রাত্রি ১২টা ৪৫ বাজিলো । জোছনার আলো দ্বারা মাটিতে উপবিষ্ট দুর্বা ঘাস সমূহ পরিষ্কার দৃশ্যমান রহিয়াছে, ইহা ভুল প্রমাণ করিবার জো টুকু অবশিষ্ট নাই।
প্রতিভাবান কবি অচিন্ত্য মহাশয় এতক্ষনে চুপ করিয়া তাহার বাড়ির সম্মুখে পুকুর ঘাটের পাশে আম গাছের তলে বসিয়া আনমনে কি যেন ভাবিতেছিল ।
প্রায় ঘন্টা কটিয়া গেল তবুও উঠিবার প্রয়োজন টুকুও বোধ করিলো না ।
রাত্রি নিঝুম, পূর্ণিমা পানে যেটুকু শব্দ অবশিষ্ট রহিয়াছে তাহার দায়ভার কেবলমাত্র ঝিঁঝিঁ পোকারই প্রাপ্য ইহা পরিষ্কার।
তীব্র রোদে ছাতার ছায়ার মতো একগুচ্ছ হতাশার ছাপ অচিন্ত্যের কপালে লেপিয়া উঠিয়াছে ।
কি যেন ভাবিতেছে? বোধহয় নিজেই হিসাব কষিয়াছে অথচ কি যে ভাবিতেছে তাহাই ভাবিতেছে?
এমন সময় হুবহু অচিন্ত্যের ন্যায় দেখিতে আরো একজন কবি মহাশয় তাহার সম্মুখ পানে উপস্থিত হইয়া আপন মনে আপন বানী শোনাইতে আরম্ভ করিল ।
তাহাকে কহিল....
শোনো হে অচিন্ত্য,
কি প্রকার চিন্তা করিতেছ তাহা আমার জানা রহিয়াছে ।
কি ভাবিয়াছো?
প্রতিভাকে জাগ্রত করিবে, কবিতা লিখিবে, রচনা করিবে প্রকৃত হইতে প্রাপ্ত হওয়া দৃষ্টান্তমূলক গল্প , আর পিছনের লোকে তোমারে কিছু কহিবে না? ইহা কেমন করিয়া হইবে?
শোনো হে তবে
অনেক কথাই কবে ..
কহিবে..
কহিবে ওমুকের ছেলে তমুক বড়- সর পন্ডিত হইয়া গিয়াছে , আবার কেহ ব্যঙ্গ করিয়া কহিবে তোরা ভাই জ্ঞানী গুণী মানুষ তোদের সহিত কথা কহিব এমন সাহস কি প্রকারে হইবে? আবার বলিবে ওমুক বড্ড পাকনা হইয়া গিয়াছে।
কেহ করিবে কানাকানি ,
কেহ করিবে ধূর ....
কেহ শুনিয়া হাসিয়া দিবে,
কেহ বাঁধিবে সুর ...
কেহ বলিবে এসব করিয়া কোন লাভ হইবে না ।
এই প্রকার আরো অনেক কিছু
গোচরে /আগচোরে, অপ্রত্যাশিত ভাবে শুনিতে হইবে !
"যা ভালো তাহা ভালো আর যাহ্ ভালো না তাহাও যে ভালো " নিজ বোধগম্য এমন করিয়া প্রস্তুত করিতে হইবে।
ভালো যে কহিবে না ইহাও কিন্তু একবারের জন্যও কহিলাম নাহ! আর ভালো কহিলেও ইহার মানে এই নহে যে তুমি অনেক বড় কিছু হইয়া পান্ডিত্যের মাত্রা অতিক্রম করিয়াছ ! তুমি যেমন রহিয়াছিলে তেমনি রহিবে ! শুধু মনের উদয় হওয়া কথা গুলো আপন করিয়া বলিবে !
সর্বদা মনে রাখিবে প্রসংসনীয় কিছু করিয়াছো ইহাই পরম আনন্দের । প্রকৃত অর্থে তার ফল ভোগ করিবার মধ্যে কিঞ্চিত পরিমানেও আনন্দ খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।
তবে সম্পূর্ণ ভাবে লোকের কথা কান দেওয়া উচিৎ কার্য নহে ইহাও কিন্তু সত্য নহে । নিজের যোগ্যতা মানদণ্ড অব্যশই বিচার করিবে। তবে যে মাপ কাঠি দ্বারা পরিমাপ করিবে তাহার নাম যেন অ-যুক্তিবাদী মূর্খ না হয়, সে দিকে অব্যশই খেয়াল রাখিতে হইবে ।
শোনো হে,
সত্য কথা যেভাবেই কহিবে না কেন তাহাই চির মহান হইবে ইহা সু নিশ্চিত হইয়া বসিয়া থাকো ।
অচিন্ত্য মোটেও চিন্তা করিবে না। কু মন্তব্য ও পিছুটান যে শুনিতেই পাইবে না, নিজের কর্ণকে এমন করিয়া প্রস্তুত করিতে হইবে !
প্রতিভা হইলো প্রকৃত অর্থে বৃক্ষের চারা গাছটি। ইহা যত যত্ন করিবে তত দৃঢ় ও বৃহৎ হইবে। তবে চারা অবস্থাতেই নির্ণয় করিতে হইবে ইহা কি মাকাল ফল নাকি শাল বৃক্ষ।
নিজের মধ্যস্থলে স্থিত হইয়া যাহ্ উদয়ন হইবে উহার যত্ন পরম আনন্দেই করিবে । কখনো বা ধরিবে কখনো বা ধরা দিবে নিজেই ।
কোন কিছু নিজের সম্পত্তি বা উহার সৃষ্টি তুমি করিয়াছ এরুপ আচরণ করিয়া কোন প্রকারেই আপন মনে মিছে অহংকারের সৃষ্টি করিবে না । কারণ সম্পদ বা সম্পত্তি ইহা তো দূরের কথা বেলা শেষে তুমি নিজেই কিন্তু তোমার নও একথা সর্বদা স্বরণে রাখিবে । সমস্ত কিছু প্রকৃত ইহার বাহিরে একবিন্দু ধুলিকণার ন্যায় কিঞ্চিত পরিমানেও কোন কিছু অবশিষ্ট নয় । কেবলমাত্র রুপের পরিবর্তন করিয়াছো বলিয়া তাহার সৃষ্টি তুমি করিয়াছ একথা কিন্তু সঠিক নহে ।
অচিন্ত্য মোটেও চিন্তা করিবে না ....
ভালো থাকিবে ..
আমি আবার আসিবো ..
অচিন্ত্য
যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি রহিবে বিশ্ব ধরনী ধরায় .
আমিও তোমায় সঙ্গ দিবো বাঁচায় কিম্বা মরায়..
অচিন্ত্য : সব কথা তো বুঝিলাম । আপনার কথা শুনিয়া পরানের তৃষ্ণা মিটায়া গেল । আপনি কে তাহার পরিচয় প্রত্যাশা করি মহাশয় !!
ওহে অচিন্ত্য, আমি আর কেহ না । আমি স্বয়ং তুমি । তোমার বিবেক প্রদত্ত চৈতন্য জ্ঞান ।
Thank you so much for your comment