সে এক আদ্দি কালের বদ্দি কথা, মামা আমার মেঝোটা নাম তার হরি বিয়ে করে আনলো এক সাদাটা পরি ,সাদা পরী বৈকি তবে শুধু ডানাগুলো কাটা ।যে সে পরমা আবার নয়, এক্কেবারে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে কথা বলা পরী।পরীকে দেখতে গিয়ে মামা আমার শুধালো, " প্রেম ট্রেম হয়েছে কিছু?
পরী দিলো উত্তর, " ধুর ছাই,আমি অমন নই। ছেলেটেলের সাথে অভ্যাস নেই কথা চালানোর। "
মামা তো শুনে খুশিতে আত্মহারা! বিদেশ ফেরত হয়েও পেয়ে যাচ্ছে শিক্ষিতা, সুন্দরী, গুণবতি, হট স্মার্ট পর্দানশীন পুরি!
পুরি মানে ও সিলেটি ভাষায় ছুকড়ি। শুদ্ধ ভাষা কি এখন আসে মাথায় দেখে এমন সুন্দরি!
তাও যাক,ওদিকে বেজে উঠলো বিয়ের শানাই, হয়ে গেলো পরী তৈরি। পরীকে দেখেই মামার ভেতরে উতলে উঠেছে সাগরের মতো বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউ ।ভাবতে পারেনা কোনোভাবেই এই সুন্দরীটা তারই বউ !
মামা এখন বেজায় গরম। হাক ডাক দিচ্ছে প্রচুর। ভেতরে ভেতরে বোঝাচ্ছে বউকে, " আমি নই ঠান্ডা ! ভয় আমাকে পায় সবাই ! আমিই বাড়ির কর্তা। "
খাওয়া-দাওয়া,নাচ গানা সবই এখন শেষ।এখন সময় কান্নাকাটির তবে পরীর চোখে নেই জলের ফোটা । মামা তো তাতেই বেজায় খুশি। ভাবছে, " পুরি আমার বেশ স্ট্রং! সামলাবে সংসার এক হাতেই । নো টেনশন , ডু ফুর্তিতে বিদেশ যেতে পারবো তাহলে। মা তো এখন পুরো বুড়ো , বোনটাকেও দিবো বিয়ে। বউ আমার সামলাবে সব, পেয়েছি একদম মোক্ষম মেয়ে। "
সব শেষে, বাসর রাতে বউ বলে একটু সরো , ঘুমাইতে দাও! বাড়িতে তো নাই এসি। শুনেই মেঝো মামাটার মন হয়ে গেলো বেজায় খারাপ , আসলেই তো! পরীর মতো মেয়ে , এসি ছাড়া চলবে কি ? ফ্যানে তো নাই কোনো অভ্যেস টভ্যেস!
সেলফ রেস্পেক্ট এ আঘাত হানাতে মামা আমার বাসর রাতেই ফেসবুক খুলে খুজতে লাগলো এসির কোম্পানি। ওদিকে পরী করছে চ্যাটিং। মামা কি করছো শুধাতেই মামি বললে, " ওই দেখতেছি আরকি এসি। কোথাও যদি পাই কম দামে। বাঁঁচবে আমার জামাইয়ের দুই পয়সা। " শুনে তো মামা বেহুঁশের অন্য পর্যায়ে।
মামা ভাবছে, " এ কেমন বউ! করছে এখনই চিন্তে! আহা আহা, কপাল আমার স্বর্ণের খনি, বউ পাইলাম বটে একখানা "।
বাসর গেলো এসি খুজতেই, পরেরদিনই বাড়িতে ঢুকলো বড়সড় এসি।বুড়ো মা জিজ্ঞেস করতেই ছেলে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে ফেললো, " আম্মা ওর তো নাই অভ্যাস। বড়লোকের মেয়ে তো, পারেনা একদম ফ্যানে ট্যানে থাকতে। "
শাশুড়ি বুঝলো , " আহা মেয়েটা! প্রথম রাতেই ঘুমাতে পারলোনা তাই বুঝি দেরিতে উঠছে আজ।সে থাক! মেয়েকেই বলি নাস্তা বানাতে। হাতে তো আর ফোসকা পড়বেনা একদিনেই।এরপর তো বউ বানাবে রোজই।" বউ উঠলো বেলা দশটায়। স্মার্ট হওয়াতে নাইটি পড়েই আইফোন হাতে সামনের রুমে বসেই বললো কফি। " মামার এবার চক্ষু চড়ক গাছ।কারণ মা করেছে চোখ বড়। মামা এখন ভাবতে বসলো,
" এ কেমন বউ ! শশুরের সামনেই এ কাপড়ে এসেছে চলে। "
মামিকে টেনে ব্যাপার খানা বুঝাইতেই মামি আমার দিয়ে দিলো কড়া ভাষণ।
ভাষণে ছিলো, " পাগল নাকি তুমি ? নেই কোনো স্মার্টনেস! জানোনা কাপড় মেয়েদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার । তোমার বাবার চোখ খারাপ নাকি ? আমার ডেডিই তো কিনে দেয় সবটি ! " তা শুনেই মামার চোখে লজ্জার আভা ! ভাবছে, " ছি ছি! কি করলাম আমি ? আজকালকার যুগে কে মানে এসব!মা টার ই দোষ। দিচ্ছে এখনই করে কান ভারী । "
এবার হানিমুনের পালা। মামা ভাবলো কিছু টাকা বাঁচিয়ে বাড়ির কাজ করবে। মা কে বলতেই মায়ের মুখ তখন খুশিতে আটখানা কিন্তু বউ দিলো ধমকি। বললো, " আমরা যাবো প্যারিস এ । কক্সে যায় কে? "
মামা ও ভাবলো, " আসলেই তো! আজকাল একটা প্রেস্টিজ তো আছে। বাড়িটাড়ি তো করলাম অনেক । মা ও একদম যা না তা । ছেলের সুখ কি পারে না দেখতে ! মা টাও শুধু ভাবলোই সারাজীবন নিজের কথা । " মামার এখন খুব মন খারাপ। হবে নাই বা কেনো ? এ কেমন মা প্যারিসে যেতে দেয় বাঁধা! "
মামি বুঝালো, " আমার ভাই ভাবি তো গেছে বালি। মম ডেডই তাদের দিয়েছে সারপ্রাইজ। তোমার এ কেমন মা! চায় না কোনো ছেলের সুখ। না হলে কেনো বলে শুধু বাড়ি আরো উঠানোর কথা।!
তাও দেখো ভাবি কত শয়তান আমার। মা এর উপরে বলে কথা ! মা বলেছিলো ঘর মুছতে কারণ বাঁচবে টাকা কিছু ভাই এর। তুমিই বলো? খারাপ কি? ঘর মুছতে জাত তো আর যায়নি। "
মামা এখন মাথা নাড়ায় আর ভাবে, " আহা এ কেমন মা আমার ! ছেলের সুখ পারছে না দেখতে। বউকে বলছে প্যারিস বাদে বাড়ি উঠানোর চিন্তা করতে । আর ওদিকে শ্বাশুড়িটা আমার দেখো বালি পাঠিয়েছে ছেলে বউকে। " এসবে এসবে মামার এখন বিদেশ ফেরার দিন ঘনালো। এইবার মামাকে ফিরতে হবে, ছেড়ে যেতে হবে বউ মা কে।মামার মনে বিশাল দুক্ষু! মাকে ছাড়া তো থাকাই যায়, থেকেছে অনেক দিনই। তবে থাকবে কি করে সুন্দরী বউকে ছেড়ে! হয়নি এখন একদম অভ্যেস। "
বউ মামার খুব স্মার্ট! বুঝাচ্ছে মামাকে, " দেখো সোনামাণিক না কামালে চলবে কিসে? আমাদের তো হতে হবে বড় লোক।তুমি না গেলে বলো হবে কি করে? " মামা এইবার মায়ের পাশে গেলো, মা ফুঁফিয়ে বললে, " যাসনে বাবা। এইখানেই কর কিছু।তাও থাকলো আমার চোখের কণা আমারই চোখের পলকে। "
বউ এইবার তাকালো গরম হয়ে মামারই দিকে। মামাও উঠে চলে গেলো এইবার প্লেনে করে উড়তে। "
বিদেশে পা রাখতেই মামি ফোনেই মনের কথা বলছে , " দেখছ তোমার মা কেমন? চায়না একদম উন্নতি তোমার! মা কিভাবে বলে বিদেশ ছাড়তে যেখানে টাকার খামার। "
মামা ভাবে , " ঠিকই তো। কেমন যেনো হয়ে গেলো মা। বিয়ের পরই অনেক বদলেছে হঠাৎ কেনো তা জানিনা। "
সেসব এখন পুরনো কথা, বউ শাশুড়িতে এখন চলছে তুমুল ঝঞ্ঝাট।
শাশুড়ি লাগিয়েছে মেয়েকে ফোন। মেয়ে ওপাশের ফোন ধরতেই বলতে শুরু করলো, " জানিস তুই তোর ভাইয়ের বউ করছে কি?এখন নাকি সে চালাবে সংসার আর আমি নাকি বুড়ি। আমার এতোদিনকার সংসার! কেন আমি দিবো ছেড়ে? এ কথা ও কথা বলে মেয়ে শান্ত করলো মা কে।এইবার মাকে মনের দুক্ষু বুঝাচ্ছে মেয়ে মন ভরে।আহা মেয়েটার দুক্ষু শুনেই মায়ের চোখে চলে এলো জল। মা বলছে, " এ কেমন শাশুড়ি তোর।বুড়া হইছে, এক পা তো কখন মাটির নিচেই গেছে ।এখন করবে আল্লা বিল্লা কিসের সংসার সামলানো! জানেনা নাকি বউ আসলে ছাড়তে হয় সংসারের কতৃত্ব। "
মেয়ে মা কে বলে, " কি করবো মা বলো। শাশুড়ি রা হয় ই খারাপ। মায়ের মতো কি আর হয় বলো! "
মেয়ে এখন বুঝাচ্ছে আরেকটু কষ্ট। মূল কথা - মেয়ের শাশুড়ি নাকি ছেলের কান করে ভারী! বলে নাকি টাকা বাঁচাতে।
এইবার মেয়ের মা তো ক্ষেপা! গজগজিয়ে বলছে, " তুই কে ভাই এখন দুইয়ের সংসারে ঢুকাচ্ছিস মাথা। "
এসবে ওসবে ফোন রেখে ছেলের মা করছে খানিক আফসোস। বিড়বিড়িয়ে বলছে, " হায় রে কপাল। ছেলের বউটা করছে আমার ছেলের টাকা ধ্বংস। কি দরকার আনায় ফুডপান্ডাতে অর্ডার। ঘরে কি খাবারের অভাব ! "
এভাবেই চলতে চলতে, ছেলের বউয়ের কাছে শাশুড়ি খারাপ।কারণ টাও যৎসামান্য! ছেলের বউয়ের একটাই ব্যথা কেনো তার সংসারে বলছে কেনো এতো কথা! কিন্তু ওইদিকে আবার ছেলের মা এর মনে অনেক দুক্ষু , ভাবে খালি মেয়ের শাশুড়িটা বাড়াবাড়ি! কি দরকার শুধু গলায় নাক তার মেয়েটার সাজানো সংসারে!
ছেলের বউ ভাবে জামাইয়ের মা আস্তো কুটনি আর জামাইয়ের মা ভাবে মেয়ের শাশুড়িটা আস্তো ডায়নি!
এভাবেই যাচ্ছে দিন, সবাই ভাবে তারই সংসার কেনো গলাবে নাক অন্যে! এখন মোদ্দা কথা হলো, " কার সংসার সেটাই তো মাঝখানে ঠিক হলোনা এখনো "।
এখন ছেলের বউ ভাবছে শাশুড়িকে পাঠাবে বৃদ্ধাশ্রমে। ওইদিন শ্বাশুড়ি মেয়েকে বলে, " বার করে দেতো বুড়িকে । শুধু শুধুই জ্বালায় তোরে। "
এখন কাহিনী হলো, ছেলের বউ আর মেয়ে পেয়েছে সংসার নিজের। এখন দুই শ্বাশুড়ি মিলে থাকছে বৃদ্ধাশ্রমে।
দুইজন মিলে দুই রুমে ভাবছে মুখ কালো করে , " বউটাই হচ্ছে খারাপ। দিলোনা ঠাঁই তার নিজেরই সংসারে। "
লিখাঃ নূসুরা নূর।
Congratulations @nusuranur! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 200 comments.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Your level lowered and you are now a Red Fish!@nusuranur, sorry to see you have less Hive Power.
Check out the last post from @hivebuzz: