কোটা'র ইতিকথা

in BDCommunity6 months ago

কোটা প্রথা প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, স্বাধীনতার পরপর, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য।
কোটা'র একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কোনো চাকরিতে যদি কোটা'র অন্তর্ভুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সেই চাকরির ভ্যাকেন্সি খালি থেকে যাবে, কিন্তু অন্য কোনো প্রার্থী, যোগ্য হলেও সেই জায়গায় চাকরি পাবেনা।

এখন সেখানে ৩০% কোটা একটা বিরাট বড় শূন্যতা সৃষ্টি করছে, একটা দেশের যেখানে মূল সমস্যাগুলার একটা হচ্ছে প্রচন্ডরকম চাকরিশূন্যতা, প্রার্থীর তুলনায় চাকরির হাহাকার, সেখানে একটা বিশাল বড় অঙ্কের ভ্যাকেন্সি খালি থেকে যাবে, তবুও যোগ্য, মেধাবীরা চাকরি পাবেনা।

সর্বসাকুল্যে হিসাব করলে দেখা যায়, ৫৬% চাকরি বরাদ্ধ আছে সমগ্র জাতীয় প্রার্থীর ২.৬৩% মানুষের জন্য!
অর্থাৎ, এই আকালের যুগে, অর্ধ-শতকেরও বেশী চাকরি খালি থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ, যোগ্য প্রার্থীরা সেই চাকরি পাবেনা।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে ৩০% কোটা চালু ছিল বহু বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারে ধরে, তাঁদের ও তাঁদের সন্তানদের এই ৩০% কোটার সুবিধা দিয়ে হয়েছে এবং তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ বা অবরোধ ছিলোনা কারো।
যদিও এইটা
তারপর ২০১১ সালে এসে সেটার সংস্কার হয়ে হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও সে কোটার সুবিধা পেতে থাকবে।

প্রশ্নটা উঠেছে এখানেই।
কেন?
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
বলা বাহুল্য, যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কত জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সেটাও প্রশ্নের দাবী রাখি। এটা এমনকি কোনো আর গোপন খবর না যে, বর্তমান ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা

তারই জের ধরে, ২০১৮ সালে শুরু হয় প্রথম দফা কোটা-সংস্কার আন্দোলন। বলে রাখি, এখানে কিন্তু কোটা-বাতিলের কথা কেউ তোলেনি। কারণ, প্রতিবন্ধী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, এবং আরো যৌক্তিক কিছু ক্ষেত্রে কোটা থাকবে, যা নিয়ে কারো ওজর-আপত্তি ছিলোনা, নেই। সেই আন্দোলনে সরকার তার স্বাভাবিক একগুঁয়েমি প্রদর্শন স্বরূপ বলে দিলেন "কোটা নিয়ে যখন এতো সমস্যা, কোটাই বাতিল!"
তারপর আবারও "জনৈক মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরী সম্প্রদায়" উচ্চ-আদালতে আপিল করে কোটা পুনর্বহাল করতে চাইলে, সেই দাবী পাশ হয় ২০২৪ সালে এসে, যেটা আবার ছাত্র-সমাজের মাঝে তৈরী করে বৈরিতা।

২০১৮ সালে এবং এখন ২০২৪ সালে, দুটো আন্দোলনই কোটা-বাতিল নয়, বরং "কোটা সংস্কার" আন্দোলন।
অর্থাৎ কোটা'র সুবিধা নিয়ে, রাজনৈতিক অনৈতিকতাকে আইনানুগতভাবে ব্যবহার করে সুবিধা নিতে চাওয়ার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন।
একটা দেশের ২.৬৩% জনগোষ্ঠী ভোগ করেছে ৫৬% কোটা, আর বাকি ৪৪% চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা প্রায় ৯৮% জনতা।

স্বাভাবিকভাবেই, আমার মেধা আর যোগ্যতা থাকা সত্বেও যৌক্তিক কোটা- অধিকারী অংশের মাঝে না পড়েও কোটার মাধ্যমে কেউ সেটা এরকম প্রচেষ্টা ছাড়াই অর্জন করাটা কেউই মেনে নেবেনা।

1000025529.jpg
[Art by promil]

All the contents are mine, untill mentioned otherwise.