আমার অনিয়ম ব্যাপার টা দারুন লাগে। কোনোকিছু সময় মত না করার মাঝে একটা আলাদা রকমের আনন্দ আছে। এইযে সকালের খাবার বেলা একটায়, দুপুরের নাওয়া খাওয়া বিকেল পেরিয়ে আর রাতের খাবার সেটা তো এখন ইতিহাস। শেষ কবে রাতে খেয়েছি মনে নেই। আপাদত এই ভরদুপুরে কফির মগ হাতে নিয়ে মায়ের বকুনি খেতে খেতে আমি এসব ভাবছি! কফির ব্যাপার টা একটু বলি। এক কাছের বন্ধু বললো যদি কফি চা এইসবে অভ্যাস করতে পারি তবে নাকি মাথার ভেতর গল্প সাজাতে সুবিধে হবে। ভাবলাম একবার চেষ্টা করেই দেখি কি হয়। সত্যিই.....কাজ হয়েছে কিছুটা। এই করা রোদের দুপুরে মাথার ভেতর ভনভন করছে শব্দরা আর আমি এই শব্দ বাদে দুনিয়ার আর অন্য কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছি না।
বেলা দেড়টা গড়িয়ে যাচ্ছে। এইসময় কেউ নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে কফির মগ হাতে নিজের টেবিলে বসে ঝিমায় কিনা আমি জানি না। কিন্তু আমি এখন এটাই করছি। বন্ধুর বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে কিন্তু সাজাতে পারছি না। আজকে এলোমেলো করেই লিখবো। এত সাজিয়ে গুছিয়ে.....কি দরকার? আমার না প্রায়ই মনে হয় আমি খুব শান্তিতে আছি। শ্যামলা মেয়েরা শান্তিতেই থাকে অবশ্য! তাদের পিছনে কেউ ঘুরঘুর করবে না, তাদের সৌন্দর্য যাতে কমে না যায় সেটার জন্য সারাদিন এটা সেটা মাখা লাগবে না, মানুষের নজরে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই, ঘুরবে ফিরবে, খাবে দাবে, ওই মায়া ভরা চোখ দুটোয় কাজল দিয়ে আয়নায় বারবার নিজেকে নিজেই দেখবে, কোনো ঝামেলা নেই! শুধু শান্তি আর শান্তি......
আরও একটা কারণ আছে শান্তিতে থাকার। কারণ এরকম মানুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একা। তাই কে দিল কে নিলো এইসব ভেবে তারা মন খারাপ করে না। সবকিছুর উপরে গিয়ে তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ভালো থাকতে পারে। তাদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী কোনো শব্দ থাকে না। তারা মানুষকে আকড়ে ধরে বাঁচে না। তারা মানুষ ছাড়তে যাবে আর মুহূর্তকে জড়িয়ে ধরে খুব করে বাঁচতে জানে। আমি এইদিক থেকে ভাগ্যবান। বেচেঁ থাকার জন্য বেশি কিছু কি লাগে নাকি? আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমি কি চাই। আমি তো চোখ বন্ধ করে বলে দিবো যে আমি শান্তি চাই। হ্যাঁ,বাঁচতে হলে শুধু এই শান্তি লাগে, মানসিক শান্তি....আর কিছুই না। কারণ দুনিয়ার এতসব সম্পর্কের মারপ্যাচে এই শান্তি ব্যাপারটা উড়ে যায় কোথায় যেনো। সারাজীবন পাশে থেকে গেলো কিন্তু মানুষটা বুঝলোই না আপনাকে। সব ছেড়ে যখন ওপারে পারি জমালেন তখন দূর থেকে সবার মায়া কান্না চোখে পড়বে। শেষ দমটার পরে কি লাভ মায়া কান্নায় ভাসিয়ে? বেচেঁ থাকতে যদি এই কান্নাগুলো মানুষের হাসির কারণ হতো তাহলে আরো কয়টা দিন শান্তিতে বাঁচা যেত।
আচ্ছা, এইযে এতকিছু, এতসব ব্যাপার......একবার মনে হয় একা ভালো একবার মনে হয় কাউকে ছাড়া চলেই না....জীবনটাকে কেমন তুচ্ছ লাগে না হঠাৎ করেই? মাঝে মধ্যে প্রচন্ড হতাশ লাগে না? কিন্তু একটা কথা কি..... আমার যে জীবন টা এটা অনেকেরই খুব করে চাওয়া একটা জীবন। তার মানে কি? আমি বেশ ভালো আছি আমার দেখা হাজারটা অসুখী মানুষের চাইতে।
কখনো খুব জোরে হাসতে হাসতে কান্না করে দেয়ার অনুভূতি টা কেমন হয়? দারুন একটা অনুভুতি....ঐযে বললাম আমার মত মানুষেরা সবকিছুতেই শান্তি টা খোঁজে সবার আগে। হ্যাঁ,ওই হাসতে হাসতে কেঁদে দেয়ার মাঝেও একটা শান্তি আছে কারণ ঐরকম মানুষগুলো খুব সহজ সরল হয়। না,না,নিজের প্রশংসা করছি না....যা সত্যি , যা নিজের চোখে দেখা সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। এতদিন ভেবে একটা ব্যাপার যা বুঝলাম মেঘের ওপারে নেটওয়ার্ক নাই হয়তো। তাই মানুষের ভেতর চাপা আর্তনাদ আর কষ্টগুলো যে ওই মেঘের দেশে চলে যায়.....তার পাশে থাকা মানুষটা শুনতেই পায় না। আসলেই হয়তো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ঐখানে। আমার কাছে তো শান্তি ব্যাপারটা সবার আগে। এইজন্য যখনই সুযোগ পায় আশেপাশে থাকা মানুষগুলোকে শান্তি পাওয়ার, সুখী হওয়ার কিছু মন্ত্র বলে দেই যদি কখনো কাজে লেগে যায় সেই আশায়! সবার আগেই যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো কে খোঁজ নিলো, কে প্রশংসা করলো, কে কথার দাম দিলো এইসব ছোট্ট বিষয়গুলোর জন্য নিজের সারাদিনটা মাটি করা যাবে না। যদি নিজের একঘেয়ে রুটিনটা কোনোদিন বিরক্তিকর হয়ে ওঠে সেদিন ওই রুটিনের বাইরে গিয়ে একদম অপ্রত্যাশিত কিছু একটা করতে হবে। কারণ সুযোগ তো বারবার পাওয়া যায় না। অভিযোগ করা একদম ছেড়ে দিতে হবে। যা যেভাবে চলছে চলুক এইরকম মনোভাব নিয়ে নিজের জীবনটা উপভোগ করতে হবে। যেখানে পাওয়ার কোনো আশা নেই সেখানে বেহায়ার মত চাইতে থাকার ব্যাপারটা একদম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। বেশি চাওয়া পাওয়ার যে একটা প্রবণতা সেটা কমিয়ে দিতে হবে। হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে বাঁচার মধ্যে যে আনন্দ সেটা অনুভব করতে হবে। সুখী থাকা যায় এমন কোনো সুযোগ ছেড়ে দেয়া যাবে না....প্রাণ খুলে সবটা নিজের করে নিতে হবে। ব্যাস, কত সোজা সুখী থাকা!
আর আমরা মানুষরা, অন্যকে ভালোবেসে ক্লান্ত হই, চাইতে চাইতে মুখে ফেনা তুলি, সম্পর্কের বেড়ায় নিজেদের নিজেরাই শক্ত করে বেঁধে দেই তারপর অভিযোগের পসরা সাজিয়ে বসি যে আমি সুখী নই, আমি ভালো নেই, আমার মন খারাপ আরো কত কি......
সম্পর্ক কে খারাপ বলছি না। বলছি না যে একা থেকেই সুখী হওয়া যায়। কিন্তু.....আজকের দুনিয়ায় ছেড়ে যাওয়া টা কিন্তু খুব সহজ আর থেকে যাওয়াটা ঠিক ততটাই কঠিন। থেকে যেতে হলে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে, একবেলা না খেয়ে পরের বেলার জন্য ভাবতে হবে, মেজাজ খারাপ থাকলেও পাশে থাকা মানুষটার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে, তাকে বুঝতে হবে, সুখ দুখ কিভাবে ভাগ করতে হয় তা খুব ভালোভাবে জানতে হবে আপনাকে। ভাঙ্গা ঘরে শুয়ে প্রিয় মানুষটার হাত ধরে তার কষ্টগুলো মুছে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এইযে আমরা বড়ো মুখ করে বলি না যে "যে চলে যাওয়ার সে চলে যাবে, যে থাকার সে এমনিতেই থাকবে"। এটা কথাটা মানুষ নিজের গাঁ বাঁচতে বলে শুধু। একদম যুক্তি ছাড়া একটা কথা। দুনিয়াতে কোনো সম্পর্ক নিজে নিজে চলে? তার কি হাত পা আছে? চলে না, চালিয়ে নিতে হয় আমাদের। খুব করে যত্ন করতে হয়। যত্ন ছাড়া পাশের মানুষটাও ফিরে তাকাবে না আপনার দিকে, আপনি যত ভালই হন। টাকা দিয়ে যত্ন? না, সময়, ভালোবাসা, সান্তনা, মায়া এইসব মিলিয়ে যত্ন। টাকা দিয়ে তো দুনিয়াটা এনে দিতে পারবেন সবাই জানে.....কিন্তু ঐযে শান্তি, সুখ....আনা যাবে টাকা দিয়ে? সম্ভব না।
একা থাকা টা ভালো আবার পাশে কেউ থাকাটাও ভালো যদি আপনি রাখতে পারেন। আমরা মানুষরা তো ভাবি, পাশের মানুষটা তো আমারই আছে, খোঁজ নিলেও আমার থাকবে, খোঁজ না নিলেও আমারই থাকবে। কিন্তু বোকা আমরা ভুলেই যাই যে মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। এইযে আশেপাশে এত সুন্দর সুন্দর সম্পর্ক আমরা দেখি এইগুলো কি এমনিতেই এমন সুন্দর? সম্পর্কটা ঠিক খাচায় রাখা পাখির মতন। রোজ নিয়ম করে জল, খাবার দিতে হবে। নিয়ম ভাঙলেই মরে যাবে আর যদি খাঁচা খুলে দেন তাহলে উড়ে যাবে যেদিকে ইচ্ছা। তারপর আমরা দোষারোপ করি চলে যাওয়া মানুষটাকে যে যার থাকার সে এমনিতেই থাকে আর যার চলে যাওয়ার সে ত যাবেই। একটা পাখিও তো ভালোবাসা, যত্ন বোঝে আর আমরা তো মানুষই। দিনের পর দিন যত্ন, ভালোবাসার অভাবে কি পড়েই থাকবেন একজায়গায়? এটাও কি সম্ভব? তাই আমার কাছে মনে হয় আমি একাই ভালো, এতসব হিসেব করার ঝামেলা নেই। আরেকটা কথা মাথায় ঘুরছে খুব। যারা ব্যাথা গিলে খেতে জানে, নিজের মন খারাপ আর শোকের উদযাপন করতে পারে, যন্ত্রণা সহ্য করে নিতে পারে, অন্যের দুঃখগুলো নিজের করে নিতে পারে....ওই মানুষগুলোর ভেতরটা খুব পরিষ্কার, সুন্দর। তারা বোঝে এই ব্যাপারগুলো একদম ভেতর থেকে।
আচ্ছা, যারা খুব অপেক্ষা করেও ফিরে আসে তারা কেমন মানুষ? হয়তো তারা আর কোনোদিন কাউকে উপেক্ষা করে না, তারা সব ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যায় ঠিক কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলোর অপেক্ষা করার কষ্টটা ঠিক বোঝে। আর আমার মত যাদের কথা বলার কেউ থাকে না তারা? তাদের নিয়ে ভাবার কিছু নাই। নিজের কথা তারা নিজের সাথেই সেরে নিতে পারে তবে অন্যের কথা মন দিয়ে শোনার একটা বিরাট গুন তাদের মাঝে থাকে। এতকিছুর শেষে আমি বলবো যদি আপনার ভাঙ্গা মনের টুকরোগুলো কেউ খুব যত্ন করে কুড়িয়ে নিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিতে পারে, আপনার মুখের হাসিটা দেখার জন্য নিজের সবটা দিতে পারে, যে চরম খারাপ অবস্থায় হাসিমুখে আপনার পাশে থাকবে এমন কাউকে খুঁজে পেলে আর একা থাকার দরকার নেই। শুধু যে ওই মানুষটাকে এমন হতে হবে সেটা কিন্তু না, আপনাকেও তেমন মন মানসিকতার হতে হবে। আর যদি খুঁজে না পান আফসোসের কিচ্ছু নেই। একাই থাকুন। কারণ ভালোবাসা, মায়া এইসব সুন্দর হলেও বড়ো অদ্ভুত জিনিস। আপনি একবার আটকে গেলে ওই মুগ্ধতায় সারাজীবন কেটে যাবে, টেরও পাবেন না। কিন্তু মানুষটা মনমতো না হলে আপনি শান্তিটা পাবেন না। শুধু আটকে থাকবেন। এরচেয়ে একা থাকাটা মন্দ কিছু না।
আপনার রোজ মনে হবে এক আকাশ সমান অনিশ্চয়তা তাকে পাওয়ার কিন্তু ভেবেই যাবেন সে আপনার। এতে খুব কষ্ট হবে, দম বন্ধ হওয়ার মত কষ্ট। এর চেয়ে একা কোনো পার্কের বেঞ্চে বসে বাদাম খেতে খেতে মানুষের ভালোবাসা দেখাটা আমার কাছে বেশি ভাল মনে হয়। আবার আরেকটা ব্যাপার আছে, আপনি খুব কাছে কাউকে না রাখলেন, নিজের করে না রাখলেন তাতে অসুবিধে নেই। কিন্তু আপনার এমন একজন থাকাটা দরকার যার সাথে আপনি আপনার সময়গুলো কাটাতে পারেন, যে আপনাকে বুঝতে পারবে কিছুটা হলেও, আপনার জন্য ব্যাস্ততা রেখে সময় খুঁজবে। যার সাথে মাসে এক দুইবার কথা হবে কিন্তু সম্পর্কটা সুন্দর হবে। সে নিজের স্বার্থের জন্য বা নিজের মুডের উপর ডিপেন্ড করে আপনার সাথে কথা বলবে না বরং আপনি তার কাছে ভীষণ ইম্পর্টেন্ট কেউ দেখেই সে আপনাকে সময় দিবে। হ্যাঁ,আমরা সবাই জানি যে মানুষ মরে গেলে পচে যায়, তখন আর কোনো ঝামেলা থাকে না। কিন্তু বেচেঁ থাকলেই শুধু বদলাতে থাকে নিজের ইচ্ছেমত। কিন্তু এই বদলানোর মধ্যেই এমন একজনকে খুঁজে বের করা দরকার যে কিনা আপনার কাছে নিজের আসল রূপটা নিয়েই দাড়াবে, যার বদলে যাওয়াটা আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন।
অনেক বলেছি। আর কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না আর। আবার কোনো একদিন কফির মগ নিয়ে বসবো দুপুর বেলায়। আবারও কিছু এলোমেলো কথা লিখবো। চাওয়া ছাড়াই নিজের কিছু মন্ত্র শিখিয়ে দিব, আবারও একদিন কড়া রোদে আলাপন জুড়বো নিজের সাথে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে।