নদীর তীরের সূর্যাস্ত।
প্রকৃতির এক অপরূপ রূপে সজ্জিত দিন শেষের সূর্যাস্তটা। সব কিছু নিস্তব্ধ , সবাই যেন তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যাস্ত । রাত ঘনিয়ে এসেছে সবাই নিত্যদিনের কর্ম শেষে বাড়ি ফিরছে। পাখিদের আনা গুনাও প্রায় শেষের দিকে। সেই সময়ে নদীর তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখার আলাদা একটা মজা। গাঢ় লাল রঙে সজ্জিত সূর্য প্রায় প্রায় ডুবে যাচ্ছে। আমি বাড়িতে গিয়ে সেই অপরূপ রূপে সজ্জিত মুহূর্তের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। যখন লকডাউন ছিল তখন বাড়িতে গিয়ে আমি আমার মামার সাথে নদীর কিনারে ঘুরতে যাই। জীবনের প্রথম নদীর তীরে সূর্যাস্ত উপভোগ করেছিলাম সেই দিন।
আমাদের বাড়িতে অনেক যদি আছে যে গুলো আমাদের বাড়ি একটু দূরে , তাই একদিন মামা আর আমি মিলে প্ল্যান করলাম সেখানে ঘুরতে যাবো। সেই দিন আমার আম্মুকে কিছু না বলেই চলে যাই। ভেবেছিলাম ২ ঘন্টার মধ্যে চলে এসব। কিন্তু কোনো কারণে ৪ ঘন্টা লেগেছিলো বাড়িতে ফিরতে। অন্যদিকে আম্মু অনেক রাগান্নিত। মামাকে অনেক বার কল করেছে। আমি ফোন ধরার পর আমাকে বকা দিতে লাগলো। যখন বাড়িতে আসি তখন দেখি আমার আমাকে মারার জন্য রেডি হয়ে আছে। অনেক আবদার করার পর আমাকে মুক্তি দিলো। যদিও অনেক বকা শুনতে হয়েছে। কিন্তু সেই অনুভতির কাছে সেটা বিন্দু মাত্র।
নদীর তীরে আমি ,মামা সাথে আরো একটা বন্ধু মিলে একসাথে যাই। আমাদের গন্তব্যের পথের রাস্তাটা এত সুন্দর ছিল যে , ঢাকার শহরের অনেক রাস্তাই তার কাছে ব্যার্থ । আমি কখনো কল্পনা করতে পারিনি আমাদের গ্রামে এত সুন্দর রাস্তাও রয়েছে। আমরা সেখানে একটা অটো দিয়ে যাই ,খোলা বাতাস আর মনুমুগ্ধকর রাস্তা স্বপ্নের মত লাগছিলো। আমাদের অটোতেই প্রায় ৫০ মিনিট সময় কেটে যায় । তারপর একটা হোটেল থেকে অনেক গুলো তেলেভাজা খাবার কিনে নদীর কিনারে বসে বসে খাই। নদীর কিনারে বসে কয়েকজন মিলে খাওয়া আর মনোরম পরিবেশকে উপভোগ করার অনুভুতিটা আমি বলে প্রকাশ করতে পারবনা।
এই নদীর কিনারে বসে সূর্যাস্ত দেখাটা ছিল আমার জীবনের সব চেয়ে বড় পাওনা। আমি তখন পর্যন্ত আর কোনো দিন এই পরিবেশকে অনুভব করতে পারিনি । নদীর তীরের পশে একজন বসে মাছ ধরছিল। আমরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করি সে কতটা মাছ পেয়েছে। সে আমাদের একটা ব্যাগ দেখিয়ে বলে "মাছ নেই " . কিন্তু তার বেগটা মাছে ভর্তি ছিল। আর সে এখন মাছ ধরার কারণ বেশির ভাগ মাছ সন্ধ্যা বেলায় নদীর কিনারে থাকে। আমার ইচ্ছা আছে আবার বাড়িতে গিয়ে মামাকে নিয়ে আরো একটা জায়গায় যাবো।
নদীর কিনারে বসে রক্তিম লাল সূর্যটাকে দেখা তার পাশ দিয়ে নৌকা বাধা আবার অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে একটি নৌকার স্টেশন। যেখান থেকে মানুষ নৌকায় উঠে। এই সূর্যাস্তটা ১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেলো। সূর্যাস্ত দেখার সময় আমি যেন এই পৃথিবীর বাইরে চলে গিয়েছিলাম । ভাবনাচিন্তা গুলো সব দূর হয়ে গিয়েছিলো। আমার মনটা একটা নতুন জীবন ফিরে পেলো। আমার চিন্তা শক্তি মূহর্তের মধ্যে কাজ করা বন্ধ করে দিলো। এ এক নতুন জগৎ।
একটু পরই যখন সূর্য ডুবে গেল তখন দেখি আমি আবার সেই আগের জগতে ফিরে এসেছি। কিন্তু আমার মনটা আগের থেকে অনেক হালকা। যে কেউ সেখানে বসে তার মনটাকে সাদা মাটা করে আসতে পারবে। প্রকৃতির এই অপুরূপ সুন্দর্য কখনো টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যাবে না। এটা শুধু আল্লাহর দান। যার সাথে টাকার তুলনা অসম্ভব। প্রকৃতির সুন্দর্যের তুলনা কেবল প্রকৃতির সাথেই সম্ভব।
আমি আজকে অনেক সুন্দর্যের সাথে পরিচিত নই। কারণ আমাদের এই শহরে প্রকৃতি বলতে কিছুই নেই। এই প্রকৃতির উপভোগ নেয়ার জন্য প্রকৃতির বুকে অবস্থান করতে হবে। যেটা শুধু গ্রাম অঞ্চলেই সম্ভব। আমি আজ আমাদের গ্রামের প্রতি গর্বিত। আমি গ্রামে এত সুন্দর জায়গা আজ আছে। ধন্যব্যাদ মামাকে এত সুন্দর জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য !
Image source :- Pixabay
Beautiful Place
Thank you :)