমি বললাম কি বলো???? মিথ্যা বলছো কেন?
শিখা-কাঁদো কাঁদো সুরে বলল যে সত্যিই।কলেজ বন্ধ হলে বারিতে গেছিলাম তখন আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
আমি বললাম যে যদি সত্যি বিয়ে ঠিক হয়ে থাকে তাহলে কাঁদছো কেন?
শিখা--আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
বলে মাথা নিচু করে কাঁদছে।
আমি সুনে তো অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছি।
কি হচ্ছে এইসব???
আমি বললাম সত্যি নাকি??
শিখা-- হ্য্য সত্যি।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে হতভাগার মতো দাড়িয়ে আছি।
শেষ প্রান্তে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আমরা দুইজন দুইজন কে ভালোবাসি
দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলবো??এখন কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না
শিখা--আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে রে এখন কি হবে??
আমি চুপ করে আছি।
শিখা--কি হলো বলো??
আমি বললাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
শিখা-ফাজলামোর একটা লিমিট আছে।আমি কিন্তু চলে যাবো..??আমাকে ভালোবাসিস না??
আমি বললাম--বাসি রে অনেক ভালোবাসি তোমাকে এই বলে শিখা কে জরিয়ে ধরলাম দুইজন দুজনকে।
তারপর ভালোবাসার কথা বললাম দুইজন কে।
অতপর সে দিন চলে আসলাম।
বাসায় ফিয়ে এসে সব সময় শিখার কথা মনে পরে।খেতে বসলে,পড়তে বসলে,ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না।
ওদিকে শিখাও বার বার আমাকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে।ফোন ধরলাম।
শিখা--কি হবে এখন?আমার যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে??
আমি --এই মহূর্তে কিছু করা ঠিক হবে না।কারন কইদিন পরেই আমাদের ফাইনাল এক্সাম।
শিখা--ফাইনাল এক্সাম নিয়েই বেশি টেনশন কারন এক্সাম শেষ হলেই আমার বিয়ে দিবে আব্বু।
আমি --আচ্ছা এখন পড়তে বসো। আমিও পড়ি। পরে কথা হবে।শিখা কে তো পড়তে বসতে বললাম আর এইদিকে আমি শুধু এক টেনশন করেই যাচ্ছি ফাইনাল এক্সাম পর কি হবে??
আমি কি শিখা কে পাবো না?? নাকি শিখ আর আমার হবে না??
রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না।
শিখার সাথে কথা বলে পারিবারিক ভাবে শিখার আব্বু,আম্মুর সাথে কথা বললাম।সবাই রাজি হয়ে গেল কিন্তু শর্ত দিল যে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে বিয়ে।
আমরা তাতেও রাজি।
অতপর শিখা আমার,আর আমি শিখার।
গল্প টা শেষ হয়েও যেন হইলো না শেষ।
ধন্যবাদ।
নিজে ভালো থাকবেন।
অপরকে ভালো রাখবেন।
image.gif