অপেক্ষা

in BDCommunity4 years ago

স্ত্রী সুরাইয়া আর ৫ বছরের সন্তান ইমনকে নিয়ে ছিল হাসানুজ্জামানের ছোট পরিবার। তাদের এই সংসারে তাদের সাথে থাকত হাসানুজ্জামানের ছোট ভাই ফিরোজ। মাঝে মাঝে কয়েকদিনের জন্য তাদের মা বেড়াতে আসত। একদিন অফিসে যাওয়ার পর আর ফিরে আসে না হাসানুজ্জামান। নানাভাবে খোঁজাখুঁজির পরও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু সুরাইয়া বিশ্বাস করে তার স্বামী একদিন ফিরে আসবে। আর এই অপেক্ষাতেই সে বছরগুলি পার করে দেয়। কিন্তু তার ব্যবহারে ভিন্নতা আসে। সে আস্তে আস্তে নিজেকে গুঁটিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝেই অতি অল্প কারণেই তার ছেলে-মেয়েদের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে সুরাইয়া তার সন্তানদের নিয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে যায়। ধীরে ধীরে ইমন বড় হয়। এক সময় এক পীর এসে সুরাইয়াকে বলে যেদিন ইমনের বিয়ে হবে সেদিন ইমনের বাবা ফিরে আসবে। একদিন বিয়ে হয় ইমনের। এভাবেই এগিয়ে চলে তাদের জীবন।

[গল্পের সোর্স] লেখক -হুমায়ূন আহমেদ

ঘর খুলিয়া বাইর হইয়া,
জোছনা ধরতে যাই
আমার হাত ভর্তি চাঁদের আলো,
ধরতে গেলেই নাই...।
সোর্স

picture source
adorer-chele-1.png

সুমাইয়া অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলের নাম ইমন ।বয়স ৫বছর ৩ মাস।মাথা ভর্তি কোকড়ানো চুল।লম্বাটে ধরনের মূখ।মাঝে মাঝে সেই মুখ কোন এক বিচিএ কারনে গোলগাল দেখাচ্ছে ।ইমন তার মায়ের বিস্মিত দৃষ্টির কারণ ধরতে পারছে না।সেই ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকিইয়ে আছে।ভ্রু কুচকানোর এই বদাভ্যাস সে পেয়েছে তার বাবার কাছ থেকে।ইমনের বাবা হাসানুজ্জামান অতি তুচ্ছ কারনে ভ্রু কুচকানো ভ্রু শজে মসৃন হয় না।
সুরাইয়া বলল,ইমন একটা কাজ কর।আমার শোবার ঘরে যাও।ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটার সামনে দাড়াও।দাড়িয়ে সুন্দর করে হেসে আবার আমার কাছে চলে এসো।
ইমন বলল ,কেন?
আমি যেতে বলছি এই জন্য যাবে।সব কিছুতে কেন কেন করবে না।
ইমন স্রু গলায় বলল,খুব খারাপ হয়।বড়্রা কোন কথা বললে কেন কেন না বলে সি কথা শুনতে হয়।তোমাকে আয়নার সামনে যেতে বলছি তুমি যাও ।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে হাসবে।মনে থাকে যেন।
হাসলে কি হবে?
হাসলে খুব মজার একটা ব্যাপার হবে,
ইমন দাঁড়িয়ে হাসলে মহার কিছু হবে বলে তার মনে হচ্ছে না।বড়রা যে প্রায়ই অর্থহীন কথা বলে এই সত্য সে ধরতে শুরু করেছে।
ইমন আয়নার সামনে গেল ।ঠোট টিপে ভ্রু কুচকে নিজের দিকে তাকিয়ে রইল ।মা হাসতে বলেছেন।না হাসলে মজার কিছু ঘটবে না। কাজেই সেই সামান্য হাসল।এত সামান্য যে ঠোট পর্যন্ত ফাক হল না। মজার কিছু ঘটল না।ঘটবে না তা সে জানতো।বড়্রা ছোটদের ভুলাবার জন্যেই মিথ্যা কথাও বলে।ইমন আয়নার সামনে থেকে সরে গেল।রওনা হল তার দাদীর ঘরের দিকে।মিথ্যা কথা বলায় মা'র কাছে তার এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না ।সে ঠিক করল মায়ের সামনে দিয়েই সে দাদীর ঘরে যাবে তবে মা'র দিকে ফিরে তাকাবে না।শুধু শুধু আয়নার সামনে দাড় করানোয় মা'র উপর তার রাগ লাগছে।
সুরাইয়া মিথ্যা কথা বলে নি।ইমন যদি আয়নার সামনে দাড়িয় হাসত তাহলে সত্যি মজার একটা ব্যাপার ঘটত ।ইমন দেখতে পেত তার সামনের পাটির একটা দাত পরে গেছে।সামান্য একটা দাত পরে যাবার জন্যে তার চেহারা গেছে পালটে ।তাকে চেনে যাচ্ছে না।
সুরাইয়া আগ্রহ নিয়ে বারান্দায় অপেক্ষা করছে।এই বুঝি ছেলীর বিকট চিৎকার শোনা যাবে -"মা, আমার দাত পড়ে গেছে।মা আমার দাত পড়ে গেছে।" সে রকম কিছুই হল না ।ছেলেকে গমীর ভঙ্গিতে বারান্দায় আসতে দেখা গেল।মা'র সামনে দিয়েই সে যাচ্ছে অথচ সে তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না।সুরাইয়া ডাকল,এই ব্যাটা। এই "ইমন মায়ের ডাজ সম্পুর্ন আগ্রহ্য করে ঢুকে গেল দাদীর ঘরে ।সুরাউয়ার মন্টা খারাপ হয়ে গেল ।এই ছেলে কি পুরোপুরি তার বারার মত হয়ে যাচ্ছে? রোবট মানব?কোন কিছুতে কোন আগ্রহ নেই ,কৌতুহল নেই ।বিস্মিত হবার ক্ষমতা নেই।প্রথম দাত পড়া যে কোন শিশুর জন্যে বিড়াট রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা,অথচ ইমন কেমন নির্বিকার।
দাদীর ঘরে ঢোকার আগে ইমন তার ছোট চাচার ঘরের সামনে দাড়াল।ছোট চাচাকে তা বেশ ভাল লাগে।ছোট চাচা বড় মানুষ হলেও বড়দের মত না।ছোট চাচার ঘরের দরজা খোলা ।তিনি ইমনকে দেখে ডাকলেন-এই যে মিষ্টার স্ট্রং ম্যান ।শুনে যা। ইমনের তখন আর ঢুকতে ইচ্ছে করল না।সে রওনা হল দাদীর ঘরের দিকে।ইমন ছোট চাচা ফিরোজ ঘর থেকে বের হল।সুরাইয়ার কাছে গিয়ে হাই তুলতে বলল ,ভাবী একটু চা খাওয়াওতো।

Sort:  

গল্পটা ভালো ছিল 🙂