রাফাতের আজ নতুন স্কুলে প্রথম ক্লাস। বাবার সাথে করে আগেরদিন সে স্কুলে ভর্তি হয়ে আসছে। বাবার ট্রান্সফারের কারনে নতুন স্কুল। স্কুলে যাবার ব্যাপারে রাফাতের আগে থেকে এ্যার্লাজি। ক্লাস করতে চাইতো না। আবার ক্লাস রুমে বসে থাকলেও জানালার ওপাশে মা বসে থাকতো। মাকে স্কুলে কখনও চোখের আড়াল হতে দিতো না। কিন্তু আজ নতুন স্কুলে যাবার সময় মা সাথে যাচ্ছে না বাবা রাফাতকে আর ওর বড় ভাইকে নিয়ে স্কুলে গেলো। রাফাতের ছোট বেলা থেকে কথা বলায় জড়তা ছিলো। কোন কথা বলতে গেলে আটকায় যেতো। আমরা যেটাকে তোতলানো বলে থাকি। সবার সাথে কথা বলতে ভয় পেতো। কারন স্কুলের মোটামুটি সবাই তাকে ভেঙ্গাতো। নতুন স্কুলে যেয়ে আবারও এই সমস্যায় তাকে পরতে হবে। এসব ভেবেই ওর আর স্কুলে যেতে ইচ্ছে করতো না। কিন্তু কিছুই করার নেই স্কুলে না গেলে একটা মাইরও মাটিতে পরবে না। বাধ্য হয়ে স্কুলে যেতে হলো। আগের স্কুলে যা হইছিলো নতুন স্কুলে এসে ব্যাতিক্রম কিছু হলো না। নতুন কেউ আসার পরে স্যার যখন নাম পরিচয় সবার সামনে জিজ্ঞাসা করলেন তখন রাফাত বলতে যেয়ে আটকে গেলো। ওর এরকম দেখে ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। রাফাত মাথা নিচু করে থাকলো। আর কোন কথা বলতে পারলো না। স্যার সবাইকে ধমক মেরে চুপ করে দিলেন। রাফাতের বাবার উপরে অনেক রাগ হতে লাগলো কেন তাকে এভাবে স্কুলে একা রেখে চলে গেলো। সে বুঝতে পারতেছে ক্লাস শেষ হলেই সবাই তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে। প্রথম পিরিয়ড শেষ হবার সাথে সাথে ক্লাসের কয়েকজন রাফাতকে গোল করে ঘিরে ধরলো। সবাই এসে বলতে থাকলো তোর নাম কি? কোথা থেকে আসছিস? কথা বলতে পারিস না নাকি? বলে সবাই তোতলামো করে ভেঙ্গাতে লাগলো। এরকম একটা করে ক্লাস শুরু হয় আর স্যার ম্যাম যখন রাফাতের পরিচয় জানতে চায় তখন ও মাথা নিচু করে কোন রকমে বলতে থাকে। স্যার ম্যামের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। প্রথম দিন স্কুল থেকে বাসায় এসে হাফ ছেড়ে বাচলো রাফাত। কিন্তু আগামিকাল আবার স্কুলে যেতে হবে ভেবেই ওর মন কেমন অস্থির লাগতে শুরু করলো। বাসাতে সে অনেকবার বলছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সবাই বলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু রাফাতের সাথে কেউ ভালো করে কথা বলে না সবাই শুধু মজা নিতে আসে। প্রতিদিন সকালে রাফাতের বাবা ওকে বাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসতো। ক্লাসে স্যার এসে যখন নাম ডাকতো তখনও ও অনেক আতংকে থাকতো। নাম ডাকার সময়ও ওর জড়তা কাজ করতো। এটা নিয়েও পিছে সবাই মুচকি হাসতো। কোন খেলাধুলায় তাকে কেউ নিতে চাইতো না। এতো কম বয়সে এরকম মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে বড় হতে হচ্ছে রাফাতকে। আসেপাশের সবার টিটকারির জন্য বাহিরের কারো সাথে কথা বলতেও ভয় কাজ করতো রাফাতের। আস্তে আস্তে রাফাতের একজন বন্ধু হলো। প্রতিদিন ওরা একসাথে বসতো। স্কুল ছুটি হলে একসাথে বাসায় ফিরতো। এভাবে প্রায় এক বছর কেটে যাওয়ার পরে মোটামুটি সবাই রাফাতের সাথে মিশতে শুরু করলো। কিন্তু কেউ কখনো ভেঙ্গানো বন্ধ করতো না। এটা কখনই রাফাত নিতে পারতো না। সবাই কত সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে কিন্তু ও বলতে গেলে ওর গলা দিয়ে কথা বের হয় না। দমটা আটকায় আশে মনে হয় যে কে যেনো গলার ভিতরে শক্ত করে ধরে আছে। দম ছেড়ে না দিলে মনে হয় বুকটা ফেটে মারা যাবে। অথচ এই সময়টা যদি আসেপাশের থেকে একটু সাপোর্ট পাওয়া যেতো এরকম হতেই পারে। রাফাততো আর এটা ইচ্ছা করে না। এই সমস্যা অনেকেরই আছে। তাহলে আর ও এতো হিনোমন্যতায় ভুগতো না।
রাফাত যখন ওর দাদার বাড়িতে বেড়াতে যেতো তখন ও ওর ভালো লাগতো না। ওখানে গেলে ওর অনেক খেলার সাথী ছিলো। কিন্তু আসেপাশের আত্মীয় স্বজনরা সবাই ওর সাথে এতো লাগতো এতো ভেঙ্গাতো যে ও আর এক মুহুর্তও দাদার বাড়িতে থাকতে চাইতো না। প্রতিটা মুহুর্তে সবাই ওকে ভেঙ্গাতে থাকতো। ও কোন কথাই বলতে চাইতো না কারো সাথে। আসলে কোন জায়গাতে থেকেই ও শান্তি পেতো না। শুধু মাত্র ফ্যামিলিতে সবাই একটু বুঝাতো এটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আশেপাশের মানুষ গুলোকে দেখলে ও আর কনফিডেন্স পাইতো না কথা বলার। সবাই কত কি বলে শালিকের মাংস খেলে নাকি ভালো হয়ে যায়। জ্বিহার নিচে মার্বেল কিংবা সিকি রাখলে নাকি ভালো হয়ে যায় কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হয় না।
Congratulations @amishahi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 80 posts.
Your next target is to reach 4000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!