অতঃপর আমরা সবাই আরো তারাতাড়ি করে পা চালাতে শুরু করলাম। আমাদের কারো পা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে না। সবার পা প্রায় অবস হয়ে এসেছিল তবে আমরা আমাদের লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি জানতে পেরে মনোবল বেড়ে গিয়েছিল। সাবাই পা চেপে চেপে শেষ ১০ মিনিট পাহাড়ের গা ঘেঁষে ওঠলাম। আমাদের কষ্টের পাহাড় ওঠার সমাপ্তি হলো। আমাদের চোখের সামনে আমাদের গন্তব্য। পা দুটো একেবারেই ক্লান্ত তবে মনে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।
চোখের সামনে অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ওপরের অংশটুকু সমতল। এখান থেকে যত দূর চোখ যায় খালি পাহাড় আর পাহাড়। সব পাহাড়ের মাঝ দিয়ে অল্প কিছু জনবসতিও দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এ এক অপরুপ সুন্দর জায়গা। সমতল ভুমির কিনার ঘেঁষে ঘেঁষে কয়েকটা বেঞ্চ রাখা। সেখানে শুয়ে শুয়ে এই প্রকৃতি উপভোগ করার অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়।
আমরা সবাই বেঞ্চে বসে ছবি তুলছি আর তার থিক পিছনেই আমাদের গাইড তাবু লাগানোর বেবস্থা করছে। আর কিছুখনের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।আলো আর কিছুসময়ই আছে। আমরা চারপাশটা ভালো মতো ঘুরে দেখলাম। উপরে আরও ১৫ মিনিট উঠলে একটা বৌদ্ধ উপাসনালয় কিন্তু সেখানে ওঠার মত শক্তি আর কারোই নেই। আর এমনিতেও কাল ভোরে আমাদের ওখানে যেতেই হবে সকালের মেঘ দেখার জন্য। আমরা আমাদের তাবুর পিছন দিকে অনেকটা সামনে একটা কুড়েঘর দেখতে পেলাম যেটা বাশ আর খড় দিয়ে বানানো। আমরা সবাই খানে বসে গানের আসরে বসে পড়লান।
অনেক অন্ধকার হয়ে এলো সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। আমরা পাহাড়ের ওপরের চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেলাম। দাম বেশি হওয়াটাই সাভাবিক বিষয় তবে আমাদের তাতে আপত্তি নেই। পাহাড়ের এত উচুতে চা মিলছে এই তো অনেক! চা খেয়ে আমারা তাবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে গানের আসরে আবার বসলাম। চারিদিকে মানুষে ভরে গেল আমাদের ঘিরে। পাহাড়ে ঘুরতে আসা সব মানুষ আমাদের গান শুনতে ভির জমিয়েছে। রাত ৯টা অবদি আমরা গানবাজনা করলাম। তারপর রাতে খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের জালানো আগুনের কয়লায় মুরগী দিয়ে দেওয়া হলো৷ মুরগির মাংস বারবিকিউ করা হবে। আমাদের বারবিকিউ শেষ হলো খেতেও বেশি লাগলো না। সারাদিন ধরে পাহাড় ওঠার পর পেটে খুদা ছিল অনেক।
অতঃপর কিছু সময় আমরা বিশ্রাম নিলাম। তারপর আবারও আমাদের গানের আসর শুরু করলাম। আকাশের চাঁদ টাকে অনেক কাছে মনে হচ্ছিল। আমাদের সাথে পাহাড়ে আসা সব মানুষ আমাদের সাথে রাতজেগে গান গাইছে।ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই। আমরা কিছুসময় বিশ্রাম নিলাম। কেও ঘুমাইনি ঠিকমতো। ভোরের আলো ফুটবে। সবাই তাদের তাবু থেকে বের হয়ে আসছে। ওপরে গিয়ে প্রকৃতির রুপ দেখবার জন্য। আমরাও সবাই বের হলাম আর উপরে ওঠা শুরু করলাম। কিছু সময় পরই আমরা পৌছে গেলাম আর দেখতে পেলাম সেই অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য যা দেখবার জন্য এতটা কষ্ট করেছি।
এই অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য দেখবার পর নিজেকে সৌভাগ্যবার মনে হচ্ছিল। আসলেই প্রকৃতি কতটা সুন্দর তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। আমরা ছবিতে অনেক কিছুই দেখি কিন্তু বাস্তব যে সবসময় আলাদা হয় তা ঠিকই টের পাচ্ছিলাম। সব শেষে আমার তাবুতে ফিরে এলাম। কিছুসময় ঘুমিয়ে নিলাম কারন কিছুসময় পরই আমাদের নিচে নামার পালা।