।। বৃদ্ধাশ্রম ।। (১ম পর্ব)

in BDCommunity5 years ago

রোজ সকালে এক হাতে গরম চায়ের পেয়ালা এবং অপর হাতে খবরের কাগজ উল্টানো এক প্রকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে রহিম সাহেবের ।। বেলকনির উত্তর পূবের পাশটাতে বেশ মিষ্টি রোদ পাওয়া যায় এই সময়টায়, তাই তিনি রোজ সকালে প্রাতঃভ্রমণ শেষে এখানে বিশ্রাম করেন এবং সারা দেশে কোথায় কি হচ্ছে খুটিয়ে দেখেন।

old-peoples-home-63617_1280.jpg
Source

বয়স কতো হবে.... এই ধরুন ৭০ এর কোঠায়। কিন্তু এই বয়সেও বলিষ্ঠ চেহারার অধিকারী তিনি। সারাজীবন সরকারি চাকরি করেছেন সেজন্যই হয়তো সময়-জ্ঞান বেশ টনটনে। অনিয়ম তিনি পছন্দ করেন না। এই বৃদ্ধাশ্রমের সবাই খুব সম্মান করেন তাকে। রহিম সাহেব বরাবরই মিশুক স্বভাবের আর সেজন্যই এখানে বন্ধুর অভাব নেই তার। সবার সাথে ভালই সময় কাটান।

আসসালামু আলাইকুম দাদাজান। একটু বসতে পারি এখানে?

আচমকা এমন কন্ঠ শুনে চমকে উঠলেন তিনি। খবরের কাগজ একপাশে রেখে বিচলিত হয়ে বললেন

কে আপনি? আমাকে দাদাজান বলছেন?

উত্তর শুনে জানা গেলো একটা সমাজ কল্যাণ সমিতি থেকে আজ সকালেই বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শনে এসেছে। ছেলেটি তাদের-ই একজন। নাম আনন্দ, বয়স ২২/২৩।

আপনি একদম আমার দাদার মতো দেখতে তাই দাদাজান বলে সম্বোধন করলাম। কিছু মনে করেননি তো?

রহিম সাহেব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন ছেলেটাকে। তার বারবার করে মনে পড়ছে চমচমের কথা। নিশ্চয়ই ভাবছেন চমচম আবার কে?... রহিম সাহেবের একমাত্র নাতি স্নিগ্ধ, ছোটবেলায় মিষ্টি খেতে ভালবাসতো বলে বাসার সবাই ওকে চমচম বলেই ডাকে। সেই কবে দেখা হয়েছিল ছেলেটার সাথে ঠিক করে মনেও পড়ে না। চমচম-ও নিশ্চয় এতো বড়-ই হয়েছে এখন। আচ্ছা, আমার দাদুভাই কি মিষ্টি খেতে এখনো ততোটাই পছন্দ করে? এসব মনে করে ডুকরে উঠলো তার মন।

কি হলো দাদাজান কিছু বলছেন না যে.....

তোমার মুখে দাদাজান শুনে আমার নাতিটার কথা মনে পড়ে গেলো। সে ও তোমার মতোই জোয়ান হয়েছে বোধহয়। কতোদিন দেখি না....

তাতে কী দাদাজান আমিও তো আপনার নাতি-র মতোই। আচ্ছা সকালে নাস্তা করেছেন?

না রে দাদাভাই । এইতো চা শেষ করলাম আর কাগজ পড়ছিলাম।

জানেন তো দাদাজান, আমি বাসা থেকে বের হলেই মা খাবার প্যাক করে দেন সাথে। কোথায় কি খাব... পাছে না খেয়ে থাকতে হয় এসব ভেবে রোজ টিফিন দিয়ে দেন। আমি আমার বক্স টা নিয়ে আসি। আজ একসাথে দাদু নাতি খাবো। কোন না শুনবো না কিন্তু। আমি এক্ষুনি আসছি।

বলতে বলতেই উঠে গেলো ছেলেটা। রহিম সাহেবের চোখ কেমন যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখ থেকে চশমাটা নামিয়ে পাঞ্জাবী র কোণা দিয়ে মুছে নিলেন তিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমে তিনি প্রায় ১৭ বছর ধরে আছেন। এই লম্বা সময়ে অনেক নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে তার। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও হয়েছে কিন্তু কোথায় যেনো নিজের মানুষের অভাববোধ রয়েই গেছে। সব কিছু আছে কিন্তু কিসের যেনো শূন্যতা।

রহিম সাহেবের স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় ২০ বছর। সংসারে ছিলেন তিনি, তার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সাগর। সাগর ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় ভালো ছিল বলে তার মা সবসময় চাইতো ছেলেকে বড় ডাক্তার বানাবেন। সাগরের-ও তাই ইচ্ছা ছিল। রহিম সাহেব সামান্য বেতনের একজন সরকারি কর্মচারী তাই আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল ছিলেন না তারা। দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা ছিল কিন্তু এর মধ্যেও কোনদিন তিনি অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের কথা ভাবেন নি। সারাজীবন সৎ থেকেছেন আর তাই বড়বাবুরা তার প্রোমোশনের পথ বারবার আটকে দিয়েছেন। ছেলেকে তিনি সবসময় বড় মাপের মানুষ তৈরী করতে চেয়েছেন কিন্তু সেই ছেলে আজ........

To be continued....

Sort:  

অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন। অনুভূতি গুলো অসাধারন ছিল । যা হৃদয়কে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে। ধন্যবাদ আপনাকে

আপনাকেও অংসখ্য ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য।।

Hi @asfekatisha, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON