অনুপের স্বদেশে ফেরা... {১ম পর্ব}

in BDCommunity3 years ago

আসসালামুআলাইকুম, বন্ধুগন। কেমন আছেন সবাই?
কিছুদিন হলো খুব মননশীল কিছু কবিতা লিখেছি, আমার কাব্য রচনার প্রতি ছোটবেলা থেকেই অনেক ঝোঁক কাজ করে।এ পর্যন্ত ৫টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছি বেশ কিছু সময় ধরে। আমার নিজের লেখা বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া কবিতার কিছু অংশ এই বাংলাদেশী সম্প্রদায়ে তুলে ধরেছি বিগত কয়েকদিন ধরে, আশা করি পদ্যগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
যা হোক অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম, হালের কিছু ঘটনা নিয়ে গদ্যভাবের কিছু ছোটগল্প লিখবো।
আমার লেখা এমনই একটি বিষয় নিয়ে চট করে একটি ছোটগল্পের ভাবনা মাথায় আসলো। আজ একটি ছোটগল্পের প্রথম পর্ব তুলে ধরলাম। গল্পটি পড়বেন আশা করি।

photo-1581592487771-132f53bd2b48.jpeg
Unsplash

★★★
একগাদা বইপুস্তকে ভরা একটি স্যুটকেস নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনুপ। কিছুদিন হলো তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। বিশাল জ্ঞানের বহর ওনার ঝুলিতে।অনেকদিন পর দেশে ফিরে তিনি চলেছেন ঢাকার একটি বাড়িতে, হাতে একটি ড্রাফটকার্ড, পরিচিত কোন এক বাড়িতে উঠবেন এই তার উদ্দেশ্য।

সন্ধ্যার সময় রূপোলি ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তিনি স্যুটকেস নিয়ে হাঁটছেন, এমন সময় এক পথচারীর সাথে দেখা।
পথচারী লোকটা টলতে টলতে সামনে এসে দাঁড়ালো, বললো, জনাব, আপনি বোধহয় একেবারেই নতুন এ এলাকায়?

-জ্বি, সেই ছোটবেলায় একবার এসেছি এ শহরে, তারপর প্রায় ২০ বছর পর আবার ফেরত এসেছি, মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে একটি নিমন্ত্রণে এ দিকে আসা।

-তা ভালো তো, আপনি কি পথ ভুলে গেছেন? বাড়ির ঠিকানা চিনতে পারছেন না?

-জ্বি, আমার হাতের ড্রাফট কার্ডের অ্যাড্রেসটিতে কোনো একটি বাড়ির ঠিকানা নির্দেশ করছে কিন্তু আমি ঐ রাস্তাটা চিনি না। এখন পথ হারিয়ে ফেলেছি, আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন?

  • আপনার কার্ডটিতে তো ১০ নং কদমতলীর রাস্তাটির পাশের দ্বিতীয় বাড়ির কথা বলা আছে। আরে! আমিও তো ঐ বাড়ির পাশেই থাকি। আপনি কাকে খুঁজছেন?

  • আমার মামাতো ভাইয়ের নাম রাশেদ। চেনেন তাকে?

  • জ্বি, সে তো আমার বন্ধু হয়। চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।

এরপর, তারা দুজন একটি ট্যাক্সিতে করে রওয়ানা হলেন কদমতলীতে যাবার জন্য।

অনুপ অষ্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে বেশ অবাক হয়েছেন দেশে ফিরে। অষ্ট্রেলিয়া আর এদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য আর মানুষের ব্যবহারেও বৈচিত্র্য আছে।
প্রায় ২০ বছর পর এদেশে এসে ঠিক করে উঠতে পারছেন না কিভাবে মানুষের সাথে মিশতে পারা যায়, আচার ব্যবহারেও অনেক পার্থক্য আর অমিল মানুষের মধ্যে।

বিমান থেকে নেমে এয়ারপোর্টে এসে কাস্টমস ইমিগ্রেশন পার হয়ে তার লাগেজ বক্স রেখে যখন একটি জিপ ডাকতে হাতখানেক দূরে গেলেন, কোথা থেকে ছোঁ মেরে এসে চিলের মতো লাগেজ চোরেরা তার দুটি বক্স সটকে ফেলেছে ইতোমধ্যে। জিপ নিয়ে এসে তিনি বুঝতে পারলেন৷
এদেশে যে চোরের খনি আছে, তিনি সেটা আগে থেকে জানতেন না। মনে করেছিলেন , সব ইমিগ্রেশনই হয়তো সিডনি,মেলবোর্ন, ক্যানবেরার মতো হয়তো।
আহা! চোরেরা স্যুটকেস সটকানোর পর বেচারার চেহারাটা গোবেচারার মতো হয়ে যায়।
ঐ দুই ব্যাগে করে অস্ট্রেলিয়া থেকে দামি দুইটো মোবাইল সেট, মামাতো ভাই, ভাইয়ের বউয়ের জন্য কেনা শাড়ি- পান্জাবি, বিখ্যাত প্যাকেটে মোড়ানো গোল্ড চকলেট আর উপহার সামগ্রী ছিল। দু দুটো ব্যাগই চোরের বাচ্চারা নিয়ে চম্পট দিল।

ভাগ্যিস হাতব্যাগ আর ট্রলিটা নিতে পারে নি, নইলে অাজ এয়ারপোর্টে ভিক্ষা করতে হতো অনুপ সাহেবকে।
যা হোক, চোরদের মনে মনে ধিক্কার দিয়ে জিপে উঠে ঢাকা থেকে সোজা কদমতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে নেমে হাঁটা ধরলেন, তখন রাত ১০ টা।
এসময় এই পথচারীর সাথে দেখা হয়ে ট্যাক্সি করে যাচ্ছেন।

মামাতো ভাইয়ের নিমন্ত্রণে সেই সুদূর তাসমানিয়া থেকে এদেশে আসা। অনুপ বেশ অনেক বছর এদেশে আসেনি, তাছাড়া মাতৃভূমির টানকে কি আর সহজে অবেহেলা করা যায়! অন্যান্য আত্নীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও তো অনেক বছর দেখা সাক্ষাৎ হয়না, তাই অনুপ মনে করেছিলেন একবার দেশে ফিরে গেলে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারা হয়ে যাবে হয়তো। মামাতো ভাইয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করাও গেল, হঠাৎ বন্ধুদের বাসায় গিয়ে তাদের চমকে দেওয়াও গেল, সাথে দেশটা ঘুরেফিরে বেড়িয়ে আত্নীয় স্বজনের মুখ দর্শন করাও গেল।
এতকিছু ভেবে এদেশে আসা অনুপের।

মিনিট তিরিশেকের মাথায় ১০ নং গলির চৌহদ্দির সামনে একটি দোতলা বাড়ির দৃশ্য নজরে এলো অনুপের।
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে পুরো বাড়িটা একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন তিনি।সুনসান নীরব, বাগানবিলাস ফুলে ছাদ থেকে ঝুলে থাকা ফুলগুলো বারান্দা পর্যন্ত এসে পড়েছে। দেখে মনে হলো, শহরের কোলাহল থেকে বেশ শান্তির নীড়ে তার মামার বাড়ি।
আগেই বলে রেখেছিল অনুপ, হঠাৎ করে এসে পড়বে তাদের বাড়ি যেকোন দিন। আজ, একেবারে এসেই পড়লে মামার বাড়ি। পথচারী যেহেতু রাশেদের পরিচিত তাই, অনুপ তাকে নিয়েই বাড়ির ভিতরে চলে গেল।

দরজায় টোকা মারতেই, বেরিয়ে এলো রাশেদ। এতোদিন পরে নিজের কাজিনকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারলো না সে। তারপর, ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে, এ হলো তার বহুদিন আগে শেষ দেখা প্রানের খালাত ভাই অনুপ, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
বিস্ময়ে অবাক হয়ে রইলো সে, তারপর কুশল বিনিময় করে ভেতরে নিয়ে আসলো, হাতমুখ ধুয়ে সোজা ড্রয়িং রূমে বসিয়ে আগে নাস্তার পর্ব শেষ করালো। ইতোমধ্যে ভাবী এসে পড়েছে, অনুপকে দেখে উল্লসিত বাড়ির সবাই।
ছোট দুই ছেলেমেয়ে নিপা আর রুপক ও খুশি হয়ে গেল নতুন অতিথি দেখে।

পথচারী যে লোকটির সাথে অনুপের দেখা হয়েছিল তাকে রাশেদ জিগ্যেস করে,
-কীরে মারুফ, ওকে কোথায় পেলি? অনুপের সাথে তোর দেখা হয়েছিল বুঝি? কীভাবে চিনলি?

-না তেমন কিছু না, আমি সুপারশপে কিছু খাবার দাবার কিনতে গেলাম, পথে ফেরার সময় ওনার সাথে দেখা হয়ে গেল। তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন আর তাই, কথা বলতে গিয়ে বললেন যে তোদের এখানে নাকি নিমন্ত্রণ, তারপর নিয়ে আসলাম এদিকে। হা হা....

  • ও আচ্ছা, বোস বোস। যা হোক ভালোই হলো, আজ একসাথে বসে গল্পগুজব আড্ডা দেওয়া যাবে। অনুপকে তো তুই চিনিস না! আমার খালাতো ভাই, অষ্ট্রেলিয়া থাকে, একটি স্টেট ইউনিভার্সিটির টপ লেভেল পিএইচডি হোল্ডার, সমাজতত্তের এসোসিয়েট প্রফেসর। অনেকদিন পর এদেশের নাম নিল!

  • না, প্রথম দেখেই বুঝে ফেলেছি ওনাকে, ভালো মানুষ একদম।

অনুপ সবার সাথে একসাথে চা নাস্তা সেরে তার এয়ারপোর্টের বৃত্তান্তের কথা বললো। সাথে চোরেদের কান্ডকারখানার কথাও।
তার অন্য যে ট্রলি ব্যাগে কিছু উপহার ছিল তাও তাদের দিল। ছোট বাচ্চাদের জন্য নিয়ে আসা অবশিষ্ট কিছু চকলেট আর খেলনা তাদের দিতেই তারা খুশি হয়ে গেল।
বাচ্চারা কিছু চকলেট আর আইসক্রিম পেলে
যতটুকু খুশি হয় অন্য কিছুতে এমনটা হয়না।
অল্পতেই তাদের মন ভরে যায়।

যা হোক, ঐ দিনের মতো পথচারী মারুফকে বিদায় দিয়ে রুপক নতুন অতিথির বিষয় আষয় সম্পর্কে জেনে নিল। তারপর রাতের খাবার একসাথে খেয়ে অনুপ ছাদের সাথে চিলেকোঠার রুমে ফ্যান চালিয়ে ঘুম দিল।অনেকদিন পর দেশে এসে শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলল সে।
আসলে অতীতের স্মৃতি সে যতো পুরনোই হোক না কেন, বহুদিন পরে হালকা ঝিলিক মেরে স্মৃতিগুলো পরে মনে পড়লে একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।মনে হয় কতদিনের চেনা এ দেশ আর তার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়।
অনুপ ২ মাসের ছুটি নিয়ে এসেছে এ দেশে। ইউনিভার্সিটিকে বলে কয়ে ছুটি বাগিয়ে নিতে পেরেছে সে অনেকদিন পরে।
তার এ দু মাসের ছুটিতে অনেক কিছু করার আছে, অনেক জায়গায় যাওয়ার আছে।এগুলো মনে করে তার ভালোলাগা কাজ করে।
বন্ধুদের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া, আত্নীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাত করা, গ্রামে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি কাজকর্ম এই ২ মাসে যমপেশ হবে।
এ দুদিন ভ্রমনের ধকলে অবশ্রান্ত সে।
লাইট নিভিয়ে শোয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল.......

{চলবে.... }