কেউ কেউ কথা রাখে - রিভিউ

in BDCommunity7 months ago

কন্ট্রোল পড়ে নাজিমুদ্দিনের উপর সেই রকমের হতাশ হয়েছিলাম। আমার মতন যারা বেগ বাস্টার্ড সিরিজের অন্ধ ভক্ত, তারা কন্ট্রোল আসছে শুনে সেই রকমের এক্সাইটেড ছিল। এত বছর পর আবার আমার ফিকশনাল ক্রাশ বাস্টার্ডের নতুন কোনো কাহিনী পড়তে পারবো এটা ভেবেই একটা ভাললাগা কাজ করতো। কিন্তু এত আশা নিয়ে বইটা যতই পড়ছিলাম ততই হতাশ হতে হচ্ছিল। এটা শেষ করে যে কেউ বলবে জিনিসটা খুব দায় সারা ভাবে লেখা হয়েছে। কাহিনী ভাল হলেও হাজারও প্রিন্টিং মিসটেক, একই কথা সবার মুখ থেকে বলানোর মতন অনেক ত্রুটি আছে। এক কথায় বেগ বাস্টার্ডের অন্য বইগুলোর সাথে এটা কোনভাবেই তুলনা করা যায় না।

লেখকের উপর এত ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও তার লেখা বই পড়ার শখ আবার কিভাবে চেপেছিল এখনও ভাবি। হয়তো মেলা থেকে টাকা দিয়ে কেনা বই, যেভাবেই হোক পড়ে শেষ করতে হবে এই তাগাদা কাজ করছিল। এই বইটার নাম “কেউ কেউ কথা রাখে”। এই বইয়ের খোঁজ জানতে পারি বাতিঘরের টপ ফ্যানদের কাছ থেকে। নাজিম উদ্দিনের কোন বই সবচেয়ে ভালো লাগে এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই এই বইয়ের নাম নেয়।

বই শুরুর আগে প্রকাশকের ভূমিকা পড়ে জানলাম এটা সত্যিকারের ঘটনা থেকে লেখা। যেই ঘটনা বাংলাদেশের অনেক মানুষের উপরেই প্রভাব ফেলেছিল। পুরোপুরিভাবে পালটে দিয়েছিল কিছু মানুষের জীবন। ঘটনাটা একই ভাবে লেখকের মনে প্রভাব ফেলার কারণেও তিনি চেয়েছিলেন গল্পটা বেঁচে থাকুক।

বইয়ের পান্ডুলিপি বহু আগে লেখা হয়ে থাকলেও প্রকাশককে নাজিমউদ্দিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রকাশ করতে বলেছিল। হয়তো ঘটনার রেশ কাটার পর বা ঘটনার ভুক্তভুগিদের হারানোর ক্ষত সারিয়ে উঠার পর। বইটা পড়ার সময় আমার খুবই জানতে ইচ্ছা করছিল আসল ঘটনা ঠিক কোনটা ছিল। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেও তা বের করতে পারিনি।

IMG_20240602_113045.jpg

বইটা শুরু হয় একটা সদ্য বিবাহিত মেয়ের মৃত্যু নিয়ে। পুলিশরা এসে জানতে পারে মিলি নামে মেয়েটির বাড়িতে একজন এসে তাকে রেপ করে খুন করে দিয়ে যায়। তিন মাসের সদ্য বিবাহিত স্বামী, স্ত্রীর এমন ভয়াবহ মৃত্যুতে ভয়াবহ ভাবে মুষড়ে পড়ে। দুইজন পুলিশ অফিসার মিলে এই কেসটি নিয়ে তদন্ত করতে মাঠে নামে। শেষমেশ খুনিকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল কিন্তু সেটা আমার এক্সপেক্টেশনের সাথে মিল ছিল না।

আমার একটা অভ্যাস হলো কাহিনীর হাফ পর্যায়ে গিয়ে বাকিটুকু প্রেডিক্ট করা। যদি আমি লেখক হতাম তাহলে বাকি অংশ কিভাবে আগাতাম? এরপর আবার পড়া শুরু করে মিলিয়ে দেখতাম লেখক আমার মতন করে ভেবে দেখেছে কিনা। কিন্তু এই বইয়ের আসল যেই এন্ডিং ছিল সেটা একেবারেই আমার ধারণার বাইয়ে ছিল। যেটা দেখে আরও বেশি জানার শখ হয়েছিল এটা আসলে ঠিক কোন সত্যিকারের কাহিনীর উপর বেজ করে লেখা।

বইটা সাজানো হয়েছে দুইটা সময়ের উপর বেজ করে। ১৯৭৫ সাল আর তার দুই যুগ পরের সময়। মাঝে ২৪ বছরের গ্যাপ থাকলেও একই কাহিনী উপরে লেখার কারণে কাহিনী অভারল্যাপ করছিল। বইটায় দুইটা সময় এভাবে প্যারালাল দেখানোর কারণে প্লটটাও বেশ ইন্টেরেস্টিং হয়েছে।

বাংলাদেশে যুদ্ধ পরবর্তী সময়টায় মানুষের মনভাবটা লেখক গল্পের ফাঁকে দিয়ে অনেক ডিটেইলসে আনার চেষ্টা করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ করে যখন দেশ লুটেপুটে খাওয়া নেতাদের হাতে চলছিল এটা সাধারণ জনগণের জন্য হজম করা খুব কষ্টের কাজ ছিল। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। জাতির পিতা আইন প্রতিষ্ঠা পারছিল না বিধায় মানুষের মধ্যে দিন দিন হতাশা বেড়ে যাচ্ছিল। এ সবকিছুর আলটিমেট রেজাল্ট হিসেবে আসে ১৫ ই অগাস্ট নামের ভয়ংকর এক দিন।

পলিটিকাল ইমশন বইটার প্রতি রিডারদের ভালবাসা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। আর কাহিনীর সাথে খুব চমৎকার ভাবে রিলেট করায় বইটি হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য। কন্ট্রোলের মতন কাহিনী বেশি না টানায় গল্পটা পড়ে তৃপ্তি পেয়েছি।

আমি এ পর্যন্ত নাজিম উদ্দিনের যা পড়েছি সবই ছিল তার মৌলিক লেখা। আমার পার্টনারের ক্ষেত্রে জিনিসটা পুরাই বিপরিত। ও পড়েছে সব অনুবাদ সিরিজ। ও কন্ট্রোল পড়ে বলল নাজিম উদ্দিন মৌলিকের থেকে অনুবাদ বেশি ভালো লিখে। কিন্তু আমার কাছে এটা মনে হয় না। তর্ক করার আগে ড্যান ব্রাউন সিরিজ পড়ে শেষ করতে হবে!

তবে তার আগে “১৯৫২ নিছক কোন সংখ্যা নয়” টু বি রিড লিস্টে রেখেছি। শুনেছি এই বইটাও অনেকের টপ ফেবারেট লিস্টে আছে। দেখা যাক এটা কবে ধরতে করতে পারি!!

হ্যাপি রিডিং!