কোনো এক দিনের খণ্ডাংশ।

in BDCommunity3 years ago

পরিবারের ছোট ছেলে মানেই ছোট ছেলে। তার বয়স ১০ বছর কিংবা ২০ বছর ছোট সবসময় ছোট-ই থেকে যাবে এটাই যেন প্রচলিত প্রথা। সমস্যা কি তাতে, ছোট ছেলেটা তো তাতে বরং খুশি ই কারণ পরিবারের এত এত দায়িত্ব তার কোনো কিছুর চিন্তা নেই। মাথার উপরে এখনো ছায়া দেওয়ার মতো বাবা আছেন, আছে বড় একজন ভাই। আমার বরং পরিবারের এতসব দায়িত্ব নিতে হবেনা তারাই ভালো দেখছেন। বেজায় খুশি!

1625562557916.jpeg

অনার্স পড়ুয়া ছেলে কিছু করে না, বাসায় ঘুমায় আর বাইরে আড্ডা দেয়। দিনকাল তেমন ভালো নাহ, কখন কোন বিপদ না ডেকে আনে সেই চিন্তায় মাঝে মাঝে দুকথা শুনিয়ে দেয় বাবা। তাতে কর্ণপাত করে লাভ নেয়, এক জিনিস বারবার শুনতে ভালো লাগে না। সময় আসলে সবই হবে।কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত সময় সেটা আমার নিজেরও জানা নেই।তবে মায়ের কাছে এমন কিছু নিয়ে তেমন কিছু শুনতে হয়না, ওনাকে ইনিয়ে বিনিয়ে আমার অনেক আকাশকুসুম পরিকল্পনা শুনিয়ে বোজানো যায়। ছোট ছেলে এখনো ছোট আছি এই ট্যাগ খানা বড্ড উপকারী।

ঘুম ভেঙে দেখলাম ঘড়িতে সকাল ৯ টা বাজে।অথচ ৯ টার আগেই যে এক জায়গায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল। বড্ড দেরি করে ফেললাম। ৫ মিনিটের মাঝেই বেরিয়ে যাচ্ছি পেছন থেকে মায়ের ডাক,"কোথায় যাচ্ছিস এত তাড়াহুড়ো করে? সকালের নাস্তা টুকু করে যা।" "পরে এসে করছি।" বলেই বেরিয়ে পড়লাম। মনে মনে ভাবছি যে মা নিশ্চয় ভাবছে যে আমিতো ১১ টার আগে ঘুম থেকে উঠি ই নাহ, তাহলে আজ ৯ টার ভিতর কোথায় যাচ্ছি। হা হা হা। বাড়ি ফিরলে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সমস্যা নেই, মায়ের সাথে প্রশ্নোত্তর খেলা খেলতে ভালোই লাগে। ২ ঘণ্টা পড় যখন বাড়ি ফিরলাম কেমন যেন একটা নিস্তব্ধ পরিবেশ ছিল সবার মাঝে। আচ করলাম কিছু একটা হয়েছে, মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আরো দৃঢ় হয়ে গেলাম। ছোট বোনকে পাশে টেনে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলাম সেটা শোনার পর। নিজের ঘরে এসে কতক্ষণ শুয়ে থাকলাম। আমার মাঝে না তৎক্ষণাৎ উওর দিয়ে কিছুর সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা টা খুব কম। তাছাড়া ভাবতেছিলাম আমি ছোট ছেলে আমার কথায় আর কি-বা পরিবর্তন হবে।

চিন্তার কালো মেঘ জমা হলো, হরেক রকমের চিন্তাভাবনা ভিড় করতে শুরু হলো। একটা ধারণা ছিল পারিবারিক সমস্যার মূলে সবসময় টাকা-পয়সা থাকে।কিন্তু নাহ, মাঝে মাঝে টাকা-পয়সার অভাব অনটন কে হার মানানোর মতো সমস্যাও এসে আমাদের কাছে যেগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই মুশকিল। কিছুক্ষণ পর বের হলাম ঘর থেকে। বাবা-মা ছোট বোন এখনো বসে আছে সম্মুখ কক্ষে। গিয়ে বসে সাহস করে কিছু কথা বলে ফেললাম। বাবা সায় দিলেন, আমার কথার উপর ভর করে আমল করা হলো। আপাতদৃষ্টিতে সমস্যার একটা সমাধান বের হলো কিন্তু এর একটা প্রভাব থেকে যাবে আজীবন সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে কিন্তু বর্তমান টাই যে মুখ্য এখন। প্রথমবারের মতো মনে হলো ছোট ছেলে আর ছোট ছেলে নেই, তার সিদ্ধান্তও মেনে নিয়ে আমল করার মতো যোগ্যতা সে লাভ করেছে। কিন্তু তাতে খুশি হয়ে কি লাভ? বড় হয়েছি সে উপলব্ধি হয়েছে ঠিকই সেই সাথে সমস্যা গুলো আচ করতে পেরে চিন্তার যে ভাজ পড়েছে সেগুলো কিভাবে দূর হবে তা নিয়েই সন্দিহান।

বাসা থেকে বেড়িয়েছিলাম ফিরে এসে মায়ের হাজারটা প্রশ্নের উওর দেবো এই চিন্তায় ফিরে এসে মায়ের মুখে এখন পর্যন্ত একটা ও কথা বের হয়নি। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হতে চলছে অথচ এখনো রান্না হয়নি। সকালে নাস্তা করে বের হয়নি আর এখন এত্তসব বিষন্নতায় কখন বেলা ফুরিয়ে গেল টের ই পেলাম না। বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি বলে বের হবো এমন সময় মায়ের মুখ থেকে আওয়াজ বের হলো, "দরকার নেই,আর অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো আমি রান্না করে নিয়ে আসছি। " এই বলে মা উঠে গেলো পেছন পেছন ছোট বোন। বাবা ইশারায় কাছে ডেকে নিয়ে অনেক কিছু বললেন। কথার ওজন আছে, কিছু কিছু কথার ভার সহ্য করতেও একটা যোগ্যতা লাগে। আমার কতটুকু আছে তা আমার জানা নেই কিন্তু সে কথাগুলোর ওজন যে খুব বেশি ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

Sort:  

পারিবারিক ও ব্যক্তিগত গল্প নিয়ে লেখা, সুক্ষ দৃষ্টিকোনের সাবলীল উপস্থাপন। ভালো লিখেছেন, বাস্তবধর্মী লেখা 👍

Thank you for the appreciation.