ছোট গল্পঃ প্রবাসী ও তার শেষ বেলা

in BDCommunity3 years ago

Hello, Guys. Assalamualaikum every hive blog user.সবার সুস্থতা ও ভালো থাকা কামনা করার সাথে আজ শুরু করছি আমার একটি লেখা।লেখাটি হলো সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি একটি ছোট গল্প।



ছোট গল্পঃ প্রবাসী ও তার শেষ বেলা


source


| আজীমের বয়স তখন প্রায় ২৫ বছর যখন সে বিদেশ পাড়ি জমায়। তার বিদেশ যাওয়ার খুব একটা দরকার তখন ছিলোনা কিন্তু তার খুব দরকার ছিলো তার ছোট ভাইবোন গুলোকে মানুষের মতো মানুষ করার,বৃদ্ধা বাবা-মা গুলোকে একটা সুখী জীবন দেওয়ার।দরকারটা শুধু দায়িত্বের খাতিরে ছিলোনা, তার দরকারটাই ছিলো তার ইচ্ছা,তার স্বপ্ন। সে দেখতে চেয়েছিলো তার ভাইবোন গুলো কেও ডাক্তার বা কেও ইঞ্জিনিয়ার হবে।এসবের কারণেই তার বিদেশ গমন।যখন সে প্রথম নিজ দেশ ছেড়ে ভিনদেশে যায় তখন তাদের গ্রামের বাড়িতে একটা আধভাঙ্গা বাড়ি ছিলো।কিন্তু আজীম বিদেশ যাওয়ার ৫ বছরের মাথাতেই তার গ্রামে ৩ তালা বিল্ডিং উঠে, গোয়াল ঘর খড়ের চালা থেকে টিনের চালা হয়।ভাই শহরের প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে ভর্তি হয়,বোন গ্রামের ভালো কলেজে ভর্তি হয়।আজীম ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বাবা-মা কে বলে, " মা বাড়ি আহি,৫ বছর হইয়া গেছে তোমাগোরে দেহিনা। "কিন্তু বাবা মা বারবার ছেলেকে বুঝ দেয়," না বাপজান আর কয়ডা বছর কাম কর,তোর বইনডার তো বিয়া দেওন লাগবো তার উপর তোর ছোড ভাইডার ও শহরে মেলা খরচ হয়। "এভাবে আরো ৫ বছর যায় এখন আজীমের বয়স ৩৫ বছর। তার মনে পড়ে তার একটা জীবন আছে।সে ভাবতে থাকে, তার জীবনে এখন একটা বউয়ের প্রয়োজন,সন্তানের প্রয়োজন।সে আবার মা কে ফোনে বলে," মা এহন তো আইছি প্রায় ১০ ডা বছর হইতে চললো আমি বিদেশ আইছি।বয়স ও অনেক হইয়া যাইতেছে আমার এহন তো একডা বিয়া ও করণ লাগবো আমার আর টাহা পয়সাও মেলা কামাইছি এহন বিদেশ ছাইড়া দিয়া দেশে আইসা কিছু একডা করি।তাইলে আমগো চইলা যাইবো। মা উত্তর দেয়," হায় হায় বাপজান!!কি কছ তুই এসব, এহনো তোর বইনের বিয়াশাদি বাকি। ওই কামে তো মেলা খরচ হইবো আর কয়ডা বছর অপেক্ষা কর। তোর বইনডার বিয়া হোক তারপর আইসা পরিছ। " এসব শুনে আরো ২/৩ বছর থেকে আজীম বোনের বিয়ে দেয় শহরের অনেক বড়লোক বাড়িতে।বাবা মা কে ডাক্তারখানায় যাওয়ার সুবিধার কারণ শহরে বাসা ভাড়া করে এনে রাখে।এভাবে দিন যায় আর বাসায় ফোন দিলেই শুধু বাবা বলে," বাবা একডা ভালা লাডি দরকার,তুই পাঠাইছ তো। ওইহানে বলে ভালা পাওন যায় "।মা বলে, " আব্বা একডা ভালা বোরকা পাডাইছ তো, এহানের গুলা ভালা হয়না "। বোনে বলে " ভাই তোমার ভাগিনার জন্য স্কুল ব্যাগ পাঠাইয়ো তো "। ভাইয়ে বলে, " ভাইয়া আমার জন্য তুমি একটা আইফোন দিবা কিন্তু "। এমন চলতে চলতে আজীম একদিন সিদ্ধান্ত নেয় সে চলে আসবে। কিন্তু আসার ৩ দিন আগেই সে এক্সিডেন্ট করে ফেলে আর একদম প্যারালাইজড হয়ে যায় শুধু চোখ খোলা বন্ধ করতে পারে।তাকে তার সেখানকার এম্বাসি ১ বছর ট্রিটমেন্ট চালায় কারণ এম্বাসি অনেকরকম ভাবেই আজীমের বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু এক্সিডেন্ট এবং প্যারালাইজের কথা শুনেই তার বাড়ি থেকে বলে যে, " আমাদের এমন কোনো আত্বীয় নেই। "এভাবে এম্বাসি ট্রিটমেন্ট করাতে করাতে দেড় বছর পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয় সেখান থেকেও এখনো তার বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু কেও ই তাকে একটি বার দেখতেও আসেনি। দেখতে আসা তো দূরের ই কথা আজীম যে তাদের ছেলে বা ভাই সেটাই কেও এখনো স্বীকার ই করেনি।আর আজীম শুধু চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে উপরের দিকে আর হয়তো ভাবে কি করলো সে কার জন্য করলো!!এর নাম কী পরিবার!এটাই কি তার শেষ বেলা!!.....


কলমেঃ- শাহাদাত হোসেন