বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য...☢️

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210316_235317.jpg
গ্রীষ্মকালঃ আমার কাছে গ্রীষ্মকালকে সকল ঋতুর নায়ক মনে হয়। গ্রীষ্ম হলো বছরের উষ্ণতম কাল, যা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সাধারণত জুন, জুলাই এবং আগস্ট জুড়ে অবস্থান করে। পৃথিবীর সর্বত্রই গ্রীষ্ম হলো কর্মোদ্যমের সময়। বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলোতে গ্রীষ্ম খুবই আরাধ্য, কারণ সেসকল দেশে শীতকালে কোনো ফসল উৎপাদিত হয় না, গ্রীষ্মকালেই সব ফসল উৎপাদন করে রাখতে হয়। সুখকর বসন্তের পর কঠোর বৈশাখের অনুভূতি তেমন মনোরম না হলেও একথা স্বীকার করতেই হয় যে গ্রীষ্ম ঋতু রুপের নানা বৈচিত্রে বৈচিত্র্যময়।

--20.jpg
বর্ষাকালঃ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ছয়টি ঋতু বিরাজমান। প্রকৃতির সাথে প্রতিটি ঋতুর যোগসূত্রের বন্ধন রয়েছে। এক ঋতু চলে গেলে আরেক ঋতু চলে আসে। এটাই চিরন্তন। ঋতুচক্রে বর্ষার স্থান দ্বিতীয়। আষাঢ় ও শ্রাবণ-এ দু’মাস বর্ষাকাল। তবে এর ব্যাপ্তি আরো বিস্তৃত। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ আর প্রখর রোদের পর ঘন গৌরবে নব যৌবনে আসে বর্ষা। ষড়ঋতুর লীলার মাঝে বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যে বর্ষাকাল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বসন্তকে ঋতুরাজ বললেও রূপের গৌরব ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই প্রকৃতির রাণী। কখনও বর্ষার প্রচন্ড গর্জনে মুখরিত হয়ে শুরু হয় প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি, দেখা দেয় বন্যা। তখন ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়, ঘর বাড়ি, গাছপালা নষ্ট হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালের শুষ্ক নদী মুহুর্তের মধ্যে যৌবন ফিরে পায়।

s1.jpg
শরৎকালঃভাদ্র ও আশ্বিন এই দু'মাস শরৎকাল। এই সময় বর্ষা আস্তে আস্তে বিদায় নেয়, আকশের বুকে সাদা সাদা পেঁজা তুলাের মত মেঘ ভেসে বেড়ায়, আকাশের রং হয় গাঢ় নীল। মাটিতে ও সবুজ ধান গাছের ডগায় রােদ আর ছায়ার লুকোচুরি খেলা দেখা যায়। বাতাসে পূজার ছুটির বাঁশি বেজে ওঠে আসে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। শরৎকালে যে সমস্ত ফল পাওয়া যায় সেগুলো হল – আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরই, করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি।
শরতের প্রভাতে হালকা কুয়াশা আর বিন্দু বিন্দু জমে ওঠা শিশির এ ঋতুর প্রধান উপহার । এ সময় পূর্ণ যৌবনা নদী প্রাণচাঞ্চল্যে, খরতর বেগে ছুটে চলে আপন গন্তব্যে। রক্তিম সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হয়।
hemonto-1.jpg
হেমন্তকালঃ কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দু মাস নিয়ে হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে।

এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। হেমন্তে সকাল বেলা আবছা কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারিদিকের মাঠঘাট।সকালে ধান গাছের ডগায় যে শিশির জমে থাকা তা হেমন্তের জানান দেয়।ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন ও আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তেরধান পরিপক্ক হয়, আর তখনই ধান কাটার উপযোগী হয়। আর এই হেমন্তে শুরু হয় কৃষকের ঘরে ফসল তোলার প্রস্তুতি।হেমন্তের শেষের দিকে কাস্তে হাতে কৃষকরা মাঠে মাঠে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর নতুন ফসল দেখে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।আবহমান বাংলার শস্যভিত্তিক বড় মাপের একটি লোক উৎসব হল নবান্ন। নবান্ন অর্থ- নব নতুন আর অন্ন ভাত।হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় নবান্নের উৎসব। ভালোবাসি হেমন্তকাল ❤️
images.jpg
শীতকালঃ শীতকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বাংলার রূপ বৈচিত্র্যের অনেকখানি জায়গা জুড়ে শীতের অবস্থান। হেমন্তের সোনালি ডানায় ভর করে হিমেল হাওয়া সাথে নিয়ে কুয়াশার রহস্যময় চাদর জড়িয়ে আসে শীত। শীত বাঙালির প্রিয় ঋতু। যেকোনো ঋতুই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও মহিমাময়। এসব কিছুর পরেও মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনে শীত যেন বিশেষ আদরের, দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে প্রাপ্তির আনন্দে উজ্জ্বল হলুদ পাতার ঝরা খামে চিঠি আসে শীতের। হিম-শীতল বাতাসে উত্তরের পথ ধরে ঘন কুয়াশার উত্তরীয় গায়ে প্রকৃতিতে শীতের আগমন। পিঠা পুলি আর খেজুর রসের মিষ্টি ঘ্রাণে বাংলার ঘরে ঘরে শীত বরণ হয়।পৌষ-মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। যদিও শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় হেমন্তের শেষে অর্থাৎ অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে। প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা হয় বহু আগেই। শীতের সকালের রূপ অন্যসব ঋতু থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। হেমন্তের দিনগুলো শেষ হতে না হতেই শীতবুড়ি এসে প্রকৃতিতে হাজির। কুয়াশা কন্যারাও নির্জন বন-মাঠ আর নদীর কূলজুড়ে ছাউনি ফেলে। উত্তর দিগন্তে হিমালয়ের বরফচূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে হিমশীতল নিঃশ্বাস। পৃথিবী কেমন যেন জড়সড় হয়ে যায় শীতে। বিবর্ণ হলুদ পাতারা চুপিসারে খসে পড়ে পথের ধুলোয়। শীতের দীর্ঘ রাতে কুয়াশার আবরণ গায়ে মেখে সুবহে সাদিকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। পিঠা-পার্বণের ঋতু হিসেবে শীতের রয়েছে আলাদা খ্যাতি। শীতের সকাল যেন পিঠা তৈরির আদর্শ সময়। গ্রাম বাংলার বধুরা তাই ঠান্ডা উপেক্ষা করে নিপুণ হাতের স্পর্শে বানায় দারুণ সব মজাদার পিঠা। শীতের পিঠার মধ্যে সবার আগে আসে ভাপা পিঠার নাম। এছাড়াও বহু সুস্বাদু পিঠা তৈরি হয় শীতের সকালে। তার মধ্যে-চিতই, দুধ চিতই, পুলি পিঠা, দুধ পুলি, ক্ষীর পিঠা, পাটিসাপটা, নকশী পিঠা ও পাকোমান পিঠার নাম উল্লেখযোগ্য। সবমিলিয়ে শীতকাল যেন ভালোবাসার আরেক নাম।

Mathxx.jpg
বসন্তকালঃফাল্গুন ও চৈত্র এ দুই মাস বসন্তকাল। বসন্তকাল নবযৌবনা রূপ নিয়ে অজস্র ফুল, পাখি, পত্রপল্লব, বর্ণ গন্ধ, সুর ও ছন্দ একসাথে জড়ো করে হাজির হয়। তার আগমনে প্রকৃতি যেন অকস্মাৎ ঝলমলিয়ে হেসে ওঠে। এ সময় শীতে ঝরে যাওয়া গাছপালা নতুন কিশলয়ে ভরে যায়।
বাসন্তী পুজো, চড়ক পুজো ও বসন্ত উৎসব এই ঋতুকে রঙিন করেছে। ... দূর্গা পুজোর আরেক নামই বাসন্তী পুজো। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়।ফলের মধ্যে ফলের রাজা আমের রাজত্ব চোখে পড়ার মতো। মহাচানক, রঙিন আমেরিকান পালমার, থাই কাটিমন, থাই নামডকমাই, থাই ব্যানানা আম, মালয়েশিয়ান লুবনা, হাঁড়িভাঙা, কিউজাই, পুনাই, চেন্নাইসহ অনেক জাতের আম।চাঁপা বা চম্পা ফুলটির নাম এসেছে সংস্কৃত 'চম্পক' থেকে। চাঁপা ফুলের গাছ চিরসবুজ। ... আর এই ফুলের যা সুন্দর গন্ধ! বসন্ত থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত চাঁপা ফুল ফোটার সময়। এজন্যই বসন্তকে সকল ঋতুর রানী বলা হয়।

Sort:  

Source of plagiarism 1
Source of plagiarism 2
Source of plagiarism 3
Source of plagiarism 4

Plagiarism is the copying & pasting of others' work without giving credit to the original author or artist. Plagiarized posts are considered fraud and violate the intellectual property rights of the original creator.

Fraud is discouraged by the community and may result in the account being Blacklisted.