সারাবিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত এতটুকু বলা যায় যে করোনা সমস্যা একটা লম্বা সময় ধরে আমাদের ফেইস করতে হবে। যদিও ভ্যাকসিন তৈরি করতে আরো অনেক সময় লাগবে। কিন্তু ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর তা উৎপাদন করে ৬০০ কোটি মানুষের কাছে পৌছানোর জন্যেও অন্তত ৩-৪ বছর সময় তো দিতেই হবে। তো করোনা সমস্যা মোকাবেলার জন্য যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন, সেটা একটা লম্বা সময়ের কথা মাথায় রেখেই চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
করোনায় সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক খাত। আমাদের দেশও ব্যাতিক্রম না। আমাদের অর্থনীতি আজ বিশাল হলেও তার ভিত্তি হলো বৈদেশিক রিজার্ভ ও গার্মেন্টস। দুঃখের বিষয় হলো আজ এই দুটো খাতই সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। একারণে এই বছরে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আগের যেকোনো বারের চেয়েও বেশি হবে। এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হল নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে, তা নিয়ে নিচে আমার চিন্তা ভাবনা শেয়ার করছি।
১) গার্মেন্টস সেক্টর: বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানা সমূহ সরকারি সহায়তায় নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কারখানার নিয়ন্ত্রন সরকারের হাতে থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়।
২) ইকমার্স: ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য এলাকাগুলোতে ইকমার্স এখনো এত বেশি প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সরকারি মনিটরিং এর মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা ও নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে পারলে বাংলাশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও অনেকে অল্প মূলধনে ব্যাবসা শুরু করতে পারবে।
৩) বাইসাইকেলের ব্যবহার: পৃথিবীর সব দেশেই বাইসাইকেলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। কিন্তু আমাদের দেশে এটা তেমন একটা দেখা যায় না। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকার চেয়ে সরকার যদি প্রত্যেককে বাইসাইকেল ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে, তাহলে তা দেশের পরিবেশ বাঁচাবে, জ্যাম ও করোনায় অন্যের থেকে সংস্পর্শ থেকে মুক্তি দিবে।
৪) ট্যাক্স এর প্রতি আগ্রহ তৈরি: দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দেয়, তাদের জন্য আলাদা কিছু সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেন মানুষ ট্যাক্স পে করার প্রতি আগ্রহী হয় এই ভেবে যে ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যা হলে সরকারের তরফ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগীতা পাওয়া যাবে।
৫) দুই শিফট: ঢাকার বেশিরভাগ অফিসকে দুই শিফট এ ভাগ করা যেতে পারে। এতে শুধুমাত্র দিনের বেলায় শহরের উপর চাপ কমানো যেতে পারে। শহরের গণপরিবহন সংকট কাটিয়ে উঠাও সম্ভব এর মাধ্যমে।
৬) কৃষি সেক্টর: যে কোনো দেশের জন্যই কৃষি সেক্টর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমাদের দেশে দিনকে দিন কৃষক ও কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। এই কারনে শিক্ষিত জনমানুষের কৃষিকাজের প্রতি তেম একটা আগ্রহ দেখা যায় না। অথচ শিক্ষিত মানুষ কৃষিকাজে আসলে এই সেক্টর খুব দ্রুত আরো অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবে। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির কারনে সৃষ্ট বেকার সমস্যা কাজে লাগানো যেতে পারে। যারা চাকরি হারিয়েছে, তাদেরকে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। বিশেষ করে যাদের নিজস্ব জমি আছে, কিন্তু শিক্ষিত বেকার, শুধুমাত্র তাদের নির্দিষ্ট কিছু তালিকা তৈরি সরকারি ভাবে সব ধরনের সহায়তার মাধ্যমে ভাল একটা অবস্থান তৈরি করা সম্ভব।
৭) কারিগরি শিক্ষা: করোনা পরবর্তী সময়ে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগের চেয়েও বেশি জোর দেয়া হবে সবচেয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশে এখনোও সেভাবে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় হয় নি। কারিগরি থেকে পড়াশোনা করলে অন্তত শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের অভাব হয় না, যেটা জেনারেল লাইনের স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে সম্ভব না। তাই শুরু থেকেই কারিগরি শিক্ষার প্রতি আরো একটু বেশি নজর দিলে আমরা কিছু বছরের মাঝেই ভালো ফল পাবো বলে আশা রাখতে পারি।
এসব ছাড়াও আরো নানা উপায় আছে করোনা পরবর্তী সময়ে করোনার ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। তবে আমি আমার কাছে যেসব অতি গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে, শুধুমাত্র সেসব বিষয় এখানে তুলে ধরলাম। আশা করি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করা সম্ভব।
Hi @reza-shamim, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON