গত কয়েক বছর ধরেই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি। যদিও সেসব তেমন একটা গায়ে লাগে নি। তবে গত কয়েক মাস ধরে সবকিছুর দাম কেমন যেন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। এমনও হয়েছে যে আপেল কেজি ২২০ টাকা চাইছে, দামাদামি করে ২০০ টাকায় কেনা গেছে। কিন্তু এর ঠিক দুইদিন পরেই আপেলের দাম হয়ে গেছে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। তবে এবার আর দামাদামির সুযোগ নাই। ২৫০ টাকা দিয়েই কিনতে হবে। আর তার পরের সপ্তাহেই দাম বেড়ে হয়ে গেছে ৩০০ টাকা। অর্থাৎ দেড় সপ্তাহের ভেতরেই আপেলের দাম ১০০ টাকা বেড়ে গেছে কেজি প্রতি। অথচ গত বছরেও খুব সম্ভবত ১৫০ টাকা দরে আপেল কিনেছিলাম আমি।
এই তো গেল শুধু আপেলের কথা। বাজারের এমন কোনো দ্রব্য নাই, যেটার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ে নি। গতকাল পত্রিকায় একটা রিপোর্ট বের হয়েছে। রিপোর্টের শিরোনাম ছিল "ফলমূল এখন নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিলাসী দ্রব্য।" এই শিরোনামের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর কোনোটাই এখন ৩০০ টাকার নিচে পাওতা যাচ্ছে না। ৭০-৮০ টাকা পিস ডাব হুট করে ১৬০-২০০ টাকা হয়ে গেছে। এমনও হয়েছে যে টানা চারদিনে ডাবের দাম প্রতিদিন ১০ টাকা করে বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। অদ্ভুত এক অবস্থা।
আমার পছন্দের কোল্ড ড্রিংক্স ছিল মাউন্টেন ডিউ। মাত্র ১৫ টাকায় পাওয়া যেত। সেই মাউন্টেন ডিউ হয়ে গেছে ২৫ টাকা। ২৫ টাকার কোকাকোলা হয়ে গেছে ৪০ টাকা। ৫-১০ টাকায় এই বছরেই তুন্দুল রুটি পাওয়া যেত, এখন তার দাম ২০ টাকা। গত কয়েক বছরে ৫ টাকা কাপ চায়ের দাম এখন হয়ে গেছে ১০ টাকা। কোথাও কোথাও তো ১৫-২০ টাকাও রাখা হচ্ছে। ৫ টাকায় যে সমস্ত বন, পাউরুটি পাওয়া যেত, সবকিছুই শেষ কয়েক মাসে দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১০ টাকা হয়ে গেছে৷ এটা কী অস্বাভাবিক না?
ধীরে ধীরে দাম বাড়লে সেটা এত একটা গায়ে লাগে না। কিন্তু হুট করে ২-১ মাসের মাঝে জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়া মানে আমাদের মতো মানুষের জন্য ভয়ংকর ব্যাপার। এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় সবাইকে। তার উপর এইভাবে দাম বেড়ে গেলে সংসারের খরচও বেড়ে যায়। কিন্তু আয় তো সেই অনুপাতে বাড়ে না। ফলাফল হিসেবে সংসারের কিছু কিছু ব্যয় কমিয়ে দিতে হচ্ছে।
আমার মনে হয় না যে পৃথিবীর আর কোনো দেশে এভাবে হুট হাট জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে৷ এর পেছনে সুস্থ কোনো যুক্তি থাকতেই পারে না। গত কয়েকদিন ধরে হুট করে বেড়ে যাওয়া ডাবের দাম কিন্তু ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের চেষ্টায় এক দিনেই ৬০-৭০ টাকা কমে গিয়েছে। যদি এরকম ভাবে বাজারে নিয়মিতি অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা করে, তাহলে অবশ্যই প্রতিটি জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রনে থাকতে পারতো।
এইতো গেল ফলমূল কিংবা মাঝে মাঝে খাওয়া হয়, এমন জিনিসের কথা। কিন্তু যেসব দ্রব্য নিয়মিত প্রয়োজন হয়, সেসবের অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। মাঝখানে পল্ট্রি মুরগীর দাম ২৪০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এত দামে কখনো পোল্ট্রি মুরগী বিক্রী হয় নি সম্ভবত। গরুর মাংস তো বহু আগেই মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের মানুষেরা বাদ দিয়ে দিয়েছিল। পোল্ট্রি মুরগীও হুট করে কিছুদিনের জন্য সেই কাতারে চলে গিয়েছিল।
আর মাছের কথা কিইবা বলব। রুই, পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া ছাড়া অন্যান্য মাছের স্বাদ মানুষ যে ভুলতেই বসেছে। এমন না যে অন্যান্য মাছগুলো বাজারে বিক্রী হয় না। ১০০-১৪০০ টাকার ইলিশ বাজারে আসার সাথে সাথেই সব বিক্রী হয়ে যায়। কিন্তু এই দামগুলো কমিয়ে একদম সাধারণ মানুষের স্বাধ্যের মধ্যে আনার কোনো চেষ্টা আজ পর্যন্ত কাওকে করতে দেখলাম না।
মাঝে মাঝে মনে হয় এদেশের মানুষেরা এদেশেই তৃতীয় শ্রেণির মানুষ হিসেবে মর্যাদা পায়। আর ঠিক এই জন্যেই হয়তো যে যেভাবে পারে, বাংলাদেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। গত ২-১ বছরে প্রচুর মানুষ বাইরের বিভিন্ন দেশে চলে গিয়েছে। কেউ পড়াশোনার জন্য, কেউবা কর্মসংস্থানের জন্য। তবে যারাই গিয়েছে, যাচ্ছে কিংবা আগামীতে যাবে, তাদের কেউ আগামীতে কখনো দেশে ফিরে আসবে না৷ কারণ এই দেশে আনলিমিটেড টাকা পয়সা না থাকলে সুন্দর একটা জীবন কেউ লিড করতে পারবে না।
অনেক তো বকবক করলাম, এবার নিজের কিছু কথা বলি। চাকরি এবং সংসার, এই দুইটা একসাথে সামলাতে গিয়ে নিজের অনেক শখ, ইচ্ছে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি। বাট তা নিয়ে কোনো আফসোস নাই। কারণ এই নতুন জীবনটাও আমি খুব উপভোগ করে যাচ্ছি। পরিবারের সাথে কাটানো সময়গুলো কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি ঘুমটা ভেঙ্গে যাবে আবার।
তবে মাঝে মাঝে কিছুটাও খারাপও লাগে। আমার মেয়ের দাঁত উঠছে একটু একটু করে। সে এখন টুকটাক এটা সেটা খেতে পারে৷ মাল্টার জোস তার খুব পছন্দের। এছাড়া অন্যান্য ফলও সে একটু একটু করে খায়। গতকাল ফলের বাজারে গিয়ে সবকিছুর দাম শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম কিছু ফলটল বাসায় নিয়ে যাবো। সবাই খেতে পারবে৷ কিন্তু দাম শুনে আর এত কিছু নেয়ার সাহস হয় নাই। তবে শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য একটা দুইটা করে ফল নিয়েছিলাম। ২ টা মাল্টা, ২ টা কমলা, ২ টা আপেল, একটু আঙ্গুর... তাতেই দাম হয়ে গেছে প্রায় ৫০০ টাকার মতো। যদিও দোকানদার প্রথমে রাজী হচ্ছিল না এত অল্প অল্প ফল বিক্রী করার জন্য।
যায় হোক, আশা করি এসব অনিয়ম একদিন বন্ধ হবে। মানুষ একটু শান্তিতে বাস করতে পারবে এই দেশে৷ জানি না, স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে কিনা। তবে আশা করতে তো দোষ নেই, তাই না?
Congratulations @reza-shamim! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 500 posts.
Your next target is to reach 59000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out our last posts:
ভাই কিছু করার নাই সবই ডিজিটাল এর সুফল !!!!