আজ খুব করে ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে...
তখন আমি ক্লাস থ্রি এর ছাত্র। একদিন বিকেলে আম্মু তার এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যায় আমাকে রেখে। আমি খুব করে আবদার করি আম্মুর সাথে যাবার জন্য। আম্মু আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে "চুপচাপ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে।"
আর আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকি আম্মু ফিরে আসা অবধি আর কান্না করতে থাকি।
আমি ছোটবেলা থেকেই মা পাগল একটা ছেলে। এক পারিবারিক ঝড়ে আমাকে আম্মুর থেকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। তখন আমি ক্লাস ফোর এর ছাত্র। তখন থেকেই আমি নানুবাড়ী তে থাকতে শুরু করি। শুধুমাত্র বিশেষ কারণ ছাড়া আমাদের দেখাটাও হতো না।
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার একবার প্রচন্ড জ্বর হয়। সেই জ্বরের মাঝে আমি শুধু প্রলাপ করতে থাকি "আম্মু.. আম্মু.." বলে। সেইদিন দ্রুতই আম্মুকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়, আর আমি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠি।
আমার জীবনে সামান্য কিছু অপ্রাপ্তির মাঝে একটা অপ্রাপ্তি হলো ছোটবেলা থেকে আম্মুকে সার্বক্ষণিক কাছে না পাওয়া। আমি বরাবরই আম্মুর একান্ত বাধ্যগত ছেলে। ছোটবেলা থেকেই ডানে বললে ডানে যাওয়া আর চুপ বললে স্টপ হয়ে যাওয়া ছেলে আমি। আমরা দুই ভাই আর এক বোনের মাঝে আমিই আম্মুর সবচেয়ে বাধ্য ছেলে।
রক্তের বাঁধন বলে যে একটা কথা থাকে তা আমি আম্মুর কাছ থেকে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ পেয়েছি। এইতোহ দুইদিন আগে হঠাৎ করেই আমি প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উঠি। রাত ৯ টার দিকে আমি অসুস্থ হই। সেদিন রাত ১০ টার দিকে আম্মু ফোন দেয়। কারণ তার আমার জন্য খুব খারাপ লাগতেছিলো। বিধাতা মায়েদের এক অদ্ভুত ক্ষমতা দেন যাতে তারা যেখানেই থাকুক, সেখান থেকেই তার সন্তানের বিপদের আঁচ পান।
আমি সাধারণত খুব একটা অসুস্থ হই না। কিন্তু আমার ভেতরে এক মস্ত অসুখ ছোটবেলা থেকেই বাসা বেঁধেছে, "মায়ের অসুখ"।
লোকমুখে শুনি, "মা মারা গেলে মায়ের মর্ম বুঝা যায়।" কিন্তু আমি এমন একজন যে মা বেঁচে থাকতেই প্রতিদিন মায়ের মর্ম উপলব্ধি করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমি বিবাহিত, আর আমার ওয়াইফ আমার উপর যথেষ্ট দায়িত্ববোধ সম্পন্ন। তবুও আমি এখনও অসুস্থ হলে মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে ভেসে আসে "আম্মু... আম্মু.." শব্দ।
এই অসুখের নির্দিষ্ট কোন দাওয়াই নাই, কিন্তু আমি চাই আমার এই "মা অসুখ" এর দাওয়াই পেতে। জীবনের শেষভাগে আমি আমার মায়ের জন্য জীবন কাটাতে চাই। যদি আল্লাহ আমাকে এই সৌভাগ্য দেন, সেটাই আমার বিশাল প্রাপ্তি হবে। আর তাতেই মিটবে আমার সারা জীবনের অপ্রাপ্তি।
সন্তানের কোন বিপদ হলে, মন খারাপ হলে, অসুখ করলে, কিভাবে যেন মায়েদের মন সেটা টের পেয়ে যায়।