'বই' শব্দটা শুনতে পেলেই আমাদের কল্পনার চোখে ভেসে ওঠে ছয় তল বিশিষ্ট এক বস্তু। যার প্রতি পাতাতেই রয়েছে জ্ঞানের ভান্ডার। হ্যাঁ, এর প্রত্যেক পাতাই জ্ঞানের ভান্ডার।তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিশেষত তরুন প্রজন্মের জন্য বই পড়া নিছক সময় নষ্ট। অনেকের বই পড়লে মাথা ধরে,অনেকের ঘুম পায়, অনেকে দু-চার পাতার বেশি পড়তে পারে না।অনেকে তো আবার, সারাদিন অনলাইন গেমস কিংবা ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। তাদের বই পড়ার সময় নেই।তারা এইসব অজুহাতে কতবড়ো মহৎ একটা জিনিস বাদ দিচ্ছে কিংবা ফেলনা হিসেবে ফেলে দিচ্ছে, তা তারা নিজেরাও জানে না।আমাদের এ পুরো বিশ্বকে মহান বিধাতা অকল্পনীয় জ্ঞানের ভান্ডারে ভরপুর করে রেখেছেন।জ্ঞানের সীমানা নেই।আমরা যতই জানবো ততই উপলব্ধি করতে পারবো যে,'আমরা আসলে কিছু জানি না'।
এই বিশ্বের মহা জ্ঞানসমূদ্র থেকে অন্তত কিছুটা জ্ঞান যদি আমরা না আহরন করতে পারি তবে আমাদের সার্থকতাটা কোথায়?শুধু ফেসবুক দেখে কিংবা গেমস খেলে সময় নষ্ট করলে আমরা কি আদৌও সার্থকতার ছোয়া পাবো?আমরা কি কখনো নিজেকে একজন সার্থক বা সফল ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিতে পারবো?নাহ্,কখনোই আমরা সার্থকতার ছোয়া পাবো না,যদি না আমরা গেমস, ফেসবুকিং বাদ দিয়ে বই হাতে নেই।এই মহাবিশ্বের অসীম জ্ঞান সম্বন্ধে অন্তন ধারনা পাওয়ার জন্য বই পড়তে হবে।আর এর থেকে কীনচীত পরিমান জ্ঞান আহরন করতে হলে তো বই পড়ার বিকল্প নেই।পড়তে হবে অসংখ্য বই,ভাসতে হবে জ্ঞানের সমুদ্রে।তবেই সেই সমুদ্রের কিছুটা জ্ঞান আমাদের শরীরে লেপটে থাকবে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক—
আমরা অনেকেই সমুদ্রে বেড়াতে গেছি।সেখানে আমরা বিশাল সমুদ্রের মাঝে নিজেকে এলিয়ে দেই।সমুদ্রের জলে খুব আয়েশ করে আমরা আনন্দে মেতেউঠি।সেই বিশাল সমুদ্রের কোনো এক পাড় ঘেঁসে কৃত্রিম কিংবা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক তীরের অল্প একটু জায়গা জুড়ে আমরা বিচরণ করি আনন্দের খোঁজে।আমরা কিন্তু চাইলেও কোনো দিন সেই সমুদ্রের সবটায় সাঁতরাতে পারবো না।সমুদ্রের প্রত্যেকটা সূক্ষ্ম কোনে গিয়ে সেখানকার পানি গায়ে মাখতে পারবো না। আমাদের ঐ সমুদ্রেরর ছোট্ট একটা পাড়ের নির্দিষ্ট একটা অংশে আনাগোনা করতে হবে।আবার গোসল শেষে দেখা যাবে, আমরা যতটুকু এলাকা জুড়ে এত সময় খেলেছি,বিচরণ করেছি তার থেকে অতি সামান্য কিছু পানিই আমাদের শরীরে এবং কাপড়ে এঁটে আছে।আবার যে বিশাল সমুদ্র কে ভয় করে তীরে দাঁড়িয়ে থেকেছে সেতো ঐ ছোট্ট একটা অংশেরও মজা বা আনন্দ লুফে নিতে পারেনি।সুতরাং তার শরীরের কোথাও সমুদ্রের পানির ছোয়াও লাগবে না।সো শুষ্কই থেকে যাবে।কেননা সে সমুদ্রের আনন্দ নিতে ব্যর্থ।
আমাদের জ্ঞানের সমুদ্রটাও ঠিক তেমনই। জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রের প্রত্যেক সুক্ষ্ম কোনের আনন্দ আমরা কখনোই নিতে পারবো না।আমরা কখনোই বিশ্বের সবটুকু জ্ঞান আহরণ করতে পারবো না।এটা সবার জন্যেই অসম্ভব। কিন্তু পুরোটা না নিতে পারলে কি হয়েছে,,, ঐ যে ছোট্ট একটা তীর।তার মজা তো আমরা নিতেই পারি।তার মাঝে বিচরণ তো আমরা করতেই পারি।নিজের আনন্দ খুজতে পারি। আমরা যদি ঐ ছোট্ট পাড়েই সঠিক ভাবে বিচরণ করতে সক্ষম হই তবে সমুদ্রস্নান শেষে দেখা যাবে আমাদের গায়ে কিছুটা অন্তত জ্ঞান সমুদ্রের পানি লেগে আছে। কিন্তু আমরা যদি ঐ পাড়েও না নামি তবে দেখবো,আমাদের শরীরের কোথাও ই জ্ঞানেরজল লেগে নেই।আমরা শুষ্ক শরীর নিয়ে বসে আছি।আমাদের আশপাশের সবাই-ই জ্ঞানের সমুদ্রের নেমে ডুব দিয়ে নিজেকে ভিজিয়েছ কিন্তু শুধু আমি একাই শুষ্কতা অনুভব করছি। সুতরাং বিলম্ব করলেই বিপদ। বিলম্ব মানেই, আমরা জ্ঞানসমুদ্রের আনন্দ লুফে নিতে এক ধাপ পিছিয়ে।
এই জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রের পথে হাটতে হলে,জ্ঞানের সমুদ্রে স্নান সারতে হলে অবশ্যই আমাদের বই পড়তে হবে।বই পড়া ছাড়া কখনোই আমরা জ্ঞানের সন্ধান পাবো না।জ্ঞানের সমুদ্রে ডুবদিতেও পারবো না।আর বই পড়া মানেই সাহিত্যচর্চা।
আমি নিজে থেকে, নিজের মতো করে সাহিত্যের একটা সঙ্গা দিতে চাই —
"বইয়ের পাতায় যা লেখা হয় তাই-ই সাহিত্য, তবে একাডেমিক বই এর অন্তর্ভুক্ত নয়।"
অর্থাৎ বিশ্বের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে সব বই রচনা করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের স্কুল কলেজে বাধ্যতামূলক ভাবে যেসব বই পড়ানো হয় তা কখনোই সাহিত্য নয়।
আমাদের জ্ঞানের সাধনা করতে হবে,জ্ঞানের সমুদ্রে ভাসতে হবে।তার জন্য বই পড়া বাধ্যতামূলক তবে সাহিত্যের বই।
(সাহিত্যে বই — বিজ্ঞান সংক্রান্ত, ধর্ম সংক্রান্ত,দর্শন সংক্রান্ত, ভাষা শিক্ষা সহ বিশ্বের সকল বই। শুধু একাডেমিক বই ব্যাতীত। )