[image generated with midjourney❤️]
আকাশের রক্তবর্ণের চাঁদের দিকে তাকিয়েছিলাম । আর অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কত দ্রুত একটা জীবন বদলে যায় ! দু'দিন আগেও চাঁদটাকে দেখে মোহগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলাম । পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ । সেই চমৎকার আলো-আঁধারের মিশ্রন, রাত্রির অসম্ভব নিস্তব্ধতা, মাঝে মাঝে একটু হিমশীতল বাতাস যেন আমাকে দূর কোন এক রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছিল । সব মিলিয়ে মুহূর্তটি ভুলবার মত নয় ।
এই জায়গাটি তার খুব প্রিয় । কিন্তু জানি সে আজ আসবে না । দু'দিন আগের সেই মোহগ্রস্ত চাঁদটি আজ কেমন মলিন হয়ে গিয়েছে । প্রানহীন এই জড় বস্তুটাকে আজ ভয়ঙ্কর এক রাক্ষস মনে হচ্ছে । এখন সে তার সব সৌন্দর্য হারিয়ে কেমন এক হাস্যকর বস্তুতে পরিণত হয়েছে ঠিক যেন আমার মত !
৩৭ টি মেডেল পাওয়া, ১৯টি পুরস্কার ও অসংখ্য ক্রেস্ট পাওয়া ছেলেটিকে দেখে মনে হবে, জীবনে বেঁচে থাকার কোনো আশা, বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার ভেতর অবশিষ্ট নেই । সমস্ত শক্তি- সাহস, স্বপ্ন- ভালবাসা, সব হারিয়ে গেছে । কেনই বা এমন হবে না ? জীবনে অসংখ্য গল্প-কবিতায় এমন করুণ পরিণতি সে দেখেছে । কিন্তু কখনো অনুভব করতে পারে নি, ঠিক যেমনটি আমরা পারি না । গ্রেড আলফা থেকে জায়ন পর্যন্ত প্রতিটি সেক্টরে ফার্স্ট হয়েছে, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পর পর দু'বার ফেল করায় স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বহি- স্কার করা হয় । এখন সে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়, সময়ের সাথে ছেলেখেলা করে, আর নিজেকে দেখে হাসে । কি বিচিত্র মানুষের জীবন, তাই নয় কি !
বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল অনেক আগেই । এরপর হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মা আমার কাছ থেকে বিদায় নেন । আর আমি অতীতের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলি। আমার ব্রেন খুব খারাপভাবে জখম হয় । কিন্তু মোটামুটি তিনটি অস্ত্রোপচারের পর ১১ মাসের মাথায়, আমি স্বাভাবিক জীবন
ফিরে পাই । আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক অনাথ আশ্রমে সেখানেই দু'বছর ছিলাম । এরপর একদিন আমাকে জানানো হয় আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি, আমি যদি চাই তবে আবার পড়াশোনা করতে পারব । সম্পূর্ণ খরচ দিবে কিছু অভিজাত আন্তর্জাতিক মানব কল্যান সংস্থা। কিন্তু তার জন্য এখান থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের এক শহরে যেতে হবে । আমি রাজি হয়ে যাই । সেখানেই তার সাথে দেখা। তার সাথে কথা হয় । সেই নিষ্পাপ চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি আমি ভুলতে পারি না এখনো । ভেবেছিলাম তাকে আঁকড়ে ধরে সারাটা জীবন পার করে দিতে পারব। কিন্তু, সে কথা রাখেনি । আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না বলেও, চিরতরে হারিয়ে গেছে । সে মিথ্যাবাদী, প্রতারক পূর্ণিমার চাঁদ, অন্যটি ম্রিয়মান তারা । আমি জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট, বেদনা, না পাওয়াগুলোকে মনের গভীর অন্তরালে রেখে সেই পূর্ণিমার চাঁদের দিকে ছুটছি, এক নতুন আলোর সন্ধানে ।