এ ছবিতে শব্দ, জায়গা, আলো, রঙ, ক্যামেরার কাজ কস্টিউম, ডাবিং, মেকাপ, ভিএফেক্স, প্রোডাকশন ডিজাইন তাবত যা কিছু আছে সবগুলো জায়গা থেকে পারফেকশনে টিক পেয়ে আসা বাংলা সিনেমা আমার চোখে পরে না। বাংলা ছবি বলতেই এই বেসিক টেকনিক্যাল জিনিসে কোথাও না কোথাও ঘাপলা থাকবেই। এই সব দিক থেকে উতরে গিয়ে ডেবিউট হিসেবে অসাধারণ একটা কাজ বেরিয়েছে ডিরেক্টর মেজবাউর রহমান সুমনের হাত ধরে। যেটা পরবর্তীতে বাংলা ছবির পরিমাপক বা গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
সিনেমার কাহিনী শুরু হয় মাঝ সমুদ্রে বিশাল একটি ট্রলারে আট জন মাঝি আর এক অজ্ঞাতনামা বেদেনীকে নিয়ে। একটু ঘাঁটাঘাটি করে জানতে পারলাম এটা "The Rime of an Ancient Mariner" নামক বিশাল বড় গীতিকবিতার ভেতরের এক পৌরানিক গল্প থেকে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সিনেমায় নিয়ে আসা হয়েছে নানা ধরণের কুসংস্কার (মাঝ নদীতে মাছ ভাজা যাবে না, নৌকায় মেয়ে মানুষ তোলা যাবে না) সত্যিকার অর্থেই যা জেলেদের মানা হয়।
মুভির প্রতিটা শটের ভিজ্যুয়ালাইজেশন ছিলো অনবদ্য, চোখে শান্তি পাওয়ার মতন। ড্রোন শট থেকে শুরু করে পানির নিচের দৃশ্য সবগুলোই খুব ভাল মতন ধারণ করা হয়েছে। মনপুরা আর দেবীখ্যাত কামরুল হাসান সুমনও ছিলেন পর্দার পিছে, যার জন্য সিনেমার কোনো অংশেই কমতি ছিল না। গভীর সমুদ্রে এই প্রথম আমাদের কোনো ছবির কাজ করা হলো। যার জন্য অভিজ্ঞতার দিক থেকে সবকিছুই নতুন ছিল। হাওয়ার শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে কোভিড শুরুর আগ দিয়ে। আর এই ছবির প্রতিটা শট নিখুঁত করার জন্য ট্রেনিং সেশন চলেছে প্রায় ৫/৬ মাস। অভিনেতাদের ইনডোর ট্রেনিং এ শেখানো হয়েছে কিভাবে সমুদ্রের জাল তুলতে হয়, মাঝ সমুদ্রে সাঁতার কাটানো, খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের ভাষা শেখা আর তাদের একদম খাসা গালিগুলো এমন ভাবে আয়েত্ত করানো হয়েছে যাতে অভিনয়ের সবখানেই সহজাত ছাপ পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিটা চরিত্র বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ আর সময় দেয়া হয়েছে যা এদেশের সিনেমা ইন্ড্রাসটিতে বিরল।
source
এত যত্ন করে বানানো ছবির প্রতিটা চরিত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেও কেনো জানি আরাম লাগে। ট্রলারে জেলেদের প্রধান চানমাঝি চরিত্রে চঞ্চলের মেকাপ, এক্সপ্রেশন এক কথায় ছিল অসাধারণ। PK ছবিতে আমির খান যেভাবে দিনে ৪০ টার মতন পান খেতো, এখানেও চঞ্চলকে প্রতিদিন ২০-২৫ টার মত খেয়ে দাঁতের বিচ্ছিরি হাল বানাতে হয়েছিল (বালি দিয়ে মেজে সেই দাঁত ঠিক করতে লেগেছে প্রায় এক বছর)। গুপি গাইন আর বাঘা বাইনের মত উরকেস-পারকেস আমাদের কাছে এক নতুন জুটি হয়ে এসেছে। এদের ফুর্তি ছিল মন ভালো করে দেয়ার মত। এ দুই বন্ধুর একসাথে লুডু খেলা, গোসলে সাবান ফেনা নিয়ে মজা করা, আর সারাক্ষণ হাসি ঠাট্টায় মজে থাকার আনন্দ আমাদের মধ্যেও প্রতিবার ছড়িয়ে পড়ছিল। একমাত্র মেয়ে চরিত্র গুলতিকে তৈরি করতে গিয়ে তুষিকে থাকতে হয়েছে সত্যিকারের বেদেপল্লীতে। সে তার চাহনি আর ভঙ্গিমা দিয়ে রহস্য ও লাস্যময়ী নারীর অংশ ভালোমতনই আনতে পেরেছে। তবে মাঝ সমুদ্রে সে মেকাপ কিট কোথায় পেলো এটা ভাবার বিষয়, ওর হাইলাইটার আর লিপস্টিকের ব্যবহার মুভির একটা দূর্বলতা হিসেবে ধরা যেতে পারে। তবে আমি সবথেকে মজা পেয়েছি নাসিরউদ্দিনের নাগু চরিত্রটি নিয়ে। শুরুতে চানমাঝির পা চাটা বান্দা শেষে ক্ষমতার অদল বদলের ফলে কর্তার প্রতি সম্মানের পরিবর্তন শুধুমাত্র একটা বিড়ি দেয়া নেয়ার অভিব্যক্তির মাধ্যমেই দেখিয়ে দিতে পেরেছে।
সবার কাজ একসাথে করলে অনায়াসেই বলা যায় এ যেন সত্যিকারের জেলে সমাজেরই একটা প্রতিফলন।
এ ছবির শুটিং এর শুরুতে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল মাঝ সমুদ্রে ৯ নং বিপদ সংকেতের মধ্যে গিয়ে আঁটকে পড়া। এরপরে তেমন কোনো লাইফ সাপোর্ট ছাড়া সহি সালামতে শুট করে ফিরতে পারা আসলেই বাহবা পাওয়ার যোগ্য।
তবে গল্পটা আরও সুন্দর ভাবে জমানো যেতো যদি তুষির অলৌকিক ক্ষমতা আগেই আনা হতো। আর আঞ্চলিক গালিগালাজ দিয়ে পূর্ণ এ মুভি দেখতে বাচ্চাদের না নিয়ে যাওয়াই মঙ্গল!
সবশেষে "হাওয়া"কে সেরা বাংলা সিনেমার কাতারে অনায়াসে ফেলবো কারণ আমাদের মাঝ সমুদ্রের কঠিন জীবনযাত্রা নিয়ে এমন নিখুঁত করা কাজ আগে কখনও হয়নি, আর প্রতিটা শটে এত খুঁটিনাটি তুলে ধরা, ভয়ংকর সুন্দর ভাবে সব চিত্রধারণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডক্লিপ প্রতি মুহূর্তেই মাঝ সমুদ্রে ভেসে থাকার অনুভূতি দিবে। এটা দেখতেই ভালো লাগে যে avenger endgame এর সময় টিকিট নিয়ে যে মারামারি হয়েছিল সেরকম কাহিনী বাংলা কোনো ছবি নিয়ে হচ্ছে। আমাদের ওটিটি প্লাটফর্মের মত বিরাট পর্দার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র গুলোও এরকম মানসম্মত হোক এটাই আশা করি!
সিনেমার মাঝে আর শেষে সবাইকে আলোচনায় মগ্ন করতে পারাটাও এই সিনেমার বড় একটা কৃতিত্ব। যারপরনাই, ভালো সিনেমা। আপনার লেখাও সুপাঠ্য।
আসলেই এটা একটা বড় কৃতিত্ব!
অনেক ধন্যবাদ পছন্দ করার জন্য! 💙
Excellent work, I must admit that.
But the story was kinda ok-ish type to me, not as much as I expected. Different people, different Hawa experiences. Naish!
Ahh.. I see!! And yes I'm going to agree on that too..
Yeah I agree the story wasn't excellent but the polished cinematography helped it to cover up..
Hae tuio review disish dekhlam!!! 💙💙
এ সিনেমার উপ্রে বেশ ঘাটাঘাটি করেছো বোঝাই যাচ্ছে, আমার তো চরিত্রগুলোর নাম বা কে অভিনয় করেছে সেটা খেয়ালই নাই। যত্নের সাথে গোছানো লেখা নো ডাউট!
তুষির ব্যাপারে একমত, এটা আগে আনতে পারতো।
হাহা, থ্যাঙ্কু!! 💙
এখন বুঝেছেন ক্যান আমার একটা পোস্ট লিখতে এতক্ষণ লাগে? 😒
সব পোস্টের ক্ষেত্রে তো আর ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করার প্রয়োজন নেই। :P
সব পোস্টে তাই এত সময়ও লাগে না 😒
আপনার লেখার সৌন্দর্য আমাকে মুভিটি দেখতে আগ্রহী করে তুলেছে । ধন্যবাদ আপনার সুন্দর উপস্থাপনের জন্য।
থ্যাঙ্কিউ!! জ্বী অবশ্যই দেখবেন! আমাদের শিল্প দেখা উচিত!
মুভি দেখা হারাম, কবিরা গুনাহ। 😏
তবে আপনার উপস্থাপনাটা ছিল পালকি না পালংকি ওই রেস্টুরেন্টের মতো; টপ-নচ :)
ভাই... এম্নে বললেন.. কত গুনাহ যে কামাচ্ছি খোদা!
থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ!! আমি আপনাকে এখানে মেনশন করতে চেয়েছিলাম জিজ্ঞেসা করার জন্য যে ফরম্যাট ঠিক আছে কিনা।
I don't decide or endorse standardisation but I am overwhelmed with the depth. Very well done ma'am!
ayeee, thanku thanku 💙😁
Congratulations @rafa-noor! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 500 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
Hi @rafa-noor, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON