আমার ছোট্ট জোহা...

in BDCommunitylast year

একটু একটু করে বড় হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট্ট জোহা। চুপচাপ, শান্ত আর মাঝে মাঝে হাত পা এদিক সেদিক ছুড়ে বিড়ালের মতো ম্যাঁও ম্যাঁও করে কান্না করা মেয়েটা এখন হাত ও হাঁটুতে ভর দিয়ে হামাগুড়ি করে এদিক সেদিক যেতে পারে। মাঝে মাঝে তো কোনো কিছু ধরে প্রায় দাঁড়িয়েও যায়। হাটুতে এখনো তেমন জোর আসে নি। তবে হয়তো কয়েক মাসের মাঝেই সেই জোর চলে আসবে। তখন কোনো সাপোর্ট ছাড়াই এক রুম থেকে অন্য রূমে ছুটে বেড়াবে সে।

সময় কত দ্রুত চলে যায়, তাই না? মনে হচ্ছে এইতো সেদিন কয়েক সেকেন্ডের ছোট এক চিৎকারে পৃথিবীকে জানান দিয়েছিল নিজের আগমনের। ছোট ছোট চোখে পিট পিট করে এদিক সেদিক তাকানো আর নরম ছোট হাত দিয়ে আলতো করে এটা সেটার স্পর্শ নিতে থাকা মেয়েটা আজ আমার বড় হয়ে গিয়েছে। মুখের ভেতর পাঁচটা দাঁতও উঠেছে এখন। ইদুরের মতো শক্তিশালী সে দাঁত দিয়ে মুহুর্তেই যে কোনো কিছুকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে ফেলতে পারে সে এখন।

প্রথম দিকে জোহাকে খুব শান্ত বলে মনে হলেও এখন দিন দিন অশান্ত হয়ে উঠছে। চুপচাপ কোথাও শুয়ে কিংবা বসে থাকতে চায় না। এদিক সেদিক হুটোপুটি করে বেড়ায়। শুইয়ে দিলেও টুপ করে উঠে যায়। আর রাতের বেলা তো কথাই নেই। তাকে কোলে নিয়ে ঘন্টাখানেক এই রুম থেকে অন্য রুমে নিয়ে হাঁটাহাটি না করলে তার ঘুম আসে না। তবে বাবা হিসেবে এইটুকু কাজ করতে আমার বেশ ভালই লাগে। সারাদিনের অফিস শেষে ক্লান্ত আমি রাতের বেলার এই ছোট্ট ডিউটিটা খুব বালই উপভোগ করছি। সব মিলিয়ে দিনগুলো আমার খুব সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছে।

প্রায় ৪ মাস পর কোনো লেখা লিখছি। আলসেমি হোক বা অন্য যে কোনো কিছুই হোক না কেন, এই চার মাসে কোনো কিছুই আমার লেখা হয় নি। অথচ আগে প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখার সুযোগ পেতাম। এখন আর তেমনটা হয় না। এমনকি নোটপ্যাড খুলে বসলেও কোনো শব্দ মাথায় আসে না। দুই এক লাইন লেখার পর আর এগুতে পারি না। রাইটিং ব্লক বলে একটা কথা আছে না? এমনটাই বোধহয় চলছে।

টুকটাক এটা সেটা লেখা একসময় আমার শখের ছিল। অবসর সময়গুলোতে আমি অনেক কিছু নিয়ে লেখার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে আমার প্রতিদিনের খুটি নাটি বিষয়গুলো লিখে বিডিকমিউনিটিতে সবার আগে শেয়ার করতাম। এই জায়গাটা আমার কাছে একটা ডায়ারির মতো হয়ে আছে। আমার প্রোফাইলটা তাই মাঝে মাঝে ভিজিট করে পুরানো লেখাগুলো পড়ি। ভালই লাগে।

তবে মজার বিষয় হল, আগে যে সময়টুকুতে লিখতাম, এখন সেই সময়টুকু ম্যানেজ করতে পারি না৷ সারাদিন অফিস শেষে বাসায় এসে কোনো ভাবে ফ্রেশ হয়ে সামান্য কিছু খেয়েই মেয়ের সাথে আমার সময় কাটানো শুরু হয়ে যায়। আর আমার মেয়েও এখন একটু একটু করে সবকিছু বুঝতে শিখেছে। সারাদিন তো আমাকে দেখতে পায় না, কিন্তু সন্ধ্যার পর যখন আমি তার সামনে যাই, তার চোখে মুখে অদ্ভুত এক আনন্দের ছায়া দেখতে পাই আমি। সবকিছু ছুড়ে দিয়ে আমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে। আর আমিও তাকে আমার কোলে নিয়ে ফেলি। বুকে জড়িয়ে ধরে রাখি। অদ্ভুত এক প্রশান্তি। এই অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না।

তবে মুদ্রার ওপিঠও কিন্তু আছে৷ জোহা যত বড় হচ্ছে, ওকে নিয়ে চিন্তার পরিমানটাও কিন্তু ততই বাড়ছে। যেহেতু সে এখন এদিক সেদিক মুভ করতে পারে, তাই ভয় হয় হুট করে যদি বিছানা থেকে পড়ে যায়। দুই একবার কিন্তু এরকম হয়েছেও। নিজে নিজে হামাগুড়ি দিয়ে বিছানা থেকে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমসয়া হয় নি। তবে চিন্তা তো হয়, তাই না?

বাচ্চার খাওয়া দাওয়া নিয়েও কিন্তু বিশাল এক যুদ্ধ করতে হয়। যেহেতু জোহার বয়স প্রায় ১০ মাস হয়ে গিয়েছে, তাই ওকে নতুন নতুন নানা রকমের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রথম দিকে মোটামুটি সবই খেত। কিন্তু এখন আর কিছুই খেতে চায় না। খাবার দেখলে মুখ বন্ধ করে রাখে। জোর করে খাওয়াতে গেলে মুখ থেকেই সব ছিটকে ফেলে দেয়। মাঝে মাঝে মনে হয় খাবার হাতে আমাদের দেখলে সে হয়তো মনে করে যে আমরা যুদ্ধ করতে আসছি।

খাবার নিয়ে জোহা কিন্তু খুব ভাল নাটকও করতে পারে। যতক্ষণ খাওয়ানোর চেষ্টা করব, ততক্ষণই উশখোশ, কান্নাকাটি ক্ক্রবে। কিন্তু যেই না খাবার সামনে থেকে সরিয়ে ফেলব, সে একেবারে সুন্দর করে হাসতে শুরু করবে যেন এতক্ষণ কিছুই হয় নি। এত তাড়াতারি মুড সুইং হওয়া খুব সম্ভবত আমি কখনই দেখি নি।

আরেকটা বিষয়। খাবারের জিনিস নিয়ে তার যতই অনীহা থাকুক না কেন, অকাজের জিনিসের প্রতি কিন্তু তার আগ্রহ প্রবল। খাবার ছাড়া যে কোনো জিনিস সে খুব আগ্রহের সাথেই মুখে নিয়ে নেয়। তা সেটা কাগজ হোক বা যে কোনো কিছু। মুখে নিয়ে খুব মজা করে খাওয়ার চেষ্টা করে। অথচ একটু আগেই তাকে ভাল খাবার দেয়া হয়েছিল খাওয়ার জন্য৷ কিন্ত সে পাত্তাই দেয় নি।

যায় হোক, সব কিছু মিলিয়ে বেশ ভালই আছি। এই সব কিছুই আমি উপভোগ করছি খুব। আশা করি সামনেও উপভোগ করব। মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনটা এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে আমার জন্য। আমার মেয়ে আমার জীবটা আরো রঙ্গিন করে তুলেছে।

Sort:  

মাশাল্লাহ ; এইতো কয়েকদিন আগেই একেবারে ছোট দেখেছিলাম 😃