দিন দিন সমাজে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। কেন মানুষ এই নিকৃষ্ট কাজে প্রবৃত্ত হয়? আমি ধারবাহিক তিন পর্বে এদেশের ধর্ষক, ধর্ষিতা এবং অবশিষ্ট সমাজের মনস্তাত্ত্বিক সমিক্ষণের মাধ্যমে ধর্ষণ সমস্যার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব। আজ প্রথম পর্ব: ধর্ষণের পটভূমি এবং ধর্ষকের মনস্তত্ত্ব..
এই কিছুদিন আগেও করোনার মধ্যে নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার হলো হিরামনি নামের একটি মেয়ে। তার ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে লাশ আনতে গেছে মা। মেয়ে বাড়িতে একা। কিছু নরপশু মেয়েটিকে সেই সুযোগে ধর্ষণ করে হত্যা করে।
এগুলো যখন পড়ি, তখন আমার শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে। একটি মেয়ে হিসেবে আমার মনে আতঙ্ক চেপে বসে- এ সমাজে আমি কতটুকু নিরাপদ? আমার সন্তান কতটুকু নিরাপদ থাকবে?
এটা কি একটা মনুষ্যসমাজ? নাকি মানুষের মুখোশ পরা কতগুলো পশু আমাদের চারপাশে বসবাস করে? জানি, সবাই খারাপ না। মুখোশ তো আর সবাই পারে না। কিন্তু মুখোশের আড়ালে কে যে পশুত্ব বহন করে চলে অন্তরালে, সেটা তো আমার জানা নেই!
আমরা দিন দিন যত আধুনিক হচ্ছি, ততো যেন মানুষের মাঝে পশুত্ব বেড়ে যাচ্ছে! আমরা সবাই একটা মানবিক পৃথিবী কামনা করি। তাহলে কেন এসব ঘটে সমাজে? একজন ধর্ষকের মনস্তত্ত্ব কি? শুধুই কি সেক্স, যৌনতা, জৈবিক চাহিদা.. নাকি আরো কিছু?
অনেক সময় দেখা যায়, ধর্ষকের ঘরে স্ত্রী আছে। তবু কেন তারা এই নিকৃষ্ট কর্মে লিপ্ত হয়? আমার উপলব্ধিতে যে কারণগুলো এর পিছনে রয়েছে বলে মনে হয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করলাম।
০১. কিছু বিপথগামী যুবক বিভিন্ন অরুচিকর ভিডিও আর নিষিদ্ধ গল্পে অভ্যস্ত হতে হতে তাদের স্বাভাবিক রুচি বিকৃত হয়ে যায়। বিকৃত মানসিকতার ফলে একটি শিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে ধর্ষণ করতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। সদ্য পিতার মৃত্যুসংবাদপ্রাপ্ত মেয়েটিকে পর্যন্ত তারা ছেড়ে দেয় না।
০২. সময় মত বিচার এবং উপযুক্ত বিচার না হওয়া আরেকটা প্রধান কারণ। আমাদের সমাজে ধর্ষণের উপযুক্ত প্রমাণ থাকার পরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিচার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘায়িত হয়। কখনো কখনো প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি হয় না। আবার কখনও কখনও তাদের শাস্তি হলেও সেটি এত দীর্ঘ সময় পরে কার্যকর হয় যে, মানুষ ঘটনাটি ভুলে যায়। ফলে শাস্তিগুলো সমাজে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার কথা, সেটি করতে পারে না।
০৩. নেশা ও একটা প্রধান কারণ। কেউ যখন নেশা করে, তাদের স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। নিজের উপর তাদের কন্ট্রোল থাকে না। তখন তারা একটি নারীকে শুধুমাত্র মাংসের দলা মনে করে। মানুষ মনে করে না।
০৪. দেরিতে বিয়ে হওয়া ধর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ। আমাদের সমাজে বিয়ে অনেক জটিল করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে অনেক যুবকের মনে হতাশা সৃষ্টি হয়। খারাপ আড্ডায় লিপ্ত হয়ে এবং খারাপ আলোচনা করতে করতে তাদের মন খারাপ কাজে ধাবিত হয়।
০৫. পারিবারিক শিক্ষার অভাব আমাদের সমাজে প্রকট। যত দিন যাচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন যেন দুর্বল হচ্ছে। মা-বাবা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। সন্তান একা একা মানুষ হচ্ছে। ফলে যে পারিবারিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধ ছোটবেলা থেকেই তাঁর পাওয়ার কথা, সেটি সে পাচ্ছে না। এই ঘাটতি তাকে মনুষত্ব থেকে পশুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
০৬. আমাদের সামগ্রিক যে বিনোদন ব্যবস্থা, তার একটি প্রভাব রয়েছে আমাদের মনস্তত্ত্বের উপর। একটা ছেলে ছোটবেলা থেকে যে ধরনের ভিডিওগেম খেলে, যে ধরনের মুভি দেখে, যে ধরনের আড্ডা দেয়, সেগুলো তাকে সহিংসতা এবং চারিত্রিক বিচ্যুতি শিখায়। ফলে তার মাঝে নোংরা মানসিকতার জন্য জন্ম হয়।
এগুলোর বাইরে হয়তো আরো অনেক কারণ আছে। তবে আমি চেষ্টা করেছি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ সমস্যার পেছনে যে প্রধান বাস্তবসম্মত কারণগুলো আছে সেগুলো চিহ্নিত করতে। আর যদি কারণ উপলব্ধি করা যায়, তখন সেগুলো নিয়ে কাজ করে শিকর থেকে সমস্যার মূলোৎপাটন করা সম্ভব হবে।
আমরা সহিংসতাবিহীন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ একটি মানবিক পৃথিবী প্রত্যাশা করি। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন মানুষ হয়ে ওঠা। যতদিন মানবিকতার চাষাবাদ আমরা নিজেদের মধ্যে এবং আমাদের আশেপাশের মানুষের মধ্যে করতে না শিখবো ততদিন পরিবর্তন আসবে না।
সুস্থ মানসিকতার অভাবে দিন দিন ধর্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচারের আশা না করাই ভালো। তবে ওপারে ঠিকই বিচার হবে তখন কেউ আটকাতে পারবে না।
ওপারের বিচার অতি ভয়ংকর হবে। তবে এপারেও কঠিন বিচার হাওয়া দরকার। নইলে সিচুয়েশন চেঞ্জ হবে না
বিচার কার্যকর হতে হতে আমারা মনে হয় না বেঁচে থাকবো।তারপরও আশা করছি তাদের খুব দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করবে।
আশা করি একদিন এই সিচুয়েশন চেঞ্জ হবে। তখন সাথে সাথে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এরকম নিকৃষ্ট অপরাধীদের।
Continue.. I will wait for the next part.
Thanks.. I will continue as possible.
To be continued..
Congratulations @rimubd! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
Hi @rimubd, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON