যখন কোনো কিছু নিয়ে আমি লিখতে বসি তখন ব্যক্তিগতভাবে ওই ব্যাপারটি নিয়ে আমি অনেক্ষন পর্যবেক্ষণ করি , ভাবতে থাকি , কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে আমি তীব্র ভাবে গবেষণা করি । আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি কোনো ভাবনা সুন্দর ভাবে লিখবার আগে তা নিজের অন্তঃস্থলে রাখা জরুরি নয়তো ব্যাপারটার মধ্যে অজান্তেই একটা মিথ্যাচার যুক্ত হয়ে যায় ।সেটা অনেক পাঠক ধরতে পারেন আবার অনেক পাঠক পারেন না , তবে যে লিখছে সে কিন্তু জানে । আমি আমার জীবনে খুব কম সময়ে ক্ষনিকের কোনো একটা ভাবনা নিয়ে লিখেছি বলে আমার মনে হয় । আমি খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করি তারপরই লিখি , এটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি করে থাকি ।
আমি খুব ভীতু প্রকৃতির আবার ঘরকুনো একটি মেয়ে। পড়াশুনার জন্য বেশির ভাগ সময়ে বাসার বাইরে থাকি।এখনকার কথাতে পরে আসছি , আগে একটু পিছনের কথা বলে আসি । এডমিশন এর সময়ে কোচিং করতে মিরপুর থেকে ফার্মগেট যেতাম , তখন মেট্রো ছিলোনা , বাসই একমাত্র উপায় ছিল ।কোচিং সময় ছিল সকাল নয়টা । সময় মতন ক্লাসে যেতে হলে সকাল আটটার ভিতরে কলসি মোড় থেকে ট্রাস্টের বসে উঠতে হতো , আর ওই একই সময়ে অফিস যাত্রাপথের মানুষও বের হতো ।কি ধাক্কা ধাক্কি করে বাসে উঠতে হতো ভাবলে এখন ও কেমন জন অস্থিরতা লাগে । আমি একা যেতামনা , আব্বু যেত সঙ্গে ।বাসে সিট পাই কিংবা দাঁড়িয়ে থাকি আব্বু সবসময় আমাকে ঘিরে রাখতো । প্রথম প্রথম ব্যাপরটা বুঝতাম না , পরে খেয়াল করে বুঝলাম রাস্তায় বা বাসে কারো স্পর্শ যাতে না লাগে আব্বু সেই খেয়াল করে আগলে রাখতো আমাকে। বাবার এমনই হয় ।
তখন কেবল বয়স ঊনিশের গোড়ায় ছিল , বুঝতে দেরি হতো , এখন বয়স বেড়ে চব্বিশ হয়েছে , আমার বুঝার ক্ষমতা হয়েছে । এখন নজর দেখেই অনেক কিছু বুঝে যাই , প্রেমের ফাঁদ পেতে কে খারাপ ইচ্ছা নিয়ে আসে অল্পতেই বুঝে যাই । আমার ছেলে ভীতি আছে , কয়েকটা সঙ্গত কারণে আমি আমার আসে পাশে আব্বু বাদে অন্য ছেলের উপস্থিতিতে ঘাবড়ে যাই ।অবশ্য এর কটকটি কারণ আছে তা পরে বলবো , এখন সেসব বলবার শক্তি আমার নেই । আমি আমার খুব কাছ থেকে অনেক সম্পর্ককে কেবল শারীরিক সম্পর্কের উপরে ভিত্তি করে থাকতে দেখেছি । মেয়েরা মলেস্ট হচ্ছে, নানা ভাবে অপদস্ত হচ্ছে এই জিনিসটা কয়েকদিন ধরে আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ,ওই যে বললাম আমি পর্যবেক্ষণ করে একটা লিখার প্রেক্ষাপট নিয়ে বসি । এই বিষয় নিয়ে কিছু জিনিস বা আর্টিকেল পড়ছিলাম তখন দেখলাম কিছু মানুষ ধর্ষিত মেয়ের গায়ে কি কাপড় ছিল , কখন বেরিয়েছিল , কিভাবে চলাফেরা করতো এর উপরে নির্ভর করে জাজ করা শুরু করে , অথচ অনেক মানুষ কবর থেকে কাফনে মোড়ানো লাশকেও ছাড় দেয়না ধর্ষণের থেকে ।
বর্তমানে ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক অনেকটা প্রচলিত ।
হালাল হারাম এইসব বিবেচনায় আমি এখন যাচ্ছিনা তবে আমার আসে পাশে এমন অনেক পুরুষ তথা প্রেমিক পুরুষ দেখেছি তারা কনসেন্ট জিনিসটাই বুঝেনা । আর অনেক মেয়ে বোকামি বলবো নাকি অন্ধ প্রেম বলবো ঠিক বুঝতে পারছিনা , তারা কেবল সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কাজ করে ফেলে । তবে কনসেন্ট উভয়ের থাকলে সেটা আলাদা ব্যাপার । তবে প্রেমের নাম দিয়ে , ভালোবাসার দোহাই দিয়ে ফিজিক্যাল ইন্টিমেসির জন্য মানসিক চাপ দেওয়াটা ভয়াবহ । এখন অনেকে বলে বিয়ে করে নিক , মেরিট রেইপ বলেও একটা বিষয় আছে যেটা ধর্ষণের স্টেজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে চাপা খেয়ে নিচে পরে থাকা একটা বিষয় ।হয়তো আমি বেশি ভাবছি , নয়তো আমি অতিরিক্ত ভীতু ।আমি জানিনা আমরা ভবিষ্যতে আরো কতটা ভয় নিয়ে বেঁচে থাকবো , বাসা থেকে বাহির হতে এখন রীতিমতন ভয় লাগে । বন্ধু , প্রেমিক এদেরকে তো বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভাবা উচিত তবে এখন মেয়ে হয়ে মেয়ের উপরেও বিশ্বাস আসেনা ।
আমার ভাবনাগুলো হয়তো ছন্নছাড়া ভাবে লিখছি তবে এটা এখন সমাজের ব্যাধি হয়ে গেছে । গোড়া থেকে এই ব্যাধি নির্মূল না হলে এর যোগ বাড়তে থাকবে । আর এই ডগাগুলো মেয়ে জাতিকে আঁকড়ে ধরে তিলে তিলে বিষিয়ে তুলবে , তখন আবার একদল পুরুষ বলে উঠবে " মেয়েরা ছেলে বিদ্ধেষী , ফেমিনিস্ট !" কেউ অধিকার চাইলে তারে অপরাধীর স্থানে নিয়ে যাওয়ার তো সমাজের পুরোনো ব্যাধি !
লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ , আজকের মতন এখানে বিদায় নিচ্ছি , আশা করছি দেখা হবে খুব শীঘ্রই ।
যে কথাগুলো তুলে ধরেছেন তা অস্বীকার করার সাধ্য মনে হয়না এখনকার যুগের কারো কাছে আছে।আমরা জাতিগত দিক থেকেই বড় বেশি জাজমেন্টাল।তবে ১০০ টা নেগেটিভিটি থেকে ৫ টা পজিটিভিটি খুজে বের করতে পারলে মনে হয় এত বেশি ফোবিয়া নিয়ে বাচতে হয়না।যে কারনেই হোক আপনার যে পরিমান ফোবিয়া কাজ করে তা আপনার নিজেকেই যেন কুড়ে না খায়।ছোট্ট এক জীবনে ভয়কে জায়গা দেবার মতন সময়ই বা কই!শুভকামনা....
লেখার ভাষা বুঝতে পেরে তার সাথে সম্মতি প্রকাশসূচক অনুভূতি ব্যক্ত করবার জন্য ধন্যবাদ , আসলে আসে পাশে এতো নেতিবাচক জিনিস যে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া বড্ড কষ্টের তবুও চেষ্টা করছি , দোয়া করবেন 🌸