বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ হল এ থেকে পড়াশোনা করে। পাশাপাশি মেস এবং হোস্টেলেও থাকে। আমি মেসে থাকি। কলেজ পড়ুয়া কালীন সময়ে আমি হোস্টেলে ছিলাম। এরপর আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হই এবং মেসে থাকি। তবে বিগত এক মাস পূর্বে আমি ভেবেছিলাম হলে উঠে।কারণ হলে উঠলে থাকার খরচ পড়বে না ,পাশাপাশি সময়মতো খাওয়া-দাওয়া থাকে ,এরকম নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু হলে ওঠার সময় আমি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই। নতুন বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। সবকিছুই আজকের ব্লগে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ। যাতে আপনারা এদেশের হল ব্যবস্থা সম্বন্ধে কিছুটা জানতে পারেন।
আমি ঢাকা কলেজে পড়ি। বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের জন্যে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু আমার কলেজে এরকম কোন ব্যবস্থা নেই। কারণ এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি, সিট এর তুলনায়। পাশাপাশি এখানে রাজনীতির বিষয় রয়েছে। আমি হালকা জানতাম। আমার ছোটবেলা থেকে রাজনীতির প্রতি ইচ্ছা ছিল না,এমনকি করিও না। কারণ আমি বিশ্বাস করি এই ক্ষুদ্র জীবনে অন্যের ক্ষতি করে কোন লাভ নেই। তো যেহেতু আমি হলে হতে চেয়েছিলাম,তাই আমি কিছু নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম।
তো সবার প্রথমে হলে ওঠার জন্য এলাকার পরিচিত ভাইদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। আমি যেহেতু কোনো রাজনীতি করি না ,সে ক্ষেত্রে এক বছর শেষ হওয়ার পরও তেমন কোন বড় ভাই পরিচিত ছিল না । তবে আমার নিজের ভাইয়ের এক বন্ধু ঢাকা কলেজে পরেছিলো তার সাথে আমি কথা বলেছিলাম। তারপর উনি আরেকজন ভাইয়ের সন্ধান দিয়েছিলেন তার নাম জুলফিকার। এরপর আমি জুলফিকার ভাইয়ের সাথে দেখা করি। তারপর উনি আরো 2-3 জন বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করিয়ে দেন। এরপর সেই ভাইয়ের নাম রাকিব ভাই। তারপর রাকিব ভাই আরেকজন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন তার নাম রফিক ভাই। সবদিক মিলিয়ে আমার ভ্রমণ ছিল একটু অন্যরকম। একজন থেকে আরেকজনের কাছে যাওয়া। বলে রাখা ভালো এই রাকিব ভাই আমার খুবই পরিচিত একজন ভাই যা আমি পরে জানতে পারি। বলতে গেলে উনি আমার আত্মীয় বটে। উনি কুড়িগ্রাম ছাত্র কল্যাণ এর সভাপতি। তো মেইন ঘটনায় আসা যাক।
এরপর রফিক ভাই আমাকে কিছু আমার বন্ধু অর্থাৎ যারা বর্তমান দ্বিতীয় বর্ষে রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। এরা মূলত আমার বন্ধু তবে এরাই ১য় বর্ষে যারা হলে উঠে তাদের র্যাগ দিয়ে থাকে। আমাকে তারা র্যাগ দেয়নি কিন্তু আমাকে তারা নিয়ম কারণ শিখিয়েছিল। তো সবার প্রথমে " গেস্টরুম নিয়ম"। এটাই নিজের নাম, কোন বিষয়ে পড়ি, জেলা, কার মাধ্যমে হলে উঠেছি বলতে হয়। একটু ভুল হলেই তারা গালিগালাজ করে । এরপর নানান প্রশ্ন উত্তর।ছাত্রলীগের সভাপতির নাম কি? তোমার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নাম কি? কলেজে কতটি হল রয়েছে? কোন হল কার নির্দেশে চলে ? আরো নানান বিষয়। প্রশ্ন যেন শেষই হচ্ছিল না। এসব দেখেই আমার হলে ওঠার 30% ইচ্ছা কমে গিয়েছিল।
এরপর ওরা বলল হলে থেকে যাও একটা রাত। আমি সেদিন হলে প্রায় 4-5 ঘন্টা ছিলাম। এসময় তারা নিউ মার্কেট মার্কেট আমাদের সকলকে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের মাথায় হেলমেট হাতে রড। কি আর বলব আমি পুরাই অবাক হয়ে। মূলত এসব কারণে আমি অনলাইন থেকে কিছুদিন দূরে ছিলাম, আমার ভালো লাগতেছিল না জীবন। এরা কি করতেছে ভাই। এটা কি জীবনের উদ্দেশ্য। কি লাভ এসব করে।
পাশাপাশি আরও কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। যেমন হোটেল প্যারাডাইস, সেখানে গিয়ে আমরা 450 টাকা বিরানী খেয়ে মাত্র 150 টাকা দিয়েছিলাম। আবার ঢাকা কলেজের অপর পাশে অবস্থিত মিষ্টির দোকানে আমরা 350 টাকার মিষ্টি খেয়ে 100 টাকা দিয়েছিলাম। এসব আমার কাছে জীবনে প্রথম। আমি এসব কখনও কল্পনাও করতে পারি না। অন্যের থেকে জোর করে কিছু নেওয়া আমার কখনো ইচ্ছা ছিল না। দরকার হলে খাবোই না। দরকার পড়লে সাদা ভাত খাব। এসব কারণেই মূলত আমার হলে ওঠার ৭০% ইচ্ছা চলে গিয়েছিল।
এবার বাকি ৩০% ইচ্ছায় আসা যাক। হলে রুমের মধ্যে তুমি কখনো পড়তে পারবা না। পড়তে চাইলে রিডিং রুমে গিয়ে পড়তে হবে। রুমে রাত একটার আগে ঢুকা যাবে না। ক্যাম্পাসে কোথাও বসা যাবে না। পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে। কোন প্রোগ্রামে ডাক দিলে সাথে সাথে যেতে হবে। আবার রুমে ছারপোকার জ্বালা। আবার একটি রুমে প্রায় 13 জন থাকে । 13 জন ও কম একটি রুমের ক্ষেত্রে । তবে গণ রুমের অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে একটি ছোট রুমে প্রায় 120 জন থাকে। তারা তিন শিফট করে ঘুমায়। এটা ছিল সবচেয়ে কষ্টদায়ক একটি কাজ। তবে হলে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে দুই বেলা । 35 টাকা করে মিল। রুমের ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবা না। বড় ভাইদের দেখলে সালাম দিতে হবে। পাশাপাশি রুমের ঘর ঝাড়ু দেওয়া, পানি আনা ,এসব ছোটখাটো কাজ তোমাকেই করতে হবে। যদিও এসব সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় মাস করতে হবে। এরপর নতুন জুনিয়র আসলে তাকে দিয়ে করানো হবে। তবে এই পরাধীনতা সারা জীবনের জন্যই ।
আমি একজন স্বাধীন মানুষ। আমি অন্যের ক্ষতি করি না। বাইরে থাকলে সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা বেশি লাগবে। তবে শান্তিতে থাকা যাবে। তাই আমি হলে ওঠার চিন্তা পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিই। তবে সকল ক্ষেত্রে সবাই এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয় না।অন্যান্য জায়গায় কর্তৃপক্ষ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আমার ঢাকা কলেজে সবকিছুই ব্যতিক্রম।
এই ছিল আমার হলে ওঠার অভিজ্ঞতা। মূলত হলে যে মানুষ টাকার অভাবে থাকে এটা ভুল ধারণা। অনেকে রাজনীতি করার জন্য হলে থাকে। তবে সিংহভাগ দারিদ্র্যতার কারণেই হলে উঠে। আমার যেহেতু একেবারে দারিদ্রতা নেই ,তাই আমিও চাচ্ছিলাম না হলে উঠে। আল্লাহর রহমতে আমি খুবই সুন্দর জীবন যাপন করি। আমি আমার জীবনকে আল্লাহর পথে ছেড়ে দিয়েছি। তাই আমি যাচ্ছিলাম না আর কোন গুনাহর কাজে জড়াই। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুক।
Hi @minhaz007, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Apni dhaka collage a poren? Ami dhaka collage er ei masjid a giye namaz porchila koek bchor age.
Hae vai ami toh dhaka college ei pori,akhn hons 2nd year,aj gorib bole eikhane pore,medha nai bole eikhane pori nahole,du/nstu te portam