খেলার মাঠ-স্কুল স্মৃতি

in BDCommunity3 years ago

IMG_20210806_101710222~2.jpg

ছোটবেলা থেকেই আমার খেলাধুলার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো। প্রতিদিন বাসা থেকে চুরি করে বের হতাম খেলার জন্য। এজন্য মার খেয়েছি প্রচুর। ছুটির দিনে দুপুরে সবাই যখন খাওয়াদাওয়া করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতো আর আমি আস্তে করে দরজা খুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যেতাম। স্কুল থেকে বাসায় এসে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়েই সাইকেল নিয়ে চলে যেতাম মাঠে। প্রায় দিনই বাসায় এসে আব্বার কাছে বকা খেতাম। কারন আব্বা বলেই দিছিলো তুমি দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকো না কেনো মাগরিবের আগে বাসায় ফিরতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ দিনই আমি মাগরিবের আগে বাসায় ফিরতে পারতাম না। খেলা শেষ করতাম মাগরিবের আজানের সময়। মাঠ থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যেতো।

IMG_20210806_101604297~2.jpg

ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন আমার প্রিয় খেলা ছিলো। ফুটবল খুব কম খেলতাম আমি। একদমই খেলতে পারতাম না। ছবিতে এটি আমাদের এলাকার খেলার মাঠ। এখানে স্কুল জীবনে প্রচুর ক্রিকেট খেলছি। স্কুল ফাকি দিয়েও অনেক খেলতে যেতাম আমরা। একবার বৃষ্টির মধ্যে আমরা মনে করছি ক্লাস হবে না সবাই সকালে প্রাইভেটে ঠিক করলাম কেউ আজ স্কুলে যাবো না। স্কুলের সিনিওরদের সাথে সেদিন খেলা নিছিলাম আমরা। আমাদের সাথে এক স্যারের ছেলেও পড়তো। সেও খেলতে চলে আসছিলো। এখন স্যার স্কুলে দেখে তার ছেলে ক্লাসে নাই। কিন্তু স্যার জানেন তার ছেলে স্কুলের উদ্দেশ্য বের হইছে সকালে। আর এদিকে ক্লাসে কয়েকজন ছাত্র ছিলো ওরা জানতো যে আমরা ক্রিকেট খেলতে গেছি। তখন ওরা স্যার কে বলে দেয় আমরা কেও স্কুলে না এসে সবাই মাঠে খেলতে গেছি। খেলা শেষ করে বাসায় আসতেই আব্বা আমাকে ধরলো তোর স্যার ফোন করছিলো তুই নাকি ক্লাস বাদ দিয়ে খেলতে গেছিস? আমি চুপ করে ছিলাম, আব্বা কিছু না বলে মেজ ভাই কে বললো দেখ কথা বল ওর সাথে। এটা বলে আব্বা চলে গেলো আর কিছু বললো না। ভাইয়া কে তখন ভয় পাওয়ার কিছু ছিলো না কারন আমি ওকে বলেই গেছিলাম যে আজকে আমরা বন্ধুরা সবাই খেলতে যাবো। এরপরে আরও মজার ঘটনা ঘটলো রাতের বেলা। আমি আব্বা আম্মার রুমে বসে পড়তাম। হটাৎ আব্বার নাম্বারে ফোন আসলো। আব্বাকে দেখলাম সে সুধু জ্বি স্যার বলে ফোনটা রেখে দিলো। বলে তোর স্যার ফোন করে সব বইখাতা ট্রাংকের ভিতরে রেখে দিতে বললো। আর পড়াশুনা করার দরকার নাই। এরপরে সে আর কিছু বলে নাই। আমিতো সারাদিন অনেক ভয়ে ছিলাম কখন আব্বার হাতে একটা খেয়ে যাই। কিন্তু খুব অবাক হলাম সেদিন আমাকে কিচ্ছু বলে নাই। এই বয়সে একদুই বার স্কুল ফাকিঁ দিবে স্বাভাবিক এইজন্য হয়তো কিছু বলে নাই। পরের দিন স্কুলে যেয়ে শুনি সবার বাসাতে স্যার ফোন করে একই কথা বলছে। এরপরে তো স্যারের ছেলের উপরে অনেক মেজাজ খারাপ আমাদের কারন ওকে আমরা খেলতে আসতে মানা করছিলাম কিন্তু ও আসছিলো।

IMG_20210803_074132356~2.jpg

ক্রিকেট খেলায় আমি সবসময় ওপেনিংয়ে নামতাম। ধুমধারাক্কা মেরে আউট হয়ে যেতাম আমি। প্রথম কয়েক ওভারের মধ্যে দলকে একটা মোটামুটি রান করে দিতাম। বোলিং স্পিন করতাম ভালোই কিন্তু ফিল্ডিং ছিলো খুবই বাজে। দৌড়াতে চাইতাম না। প্রায় সময়ই ফিল্ডিং মিস করতাম। এর জন্য কপালে গালিও জুটতো অনেক। আমি শুধু বলতাম যে ব্যাটিং এ পোষায় দিবো। আমি কখনই জোরে দৌড়াতে পারতাম না। স্কুল লাইফ পর্যন্ত অনেক খেলাধুলা করছি। কিন্তু স্কুল লাইফ শেষ করে আর খেলাধুলা করা হয়নি। কলেজে ভর্তির পরে শুধু ভলিবল খেলছিলাম কয়েকদিন। আর একবার শীতকালে সপ্তাহখানেক ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। খেলাধুলা বাদ দেয়ার পর থেকে মোটা হওয়া শুরু করছি। আগে একদম হেংলা পাতলা ছিলাম।

এখন এলাকায় আসলে মাঠ মোটামুটি খালি দেখি। আমাদের সময় মাঠ খালি পাওয়া যেতো না। অনেক আগে এসে মাঠ দখল দিয়ে রাখতে হতো। ছোট বেলার এই স্মৃতি গুলো অনেক মধুর ছিলো। এখন অনেক মিস করি।