তরার ঘাঁট থেকে ট্রলারে ইট নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।তখন কথা হল নৌকার মাঝির সাথে।কিছু কথা বলারপর মাঝির সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক বেশি বেড়ে গেলো ।আমাদের বাড়ি তরা থেকে ২ ঘণ্টার পথ।তাই আমি ভাবলাম তার সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।
আরশেদ মাঝি
আমি তার কাছে তার নিজের সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। সে দুই কথা এক কথায় তারনিজের জীবন কাহিনী বলা শুরু করল।
তার ডাক নাম আরশেদ।সবাই তাকে আরশেদ মাঝি বলেই ডাকে।তিনি এখন এই নৌকাটির মালিক।যার দাম প্রায় ৪ লক্ষ টাকা । আরশেদ মাঝি দরিদ্র পরিবারের সন্তান।জন্মের পর বাবাকে দেখে নি।তার মা তাকে অতি কষ্টে মানুষ করেছে।অভাব অনটনের সংসারে তার মা তাকে স্কুলে পাঠাতে পারে নি।তাই শিক্ষাগত কোন যোগ্যতাই নেই তার। কোন রকমের খেয়ে পরে দিন কেটেছে তাদের। তাদের বাড়ি নদী এলাকায় ছিল। নদীতেই ভেঙ্গে গেছে তাদের বাড়ি ঘর।এখন অনেক দূরে গিয়ে বাড়ি করেছে।যখন তার বয়স ১২ বছর ।
তখন থেকেই সে নৌকায় কাজ শুরু করে।তার ছোট কাকা তাকে নিয়ে যেত নৌকা চালানো শিখাতে।দুই বছরের মাথায় আরশেদ নৌকার ভালো একজন মাঝি হয়ে উঠল।সে এখন নৌকা চালাতেও পারে।তাই তার কাকা তাকে অন্য একটি নৌকায় তাকে কাজের জন্য পাঠাল।তখন থেকেই শুরু হল এরশাদের রোজগার।বয়স কম ছোট মানুষ তাই তার কষ্ট হতো অনেক। কিন্তু কাজ শেষে যখন টাকা পেত তখন সে খুবই আনন্দ পেত।
তার মা আর দুই ছোট বোন কে নিয়ে ভালই সংসার চলছিলো তার।এ ভাবে পার হল ৪ টি বছর।ও দিকে তার বড় বোনটি বড় হয়েছে ।সে নিজের রোজগারের টাকা দিয়েই বোনকে বিয়ে দিল।আর পরিবারে রইল ছোট বোন আর মা।কিন্তু দুর্ভাগ্য কিছু দিন পরই তার মা দুনিয়া থেকে চলে গেলেন।
কি আর করার ??তার কাকা তাকে বিয়ে করালেন । তার ছোট বোন আর বউকে নিয়ে ভালই চলছিলো তাদের।দেখতে দেখতে আরও ৩ টি বছর চলে গেল।এর মধ্যে তার ছোট বোনটিকে ও বিয়ে দিয়ে ফেলছে । ২২ বছর বয়সে সে একজন কন্যা সন্তানের বাবা হলেন এবং ২৫ বছর বয়সে একজন পুত্র সন্তানের বাবা হলেন । সে অশিক্ষিত হলেও জ্ঞানী ।তাই সে দুটি বাচ্চাই নিয়েছে।তার ইচ্ছা তার ছেলে মেয়ে কে লেখাপড়া করাবে।দুই জনকেই স্কুলে পাঠায়।
তার বউ খুবই ভালো মানুষ।তাকে সমস্ত কাজে সাহায্য করে।আর সময় পেলে ঘরে বসে হস্ত শিল্পের কাজ করে। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পাত্র বানায়।সে গুলো নিয়ে এরশাদ বাজারে বিক্রি করে। এটা তাদের বাড়তি আয়।তার মেয়ে এখন ক্লাস ৮ এ এবং ছেলে ক্লাস ৫এ পড়ে। তার এখন নিজের বড় বাড়ি হয়েছে কিছু পরিমান জমি ও কিনেছে ।এই নৌকাটি ও তার নিজের টাকায় কেনা। খুব ভালই সংসার চলে তার।সুখেই আছে সে ।
ইতি মধ্যে তার খাওয়ার সময় হল আমি কথা বলা বন্ধ করলাম। সে খেতে বস্ল।আমি লক্ষ্য করলাম সে ভাত খাচ্ছে কিন্তু কোন তরকারি নেই। কাছে গিয়ে দেখলাম শুধুই একটি মরিচ আর একটি পেয়াজ দিয়ে মেখে ভাত খাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ভাই নৌকায় তরকারি রান্না করেন নি?বলল হইসে কিন্তু আমার মিল দেই নাই।
কইডা টেহা তো বাছব।আমার পোলা মাইয়ার পাছে অনেক টেহা লাগে প্রতি মাসে।তাই আমার কষ্ট অইলেও আমি টেহা বাচাইবের চাই।আমি আর কিছু বললাম না।শুধুই ভাবতে লাগলাম তার ইচ্ছা আর স্বপ্নের কথা।
আমি কে
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি।আমি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। পাশা পাশি গ্রাফিস ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর আমার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন ভালো মানুষ হওয়া এবং মানুষের জন্য কিছু করাই আমার ইচ্ছা। ব্লগিং করা আমার প্রিয় একটি সখ।
BD Community কে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।খুবি সুন্দর একটি প্লাটফরম আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।এখানে আমার খুবই সহজে আমাদের মনের ইচ্ছা গুলো সবাই কে জানাতে পারি।অন্যের ইচ্ছা জানতে পারি।So I love BD Cmmunity.
আমাকে ফলো করুনঃ
Hive.blog - https://hive.blog/@naturelover98
D.tube - https://d.tube/c/naturelover98
Facebook - https://web.facebook.com/designerhr98
Twitter - https://twitter.com/MdHabib19978894
Instagram - https://www.instagram.com/marketerhabib/
Linekdin - https://www.linkedin.com/in/freelaner81292/
Fiverr - https://www.fiverr.com/habib81292?up_rollout=true
Freelancer - https://www.freelancer.com/u/designerhr
Upwork - https://www.upwork.com/o/profiles/users/~0168070379771bfd06/
আরশেদ মাঝির বাস্তব জীবনের গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম । আমার কোথাও কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ সকলকে।
বিদায়।